আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলাদেশের প্রকৃতি‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলাদেশের প্রকৃতি
“আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ খেত ভালোবেসে
-‘রূপসী বাংলা’/জীবনানন্দ দাশ
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এ সবুজ করুণ ডাঙায়।”
ভূমিকা – বাংলাদেশের প্রকৃতি কেবলমাত্র নদী, মাঠ, খেত, বৃক্ষলতা, পাখির কূজনে সমৃদ্ধ নয়, কবি জীবনানন্দের ভাষা ধার করে বলতে হয় আরও এক অন্য অনুভূতি তথা এক গভীর স্নেহের কোমল স্পর্শও বোধহয় রয়েছে বাংলার এই প্রকৃতিতে। বাংলাদেশের প্রকৃতি যেন এক সজীব মানবসত্তা নিয়ে যুগ যুগ ধরে আপনজনের মতো বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সমব্যথী হয়ে। মনোরম এই প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ কোনোদিন ফুরোবার নয়। বাংলার পল্লীকবি জসীমউদ্দীন তাই বন্ধুকে আরও একদিন আসার কথা বলেছেন –
“আসিও সজনী, এই বালুচরে, আঁকাবাঁকা পথখানি,
এধারে ওধারে ধানখেত তারে লয়ে করে টানাটানি।”
বাংলার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য – বাংলার প্রকৃতির আরও এক প্রবল আকর্ষণ, ভালোলাগা লুকিয়ে রয়েছে এর বৈচিত্র্যের মধ্যে। উত্তরে হিমালয়ের পদ ছুঁয়ে থাকা পাহাড়, সবুজ বাগান, ঝরনা, কুয়াশা এই প্রকৃতিকে অনন্যতা দান করেছে। দক্ষিণের সমুদ্রের নোনা বাতাস, জলতরঙ্গ একে দিয়েছে অসীমের অনুভূতি। দক্ষিণ-পূর্বের মাইলের পর মাইল বিস্তৃত ধানখেত, নদীর চরা, আম-কাঁঠালের ছায়া, পাখির কলতানের মধ্যে যেমন ডুবে আছে এক স্নেহকোমল স্পর্শ; তেমনি পশ্চিমের ছোটো ছোটো পাহাড়, শাল, পলাশ, মহুয়ার জঙ্গল, নদীর কলকল্লোলে লুক্কায়িত রহস্য, সজীবতা, বেঁচে থাকার অজস্র রসদ। বাংলা-প্রকৃতির একটা বড়ো অংশ হল বাংলার পল্লিসৌন্দর্য। রবি ঠাকুরও একসময় পদ্মার ঘাটে ঘাটে ঘুরে বেড়িয়েছেন এই বাংলা-প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার জন্য –
“ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলি।
-‘দুই বিঘা জমি’/রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
পল্লবঘন আম্রকানন, রাখালের খেলা গেহ;
স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল, নিশীথ শীতল স্নেহ।”
বাংলার ঋতুপরিবর্তন – বাংলার প্রকৃতির এই বৈচিত্র্য আরও প্রাণময় হয়ে ওঠে ঋতুপরিবর্তনের ধারায়। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত-শীত ও বসন্তের পটপরিবর্তনে প্রকৃতি জেগে ওঠে নিজস্ব ভঙ্গিমায়। গ্রীষ্মের দাবদাহে যখন প্রকৃতি ও মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তখনই বর্ষার অবিরল বারিধারা নেমে এসে জীবনকে করে তোলে সিক্ত, সজীব ও প্রাণবন্ত। নদীনালা, খালবিল জলে টইটম্বুর হয়ে ওঠে মেঘের ঘনঘটায় ক্রমশ বর্ষা তার প্রবল, চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। শরতের কাশফুল শিউলি সুবাস, হেমন্তের ধানকাটা মাঠে ভোরের শিশির পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় শীতের সকালের দিকে। কুয়াশা জড়ানো সকালে খেজুররস-বিক্রেতার ডাক এখন আর শোনা না গেলেও শীতের সকাল মিঠে রোদে বাংলা-প্রকৃতিকে সাজাতে ভোলে না। ফুলের বাহার আর পাখির কলতান আরও বেড়ে যায় ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে।
উপসংহার – সভ্যতার অগ্রগতি, নির্বিচারে প্রকৃতি ধ্বংস, প্রবল নগরায়ণের চাপে আজকের ব্যস্ত জীবনেও মানুষ বারবার প্রকৃতির কাছে আশ্রয় খুঁজে চলেছে। বাংলার প্রকৃতি তার সমস্ত রূপময়তার ডালি সাজিয়ে সজীবতা, স্নেহকোমলতা নিয়ে বাংলার মানুষের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে রয়েছে – একাত্ম হয়ে। কবি তাই বলেছেন –
“প্রকৃতির সহিত আমাদের যেন ভাই বোনের সম্পর্ক।
-‘ছিন্নপত্রাবলী’-227 নং পত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
আমরা জন্মাবধিই আত্মীয় আমরা স্বভাবতই এক।”
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলাদেশের প্রকৃতি‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন