এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বামপন্থা বলতে কী বোঝো? বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বামপন্থা বলতে কী বোঝো? বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বামপন্থা বলতে কী বোঝো?
বামপন্থা বলতে বোঝায় গরিব ও শোষিত মানুষদের পক্ষ নিয়ে, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরোধীতা করে ধনী ও শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম পরিচালনা করা। বামপন্থীরা শোষিত শ্রেণির অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেন।
বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।
বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা –
বাঙালি বিপ্লবী ও রাজনৈতিক নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরেই রাশিয়ার তাসখন্দে 1920 খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলন এক অন্য রূপ ধারণ করে। 1925 খ্রিস্টাব্দে কানপুরে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলন হয় এবং এখানেই সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা –
বাংলায় মুজফ্ফর আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ কমিউনিস্টরা শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করে ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গঠন করেন (1925 খ্রিস্টাব্দ)। এই পার্টির অনুকরণে বোম্বাই, পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশে অনুরূপ পার্টি গড়ে ওঠে। 1928 খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা –
ঔপনিবেশিক সরকার কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য 1929 খ্রিস্টাব্দে 32 জন কমিউনিস্ট নেতা বা শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে এক মামলা শুরু করেন, যা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলায় মুজফ্ফর আহমেদ, কিশোরীলাল ঘোষ, ধরণী গোস্বামী, গোপেন চক্রবর্তী, রাধারমণ মিত্র, গোপাল বসাক এবং শিবনাথ মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত হন।
হালিমের কলকাতা কমিটি –
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পরবর্তীকালে আবদুল হালিম প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতা বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন বজায় রাখেন। হালিমের নেতৃত্বে 1931 খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা কমিটি।
ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের উদ্যোগ –
1931 খ্রিস্টাব্দে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গঠিত হয় ‘ইন্ডিয়ান প্রলেতারিয়ান রেভলিউশনারি পার্টি’। পরবর্তীকালে এই পার্টি কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগদান করে।
বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের উপসংহার –
বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভিত্তির রূপকার। বামপন্থী বা কমিউনিস্টরা উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের সূচনা কখন হয়?
1920 সালে রাশিয়ার তাসখন্দে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের সূচনা হয়।
ভারতে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?
1925 সালে কানপুরে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয়।
বাংলায় কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা কী ছিল?
মুজফ্ফর আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ নেতারা 1925 সালে ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গঠন করে কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করেন।
মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?
1929 সালে ব্রিটিশ সরকার 32 জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে একটি মামলা দায়ের করে, যা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এতে মুজফ্ফর আহমেদ, ধরণী গোস্বামী প্রমুখ অভিযুক্ত হন।
হালিমের কলকাতা কমিটি কী?
1931 সালে আবদুল হালিমের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা কমিটি গঠিত হয়, যা বাংলায় বামপন্থী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের ভূমিকা কী ছিল?
1931 সালে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও বঙ্কিম মুখোপাধ্যায় ‘ইন্ডিয়ান প্রলেতারিয়ান রেভলিউশনারি পার্টি’ গঠন করেন, যা পরবর্তীতে কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হয়।
ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের প্রধান অবদান কী ছিল?
বামপন্থীরা শ্রমিক-কৃষকদের সংগঠিত করে, ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামকে গণআন্দোলনে রূপ দিয়েছিল এবং সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করেছিল।
বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলা ছিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র, যেখানে মুজফ্ফর আহমেদ, আবদুল হালিম প্রমুখ নেতারা শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করে ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামকে তীব্রতর করেছিলেন।
বামপন্থী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল?
বামপন্থী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল শ্রেণিহীন সমাজ গঠন, শোষণের অবসান এবং সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বামপন্থা বলতে কী বোঝো? বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বামপন্থা বলতে কী বোঝো? বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন