আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাঙালির প্রিয় খেলা ফুটবল‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাঙালির প্রিয় খেলা ফুটবল
“সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।”
ভূমিকা – বাঙালি আবেগপ্রবণ ও ক্রীড়াপ্রেমী জাতি হিসেবে পরিচিত। ক্রীড়ার সঙ্গে আবেগের মেলবন্ধনের ফলেই বাঙালির ক্রীড়াপ্রেম এত প্রবল। তবে সব খেলার প্রতিই যে বাঙালির সমান আকর্ষণ আছে এমনটিও সত্য নয়। কুস্তি, সাঁতার, হকি, ক্রিকেটের প্রতি আসক্ত হলেও ফুটবলের প্রতি বিশেষ ভালোবাসা বাঙালি জাতিকে সারা দেশের মধ্যে অনন্য করে তুলেছে। বাঙালির ফুটবল প্রীতির কথা আজ সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমী মানুষেরই অবগত।
বাঙালির ফুটবল ঐতিহ্য – পরাধীন ভারতে এই খেলা এদেশে প্রবেশ করে শাসক ইংরেজদের হাত ধরেই। বাঙালির ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা দুয়েরই ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছরের। ফুটবল খেলার উন্মাদনার প্রথম সার্বিক প্রকাশ ঘটে 1911 খ্রিস্টাব্দে। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় গোরাবাহিনীকে মোহনবাগান দল খালি পায়ে খেলেই পরাজিত করে। এ ছিল যেন স্বাধীনতার লড়াই। আর ফিরে তাকাতে হয়নি ফুটবলকে। দশকের পর দশক বাঙালি ফুটবলাররা ভারত কেন বিশ্বের মঞ্চেও দাপট দেখিয়েছে। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ থেকে সত্তরের দশকে শৈলেন মান্না, চুনী গোস্বামী, পি. কে. ব্যানার্জিরা এশিয়াড অলিম্পিকে পর্যন্ত পদক জয় করেছেন। পরবর্তীকালে গৌতম সরকার, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ভাস্কর ব্যানার্জি, কৃশানু-বিকাশ-সুদীপ, সুব্রত ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতন বহু ফুটবলার বাঙালির ফুটবলের ঐতিহ্যকে বহন করেছেন।
বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে ফুটবল – বাঙালির জীবনের সঙ্গে মিশে গেছে ফুটবল। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল – এই এক আবেগের ডাকেই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন এক লক্ষ দর্শকে ভরে যায়। ঘটি-বাঙালের, চিংড়ি-ইলিশের, অহিনকুল যুদ্ধ বাঙালির ফুটবলের এক অন্যতম উন্মাদনা, মুখ্য আলোচনার বস্তু। ঘরে ঘরে খেলার স্ট্র্যাটেজি, স্কিল নিয়ে আলোচনা। বাঙালি একটু অবসরেই মাঠে নেমে পড়ে। উৎসবপ্রিয় বাঙালির এও এক নিত্য আনন্দ-উৎসব।
বর্তমান ফুটবলের হালহকিকত – একবিংশ শতাব্দীর বাঙালি ফুটবলে কিছুটা হলেও যেন ভাটা পড়েছে। তার কয়েকটি কারণ আছে। বাঙালি এখন ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকেছে। বাংলার বিভিন্ন জায়গায় ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটের একাডেমি বেশি তৈরি হয়েছে। ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলির জনপ্রিয়তাই এর বড়ো কারণ। কলকাতার প্রধান দলগুলিতে ভিনদেশি বা ভিনরাজ্যের ফুটবলারের ছড়াছড়ি, বাঙালি ফুটবলার হাতেগোনা। ফলে জাত্যাভিমানেরও ঘাটতি আছে কোথাও। ঘটি-বাঙালের আবেগও তাদের কম। বাঙালি ফুটবলে আইকন বর্তমানে বিরলপ্রায়। তবু সুব্রত পাল, রহিম নবি, মেহতাব হুসেন, অর্ণব মণ্ডল যথাসাধ্য স্বাক্ষর রেখেছেন। বিশ্ব ফুটবল র্যাংকিং-এ (158) ক্রমাগত পিছোতে থাকা ভারতীয় ফুটবলে একটু আশার আলো দেখিয়েছে আই এস এল – বিশ্বের তাবড় তাবড় ফুটবলাররা তাতে অংশগ্রহণ করছেন। ভারতীয় তথা বাঙালি ফুটবলাররা তাঁদের সঙ্গে খেলতে খেলতে আরও উন্নত হবেন। উন্নতমানের ফুটবলার উঠে আসবে।
উপসংহার – বাঙালির মর্মে-মর্মে ফুটবল, যে খেলার জন্য আপামর বাঙালি পাগল। যার ইতিহাস এত উজ্জ্বল সে খেলা থেকে বাঙালি মুখ ঘুরিয়ে থাকবে তা ভাবা ভুল। কালের গতিতে কখনো-কখনো মন্দীভূত হতে পারে কিন্তু আবার মাঠে-প্রান্তরে ফুটবল জেগে উঠবেই তার স্বমহিমায়, বাঙালির পায়ে-পায়ে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাঙালির প্রিয় খেলা ফুটবল‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন