এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়ার ক্ষারধর্মের পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যামোনিয়ার ক্ষারধর্মের পরিচয় দাও।
ক্ষারধর্মিতা বা অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া – অ্যামোনিয়া একটি মৃদু ক্ষার। এটি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম লবণ উৎপন্ন করে। গ্যাসীয় হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের সঙ্গে অ্যামোনিয়া গ্যাসের বিক্রিয়ায় কঠিন অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের সাদা ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।
NH₃ (গ্যাস) + HCl (গ্যাস) → NH₄Cl (কঠিন)
H₂SO₄ এবং HNO₃ -এর সঙ্গে অ্যামোনিয়া বিক্রিয়া করে যথাক্রমে অ্যামোনিয়াম সালফেট এবং অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট লবণ গঠন করে।
2NH₃ + H₂SO₄ → (NH₄)₂SO₄
NH₃ + HNO₃ → NH₄NO₃
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
অ্যামোনিয়াকে মৃদু ক্ষার বলতে কী বোঝায়?
অ্যামোনিয়াকে মৃদু ক্ষার বলা হয় কারণ এটি জলে দ্রবীভূত হয়ে সম্পূর্ণরূপে আয়নিত হয় না। এটি জলের অণুর (H₂O) থেকে একটি প্রোটন (H⁺) গ্রহণ করে অ্যামোনিয়াম আয়ন (NH₄⁺) এবং হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH⁻) তৈরি করে, যা দ্রবণকে ক্ষারকীয় করে তোলে। তবে এই বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী, তাই এটি শক্তিশালী ক্ষারের মতো সম্পূর্ণরূপে OH⁻ আয়ন সরবরাহ করতে পারে না।
NH₃ + H₂O ⇌ NH₄⁺ + OH⁻
অ্যামোনিয়া গ্যাস এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের বিক্রিয়ায় সাদা ধোঁয়া কী তৈরি হয়?
সাদা ধোঁয়াটি আসলে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (NH₄Cl) লবণের অতি সূক্ষ্ম কঠিন কণা। গ্যাসীয় অ্যামোনিয়া (NH₃) এবং গ্যাসীয় হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) বাতাসে মিলিত হলে তারা সরাসরি বিক্রিয়া করে এই কঠিন লবণ তৈরি করে, যা আমাদের কাছে সাদা ধোঁয়া বা ধূসর বাষ্পরূপে দেখা যায়।
NH₃(g) + HCl(g) → NH₄Cl(s)
অ্যামোনিয়া সালফিউরিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে কোন লবণ তৈরি করে এবং বিক্রিয়াটি কী?
অ্যামোনিয়া সালফিউরিক অ্যাসিডের (H₂SO₄) সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম সালফেট ((NH₄)₂SO₄) লবণ তৈরি করে। যেহেতু সালফিউরিক অ্যাসিড একটি ডাই-প্রোটিক অ্যাসিড, তাই এটি দুটি অ্যামোনিয়া অণুর সাথে বিক্রিয়া করে।
2NH₃ + H₂SO₄ → (NH₄)₂SO₄
অ্যামোনিয়া নাইট্রিক অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে কী তৈরি করে?
অ্যামোনিয়া নাইট্রিক অ্যাসিডের (HNO₃) সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH₄NO₃) লবণ তৈরি করে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক সার।
NH₃ + HNO₃ → NH₄NO₃
অ্যামোনিয়া জলে দ্রবণীয় কিনা এবং দ্রবণটির কী নাম?
হ্যাঁ, অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রবণীয়। অ্যামোনিয়া গ্যাস জলে দ্রবীভূত হলে যে দ্রবণটি পাওয়া যায় তাকে অ্যামোনিয়া জল বা অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইডের দ্রবণ বলা হয়। এই দ্রবণটিই ক্ষারকীয় ধর্ম প্রদর্শন করে।
লিটমাস পেপারের উপর অ্যামোনিয়ার কী প্রভাব রয়েছে?
অ্যামোনিয়া গ্যাস বা অ্যামোনিয়া জল (NH₄OH) ক্ষারকীয় হওয়ায় এটি লাল লিটমাস পেপারকে নীল করে। এটি একটি সাধারণ পরীক্ষা দ্বারা অ্যামোনিয়া গ্যাস শনাক্তকরণে ব্যবহার করা যায়।
অ্যামোনিয়া একটি ক্ষার হওয়া সত্ত্বেও, এর দ্রবণে OH⁻ আয়ন থাকে না, এটি কীভাবে ক্ষারকীয় ধর্ম দেখায়?
শুষ্ক অ্যামোনিয়া গ্যাসে আসলে কোনো OH⁻ আয়ন থাকে না। কিন্তু যখন এটি জলের সংস্পর্শে আসে, তখন এটি জলের অণুর থেকে একটি প্রোটন (H⁺) গ্রহণ করে — ব্রনস্টেড-লাউরি তত্ত্ব অনুসারে — এবং এর ফলে OH⁻ আয়ন সৃষ্টি হয়।
এই OH⁻ আয়নের উপস্থিতির কারণেই অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারকীয় ধর্ম প্রদর্শন করে। যেমন — এটি লাল লিটমাস কাগজকে নীল করে এবং অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে লবণ ও জল উৎপন্ন করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যামোনিয়ার ক্ষারধর্মের পরিচয় দাও।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন