বাংলার ঋতুচক্র – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার ঋতুচক্র‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বাংলার ঋতুচক্র - প্রবন্ধ রচনা

বাংলার ঋতুচক্র

“এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়!
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশতলে মেশে!
এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে!”

ভূমিকা – সেই দেশটি হল বাংলাদেশ। আমাদের জন্মভূমি তথা মাতৃভূমি। এই বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যে স্বতন্ত্র ও সমুজ্জ্বল। মানুষ প্রকৃতির সন্তান হওয়ায় তাদের জীবনে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি প্রভাব ফেলতে বাধ্য। আজকের আধুনিক জীবনযাপনেও প্রকৃতির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আজকের যান্ত্রিক জীবনে মুক্ত প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্যের আস্বাদ গ্রহণ করতে মানুষ ব্যাকুল।

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য – প্রকৃতি-বিজ্ঞানীরা ছয়টি ঋতুর দ্বারা বছরকে ভাগ করেছেন। প্রত্যেকটি ঋতুই তার আপন আপন বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র। ভারতবর্ষের অন্যান্য রাজ্যের কোনোটিতেই বাংলার ছয়টি ঋতুর সাড়ম্বর উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় না। ঋতুচক্র বাংলার প্রকৃতিতে চির পুরাতনের মধ্যেই চির নতুনের আস্বাদন নিয়ে আসে। দু-মাস অন্তর বাঙালির জীবনে ঋতুচক্র নিয়ে আসে অপার বৈচিত্র্যের আস্বাদ। বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে ঋতুর আবর্তনের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গ্রীষ্মে বাংলা তাপদগ্ধ হয়ে পড়ে। যদিও আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল গ্রীষ্মের দাবদাহকে ভুলিয়ে দেয়। আসে বর্ষা, তার অকৃপণ বারিধারা আমাদের শস্যভান্ডার পরিপূর্ণ করে দেয়। বাংলার তৃতীয় ঋতু হল শরৎ, এইসময় আকাশে থাকে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। আকাশ হয় ঘন নীল। বাঙালি মেতে ওঠে শারদ উৎসবে। তাই কবিও বলে ওঠেন – “শরৎ তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি”।

শীতের আগে আসে বাংলার নিজস্ব হেমন্ত ঋতু। কুয়াশা আর ঝরা পাতার খেলা মিলে হেমন্ত এক নতুন অনুভূতির সঞ্চার করে। আর তারপর আসে শীত। শীত বাঙালির উৎসবের ঋতু। শীতেই হয় পৌষপার্বণ-সহ নানা মেলা। বাঙালির চতুর্দশ পার্বণ বইমেলাও এই শীতকালেই বসে। ঋতুচক্রের শেষ ঋতুটি হল বসন্ত। ধূসর শীতের অবসান ঘটিয়ে প্রকৃতি নানা বর্ণে সেজে ওঠে। শিমুল, পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার সাজে নবরূপে সজ্জিত হয় বঙ্গপ্রকৃতি। বাংলার ঋতুচক্র কোনো ধরাবাঁধা পটচিত্র নয়। আসলে ঋতুচক্র প্রতিবছর বাঙালির জীবনকে দিয়ে যায় নতুন সঞ্জীবনী মন্ত্র। করে তোলে কবিত্বময়। অবশ্য ঋতুবৈচিত্র্য আনন্দের পাশাপাশি দুঃখের কারণও ঘটায়। গ্রীষ্ম প্রখর হয়ে উঠলে খরার প্রাদুর্ভাব আর বর্ষার অবিরাম ধারা বন্যার প্রকোপ ঘটায়। শীতের প্রাবল্য দীনদুঃখী দরিদ্র মানুষকে কাতর করে।

উপসংহার – জীবনে সুখ-দুঃখ দুই-ই থাকে। দুঃখকে অতিক্রম করে সুখের প্রতিষ্ঠা হল ঋতুচক্রের এক অন্তর্নিহিত বার্তা, যা বারবার বাঙালির জীবনে আশার আলো নিয়ে আসে।

ঋতুচক্রের কল্যাণে সৌন্দর্যময় আমাদের এই বাংলাদেশে ঋতুপরিবর্তন ঘটে এবং বঙ্গজীবন নবজীবনের স্পর্শে জেগে ওঠে নবীন আনন্দে। রূপে, বৈচিত্র্যে, প্রাণময়তায় বাংলার সব ঋতু আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বাংলার ঋতুচক্র‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বিজ্ঞানমনষ্কতা - প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানমনষ্কতা – প্রবন্ধ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান - প্রবন্ধ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার - প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বিজ্ঞানমনষ্কতা – প্রবন্ধ রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার – প্রবন্ধ রচনা

প্রাত্যহিক জীবনে জল – প্রবন্ধ রচনা

বিশ্বপরিবেশ দিবস উদযাপনের গুরুত্ব – প্রবন্ধ রচনা