আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব
ভূমিকা – প্রবহমান সময়ের স্রোতে স্বর্ণময়ী ভারতাত্মার বুকে জন্ম নিয়েছেন বহু মনীষী।
“না জানি কীসের তরে যে যাহার কাজ করে
সংসারে আসিয়া,
ভালোমন্দ শেষ করি যায় জীর্ণ জন্মতরী
কোথায় ভাসিয়া।”
মনীষীকুলের অন্যতম মহামানব হলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্দশতম সন্তান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ আর আপামর বাঙালিকে দিয়ে গেলেন সঞ্জীবনী সুধা, যা আমাদের চলার পথের পাথেয়। অপরিমেয় অধ্যবসায়, মানবিকতা, মহানুভবতা, তিতিক্ষা ও পরোপকারের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে তিনি বাঙালির স্মরণে-মননে-চিন্তনে-স্বপ্নে-জাগরণে চিরভাস্বর হয়ে আছেন।
আবির্ভাব ও শিক্ষাজীবন – 1268 বঙ্গাব্দের 25 বৈশাখ জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত বনেদি ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতি তথা জাতীয় জাগৃতির পীঠস্থান ছিল ঠাকুর পরিবার। সেই সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে কবি শৈশব থেকেই লালিত হয়েছিলেন। প্রথাগত শিক্ষায় কবি বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি। প্রথমে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও পরে ন্যাল স্কুলে কিছুকাল পাঠগ্রহণ করে কবির প্রথাগত শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু গৃহপরিবেশে সংস্কৃতির সুরম্য বাতাবরণ থাকার ফলে কবি ভারতীয় সাহিত্য-দর্শন-পুরাণের কাহিনি শৈশবেই আয়ত্ত করেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যসাধনা – মাত্র বারো বছর বয়স থেকে আমৃত্যু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যসাধনা করেছিলেন। ‘সন্ধ্যাসংগীত’, ‘প্রভাতসংগীত’, ‘চিত্রা’, ‘চৈতালি’, ‘সোনার তরী’, ‘বলাকা’, ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’, ‘গীতালি’র মতো কাব্যের স্রষ্টা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 1913 খ্রিস্টাব্দে তিনিই প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। কাব্যসাহিত্যের পাশাপাশি উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, ছোটোগল্প, চিঠিপত্র, ডায়ারি – সাহিত্যে এমন কোনো দিক নেই যাতে তিনি কলম ধরেননি। ‘চোখের বালি’, ‘গোরা’, ‘শেষের কবিতা’র মতো বিখ্যাত উপন্যাসের স্রষ্টা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ‘রক্তকরবী’, ‘অচলায়তন’, ‘অরূপরতন’, ‘বিসর্জন’ ইত্যাদি বিখ্যাত নাটক তাঁরই সৃষ্টি। ‘ছুটি’, ‘মেঘ ও রৌদ্র’, ‘নিশীথে’, ‘রবিবার’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘ল্যাবরেটরি’র মতো বিশ্ববিখ্যাত গল্প তিনিই রচনা করেছিলেন। তাঁর সৃষ্ট সংগীতের সমধুর ধারায় আজও আপামর বাঙালি অবগাহন করে।
বাঙালি ও রবীন্দ্রনাথ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চিন্তাচেতনা ও সত্ত্বার সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। সুখে-দুঃখে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সংগীতের মাধুর্যে আমাদের আপ্লুত করে রাখেন। কর্মবিমুখ বাঙালির আলস্য দূরীকরণে সচেষ্ট হয়ে কবি ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বলেছেন – “তৈল ঢালা স্নিগ্ধ তনু/নিদ্রারসে ভরা,/মাথায় ছোটো বহরে বড়ো/বাঙালি সন্তান।” বাঙালির সাহিত্য-সাধনা, বিজ্ঞানসাধনা, সংস্কৃতিসাধনার পথিকৃৎ হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির অন্ধ কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিনি বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস বা নাটকে আলোকপাত করে বাঙালিকে দিশা প্রদর্শন করেছেন। বাঙালির জীবনদেবতা, কান্ডারি তিনি। তিনি প্রেমিক, তিনি জাতীয়তাবাদী, তিনি নির্ভীক। তাঁর কাছ থেকে বাঙালি শিখেছে প্রতিবাদের ভাষা; তিনি বাঙালিকে শিখিয়েছেন দেশাত্মবোধের ভাষা। মাতৃভূমি যে পুণ্যভূমি তাও শিখিয়েছেন তিনি বাঙালিকে। বলেছেন “হে মোর চিত্ত পুণ্য তীর্থে জাগো রে ধীরে,/এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।” কবি সুকান্তও আমৃত্যু তাঁকে স্মরণে রেখেছিলেন; বলেছিলেন “এখনো আমার মনে তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি।”
উপসংহার – 1348 বঙ্গাব্দের 22 শ্রাবণ পুণ্যাত্মা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইহলোকের মায়া কাটিয়ে পরলোকের পবিত্র ধামে প্রস্থান করেছেন। কিন্তু বাঙালি চিত্তে তিনি চিরজাগরুক হয়ে থাকবেন। বাঙালি তাঁকে চিরকাল হৃদমাঝারে রাখবে, ছেড়ে দেবে না; বাঙালির চোখের মণি তিনি। তাই আপামর বাঙালি বলে “খেলা মাঝে শুনিতে পেয়েছি থেকে থেকে/যে চরণধ্বনি, আজ শুনি তাই বাজে/জগৎসংগীত সাথে চন্দ্রসূর্য মাঝে।”
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাঙালি জীবনে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন