আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার লৌকিক সাহিত্য‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলার লৌকিক সাহিত্য
“বস্তুত বহিঃপ্রকৃতি এবং মানবচরিত্র মানুষের হৃদয়ের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে সংগীত ধ্বনিত করিয়া তুলিতেছে, ভাষারচিত সেই চিত্র এবং গানই সাহিত্য”
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা – ‘লোক’ শব্দ থেকে ‘লৌকিক’ শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ‘লোকপ্রচলিত’ বা লোকসমাজ সম্পর্কিত। ‘লোক’ শব্দের বিশেষণাত্মকরূপই হল লৌকিক। লোকপ্রচলিত বা লোকসমাজ সম্পর্কিত এমন সাহিত্য লোকসাহিত্য বা লৌকিক সাহিত্য। লৌকিক সাহিত্যের শিকড় লোকসমাজের গভীরে নিহিত। তার পুষ্টি, বৃদ্ধি পরিপূর্ণতালাভ সবই লোকসমাজকে আশ্রয় করে। তার ব্যাবহারিক রূপই হোক আর নান্দনিক অনুভূতিই হোক উভয়ই লোকসমাজকেন্দ্রিক। এ লোকসমাজ হল বাংলার গ্রামীণ লোকসমাজ। এদের নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে বাংলার লৌকিক সাহিত্য।
লৌকিক সাহিত্যের উপবর্গ – বাংলার লৌকিক সাহিত্য কতকগুলি উপবর্গে বিভক্ত। সেগুলি হল ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, কথা বা লোককথা ইত্যাদি। বাংলার লোকসংস্কৃতির মূল উপাদান লৌকিক সাহিত্যের মধ্যে মৌখিক পরম্পরায় বাহিত হয়।
লৌকিক সাহিত্যের প্রকৃতি, রূপ ও ধারা – লৌকিক সাহিত্য হল গ্রামবাংলার সাধারণ জনজীবন থেকে উঠে আসা সাহিত্য। এর ইংরেজি নাম ‘Folk Literature’। একক কোনো স্রষ্টার সৃষ্টি নয়, এটি বহুজনের মিলিত সৃষ্টি। পুরাতন ঐতিহ্য অনুসরণ করে এই সাহিত্যের পথ চলা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুখে মুখে বাহিত হয়ে এসেছে সুদূর অতীত থেকে বর্তমান কাল অবধি। লৌকিক সাহিত্যের প্রকাশে আছে সরলতা, সহজবোধ্যতা, হৃদয় উজাড় করা আবেগ ও আকুতি, আশা-নিরাশা, প্রেম-বিরহ প্রকাশের স্বতঃস্ফূর্ততা। এই লৌকিক সাহিত্যের রূপ ও ধারাও বহুবিধ। যেমন – ময়নামতীর গান, প্রবাদ, ঝুমুর, টুসু ভাদুর গান, সত্যপিরের পাঁচালি, মেয়েদের ব্রতকথা, রূপকথা ইত্যাদি।
লৌকিক সাহিত্যের বৈচিত্র্য – বাংলার লৌকিক সাহিত্য আমাদের কাছে বাঙালির অতীত জীবনধারার উৎসসন্ধানের জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামীণ জীবনে লোকসাহিত্যের বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলার গ্রামীণ লোকনাট্যে পাওয়া যায় সমাজসূত্র।
লৌকিক সাহিত্যে ইতিহাসের উপাদান – লৌকিক সাহিত্য প্রাচীন ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান। এর মধ্যে সমাজজীবনের খণ্ড খণ্ড রূপের সন্ধান পাওয়া যায়। বাংলা প্রবাদ বাঙালির বাস্তব অভিজ্ঞানের সোনার খনি। বাংলা প্রবাদ সন্ধান করলে এদেশের ইতিহাস ও মানবিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। লোকসাহিত্যের প্রধান অঙ্গ ছড়া। ছেলেভুলানো অসংখ্য ছড়ার আকারে বাঙালির অতীত ইতিহাসের বিচিত্র উপাদানগুলি খনির গহ্বরে লুকোনো মণির মতো প্রচ্ছন্ন রয়েছে। পূর্ববঙ্গগীতিকা ও ময়মনসিংহ গীতিকা লৌকিক সাহিত্যের সুন্দর উদাহরণ। এদের মধ্যে গ্রামসমাজের সহজ লোকায়ত জীবনবেদনা গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে প্রকাশিত। যেমন – “দুখিনী ভেলুয়ার কথা না ভাবিও আর/আগুনে পুড়াইয়া তনু করলাম ছারখার।” বাউল গীতির মধ্যে যেমন ঈশ্বরতত্ত্বের অতি সুন্দর জীবনধর্মীরূপ প্রকাশিত তেমনি আবার আগমনী-বিজয়া সংগীতের মধ্যে বাঙালি পিতামাতার চিরন্তন ব্যথা বিষণ্ণ সুরে প্রতিধ্বনিত। যেমন – “ওরে গিরি কেমন কেমন করে প্রাণ/এমন মেয়ে কারে দিয়ে হয়েছে পাষাণ।”
উপসংহার – লৌকিক সাহিত্য বাংলার অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদ পুনরুদ্ধার করা একান্ত প্রয়োজনীয়। সরকার এবং জনসাধারণের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের এই লুপ্ত ঐশ্বর্য উদ্ধার করে পুনরায় তাকে গৌরবের আসনে বসাতে হবে। লৌকিক সাহিত্য সাধারণ মানুষের জীবনের মর্মবাণী। একে উদ্ধার করে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার লৌকিক সাহিত্য‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন