বাংলার মেলা – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার মেলা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলার মেলা - প্রবন্ধ রচনা

বাংলার মেলা

“কে কহিতে পারে এই তীর্থের মহিমা
স্নান দানে কত গুণ কে করিবে সীমা।”

বনমালী দাস

ভূমিকা – মেলা বাঙালি সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। এই ‘মেলা’ কথাটি এসেছে সকলের মিলনস্থল থেকে। বাঙালির জীবনে উৎসবের শেষ নেই, বারো মাসে তার তেরো পার্বণ। কতগুলি মেলা হয় ধর্মীয় পুজো-পার্বণকে কেন্দ্র করে, আবার কতকগুলি হয় ঋতুকেন্দ্রিক। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় – “মেলা ভারতের পল্লীর সার্বজনীন উৎসব। কোন উৎসব প্রাঙ্গণের মুক্ত অঙ্গনে সকল গ্রামবাসীর মনের উচ্ছ্বসিত মিলন স্থান হল মেলা।” মেলা উপলক্ষ্যে দূরদূরান্তের মানুষ এসে একত্রে মিলিত হয়। এই মিলনের মধ্য দিয়ে তাদের অন্তরাত্মার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ঘটে। এই কারণে মিলিত হয়ে ব্যক্তিহৃদয় যেন বৃহৎ ও মহৎ হয়ে ওঠে এবং মিলনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি সম্পূর্ণতা লাভ করে।

বিভিন্ন মেলা – বাংলার বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে এত মেলা অনুষ্ঠিত হয় যে, তা এই ছোটো নিবন্ধের মধ্য দিয়ে বলা সম্ভব নয়। পুরীর জগন্নাথদেবের রথের মেলার পরেই পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুরের মাহেশের রথের মেলার স্থান। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাধারাণী’ উপন্যাসেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। বীরভূমে কেঁদুলিতে জয়দেবের জন্মস্থানে মকরসংক্রান্তির মেলা। এখানে বাংলার প্রাচীন বাউল গানের আসর বসে। নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থানে বিভিন্ন মেলা বসে। নদিয়ার শান্তিপুরে রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে ‘রাস মেলা’ হয়। কোচবিহারে মদনমোহনের রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে রাসের মেলা বসে। মকরসংক্রান্তি উপলক্ষ্যে গঙ্গাসাগরে কপিলমুনির আশ্রমে বসে ‘সাগর মেলা’। এ ছাড়াও বিভিন্ন ঋতু অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

আধুনিক মেলা – বাংলার মেলার বৈচিত্র্য অনেক। বাংলার বেশিরভাগ মেলা গ্রামীণ জীবন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। তবে বর্তমানে কিছু আধুনিক মেলার প্রচলন হয়েছে। এ ব্যাপারে শান্তিনিকেতনের ‘পৌষমেলা’ উল্লেখের দাবি রাখে। এ ছাড়াও কলকাতার ‘বইমেলা’ এখন প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এইসব মেলাকে কেন্দ্র করে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির এক মিলনক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। বাংলার সংস্কৃতির সাথে বিশ্বসংস্কৃতির মেলবন্ধনের কেন্দ্রবিন্দু এই মেলা।

উপসংহার – ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের লেখা – “এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা।” এই বাংলায় প্রাণপ্রাচুর্যের প্রচুর উদাহরণ মেলে। বাংলা আজ বহু সমস্যায় জর্জরিত। তবু তার মেলাগুলি তাদের উৎসাহ, উদ্দীপনা, আনন্দ-কলরব সমস্ত নিয়ে আজও সজীব। মেলা বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনের অঙ্গ। মেলাগুলি নানাভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সতেজ করে তোলে। তাদের মাধ্যমে গ্রামীণ কুটিরশিল্পগুলি বেঁচে থাকার রসদ পায়। এইসব মেলা মানুষকে সামাজিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত করে। কর্মবহুল জীবনযাত্রা ও নিয়মশৃঙ্খলা থেকে একটু বেরিয়ে এসে নতুন করে মানুষকে বেঁচে থাকার উপাদান জোগায়।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার মেলা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

জিএসটি - প্রবন্ধ রচনা

জিএসটি – প্রবন্ধ রচনা

ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু - প্রবন্ধ রচনা

ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু – প্রবন্ধ রচনা

স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তি - প্রবন্ধ রচনা

স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তি – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জিএসটি – প্রবন্ধ রচনা

ভারতের প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি দ্রোপদী মুর্মু – প্রবন্ধ রচনা

স্বাধীনতার 75 বছর পূর্তি – প্রবন্ধ রচনা

আমার প্রিয় ভ্রমণকাহিনি – প্রবন্ধ রচনা

বাংলার উৎসব – প্রবন্ধ রচনা