বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?
Contents Show

বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?

বাংলা সাহিত্যমালায় স্বদেশচিন্তা ও জাতীয়তাবোধের জাগরণের এক উজ্জ্বলতম দৃষ্টান্ত হল স্বামী বিবেকানন্দের ‘বর্তমান ভারত’।

বর্তমান ভারত গ্রন্থের প্রকাশ –

স্বামীজির ‘বর্তমান ভারত’ প্রথমে পাক্ষিক ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পরে 1905 খ্রিস্টাব্দে তা গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

বর্তমান ভারত গ্রন্থের বিষয়বস্তু –

বর্তমান ভারত -এ স্বামীজি ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস মন্থন করে ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর ধারণাকে সংহত আকারে প্রকাশ করেছেন।

বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?

বর্তমান ভারত গ্রন্থের শূদ্রের জাগরণ –

বর্তমান ভারত -এ ভারতবর্ষের ইতিহাস বিশ্লেষণে স্বামীজি তাঁর মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন, ইতিহাস সর্বদা শ্রেণি-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। তাঁর মতে পৃথিবীর সর্বত্রই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র—এই চারটি বর্ণ পর্যায়ক্রমে পৃথিবী শাসন করবে। প্রথম দুটি বর্ণের শাসনকাল শেষ হয়েছে, তৃতীয় বর্ণ বৈশ্যের শাসনকালও সমাপ্তির মুখে। চতুর্থ বর্ণ শূদ্রের শাসন অবশ্যম্ভাবী এবং তা ঐতিহাসিক সত্য।

বর্তমান ভারত গ্রন্থের স্বদেশমন্ত্র –

গ্রন্থের উপসংহারে স্বামীজি দেশবাসীকে স্বদেশমন্ত্র উপহার দিয়েছেন। দেশের যুবসমাজের প্রতি তাঁর উদাত্ত আহ্বান – ‘হে ভারত, ভুলিও না তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত-ভুলিও না নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই।’ দেশ ও দেশবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে অনবদ্য ভাষায় তিনি লিখেছেন – ‘ভারতবর্ষ আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ-ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ।’ স্বামীজির স্বদেশপ্রেম এভাবেই পূর্ণতা পেয়েছে স্বদেশমন্ত্রে।

বর্তমান ভারত গ্রন্থের মন্তব্য –

স্বামীজির ‘বর্তমান ভারত’ -এ অখণ্ড ভারতমূর্তি আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তাঁর প্রেরণাতেই দেশপ্রেম ধর্মের বিকল্প হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁকে যথার্থই ‘ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক’ আখ্যা দিয়েছেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বর্তমান ভারত গ্রন্থটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়?

এটি প্রথমে পাক্ষিক ‘উদ্বোধন’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পরে 1905 খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়।

বর্তমান ভারত গ্রন্থটির মূল বিষয়বস্তু কী?

স্বামী বিবেকানন্দ এতে ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস বিশ্লেষণ করেছেন এবং ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর দর্শন উপস্থাপন করেছেন। তিনি শ্রেণি-সংগ্রাম ও বর্ণব্যবস্থার ঐতিহাসিক বিবর্তন-এর মাধ্যমে ভারতের ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরেছেন।

বর্তমান ভারত -এ শূদ্রের জাগরণ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

স্বামীজির মতে, ইতিহাসে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র—এই চার বর্ণ পর্যায়ক্রমে শাসন করে। তিনি করেন যে শূদ্রদের শাসনকাল আসন্ন, যা সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের ক্ষমতায়নের ইঙ্গিতবাহী।

বর্তমান ভারত -এ স্বদেশমন্ত্র কী এবং এর তাৎপর্য কী?

গ্রন্থের শেষে স্বামীজি “স্বদেশমন্ত্র” দিয়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁর বিখ্যাত উক্তি – “হে ভারত, ভুলিও না তুমি জন্ম হইতেই মায়ের জন্য বলি প্রদত্ত… নীচ জাতি, মূর্খ, দরিদ্র—তোমার রক্ত, তোমার ভাই।” এখানে সাম্য, ঐক্য ও জাতীয়তাবোধ-এর বার্তা রয়েছে।

বর্তমান ভারত গ্রন্থ কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করেছিল?

স্বামীজি অখণ্ড ভারত -এর ধারণা এবং হিন্দু সংস্কৃতির গৌরব-কে তুলে ধরে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করেন। তাঁর দর্শন ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ -এর ভিত্তি রচনা করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছিল।

বর্তমান ভারত গ্রন্থে ঐতিহাসিকদের মন্তব্য কী?

রমেশচন্দ্র মজুমদার স্বামীজিকে “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক” আখ্যা দিয়েছেন। গ্রন্থটিকে ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক জাগরণের মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে গ্রন্থটির প্রাসঙ্গিকতা কী?

এটি সামাজিক সমতা, জাতীয় ঐক্য ও স্বাধীন চিন্তা -এর প্রতি গুরুত্বারোপ করে, যা আজও ভারতের বহুত্ববাদী সমাজে প্রাসঙ্গিক।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বর্তমান ভারত কীভাবে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিস্তারে সহায়তা করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

1947 খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাজন কী কী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল তা বিশ্লেষণ করো।

ভারতের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর উপকূলীয় সমভূমির প্রভাব লেখো।

দেশীয় রাজ্য জুনাগড়ের ভারতভুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে ভারতে সরকার কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করে?