ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী? ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে নিষেধ করেছিল?

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী? ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে নিষেধ করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী? ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে নিষেধ করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী? ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে নিষেধ করেছিল?
Contents Show

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী?

1942 খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় এবং গান্ধিজির নেতৃত্বে “ভারত ছাড়ো” আন্দোলন শুরু হলে কমিউনিস্ট পার্টি তার বিরোধীতা করে এবং শ্রমিক, কৃষক, মজুরদের এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। তাদের মতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনায় ইংল্যান্ড যখন প্রাথমিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন তাকে আঘাত না করে জাতীয় কংগ্রেস পরোক্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকেই সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিল।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে নিষেধ করেছিল?

1942 খ্রিস্টাব্দের 9ই অগাস্ট ব্রিটিশ বিরোধী ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু এই আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর অংশগ্রহণ ছিল নামমাত্র। ভারতের কমিউনিস্টরা “ভারত ছাড়ো আন্দোলনে” শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করেছিল। কারণ –

1941 খ্রিস্টাব্দে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া নাৎসীবাদী জার্মানি দ্বারা আক্রান্ত হলে, সোভিয়েত রাশিয়া ইংল্যান্ডের সঙ্গে মিত্রপক্ষে যোগদান করে। এর ফলে ভারতের কমিউনিস্টরা ব্রিটিশ বিরোধী নীতি ত্যাগ করে এবং যেহেতু ব্রিটেন সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে জোটবদ্ধ তাই তারা ব্রিটিশ বিরোধিতা থেকে দূরে সরে আসে।

অথচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর সময় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি এই যুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বলে অভিহিত করে ‘এক পাই নয় এক ভাই নয়’ বলে ধ্বনি তুলে এই যুদ্ধে ভারত থেকে এক পাই এবং একটি মানুষকেও না পাঠাবার জন্য প্রচার করেছিল। শুধু তাই নয়, কমিউনিস্টরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ও রাশিয়ার যুদ্ধকে ‘জনযুদ্ধ’ আখ্যা দেয়। তাদের শ্রমিক নীতিতে পরিবর্তন আসে। কমিউনিস্টরা ট্রেড ইউনিয়নগুলিকে ধর্মঘট ও আন্দোলন করে সরকারকে বিব্রত না করার নির্দেশ দেয়। কমিউনিস্টরা চেয়ে ছিল উৎপাদন ও যুদ্ধ প্রয়াস যাতে ব্যহত না হয় সেই উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের ধর্মঘটের পথে না গিয়ে কারখানার মালিকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে।

কমিউনিস্টদের এই দুমুখো নীতিকে কিছু রাজ্যের শ্রমিক ভয়ে সমর্থন করেছিল, যেমন – কেরলের শ্রমিকরা। তবে বোম্বাই, গুজরাট, বিহার, দিল্লি, কানপুর, নাগপুর মাদ্রাজ, কোয়েম্বাটুর, কলকাতা ইত্যাদি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান কী ছিল?

1942 সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। তারা শ্রমিক ও কৃষকদের আন্দোলনে যোগ দিতে নিষেধ করেছিল, কারণ তখন সোভিয়েত রাশিয়া ব্রিটেনের সাথে মিত্রশক্তির পক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করছিল।

কমিউনিস্ট পার্টি কেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল?

1941 সালে নাৎসি জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করলে, সোভিয়েত ইউনিয়ন ব্রিটেনের সাথে মিত্রশক্তিতে যোগ দেয়। এর ফলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশ বিরোধী নীতি ত্যাগ করে এবং যুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিক ধর্মঘটে বাধা দিয়েছিল?

কমিউনিস্ট পার্টি চেয়েছিল যুদ্ধের প্রয়াসে যেন কোনো বিঘ্ন না ঘটে। তাই তারা শ্রমিকদের ধর্মঘট না করে কারখানার মালিকদের সাথে সহযোগিতা করতে বলেছিল, যাতে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উৎপাদন বন্ধ না হয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ব্রিটিশ বিরোধী নীতি কি সর্বত্র সমর্থিত হয়েছিল?

না, কেরলের মতো কিছু রাজ্যে শ্রমিকরা এই নীতি মেনে নিলেও বোম্বাই, কলকাতা, কানপুর, বিহার, মাদ্রাজ প্রভৃতি অঞ্চলের শ্রমিকরা এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে আন্দোলনে অংশ নেয়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ব্রিটিশ বিরোধী অবস্থানের ফলে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

অনেক জাতীয়তাবাদী নেতা ও সাধারণ মানুষ কমিউনিস্ট পার্টির এই নীতিকে “দ্বিচারী” বলে সমালোচনা করেছিলেন। আন্দোলনের সময় তাদের এই ভূমিকা পরবর্তীতে ভারতের রাজনীতিতে তাদের ভাবমূর্তিকে প্রভাবিত করেছিল।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টি কি শুরুতে ব্রিটিশ বিরোধী ছিল?

হ্যাঁ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টি এই যুদ্ধকে “সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ” বলে বিবেচনা করত এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে “এক পাই নয়, এক ভাই নয়” (টাকা বা সৈন্য দেব না) স্লোগান দিয়ে আন্দোলন করেছিল। কিন্তু 1941 সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুদ্ধে যোগ দিলে তাদের নীতি পরিবর্তিত হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী? ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে নিষেধ করেছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী? ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা কেন শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলন করতে নিষেধ করেছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

মাতঙ্গিনী হাজরা বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় নাম কেন?

মাতঙ্গিনী হাজরা বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় নাম কেন?

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের নেতৃত্বে বাংলায় বৈপ্লবিক আন্দোলনের কীরূপ প্রসার ঘটেছিল?

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের নেতৃত্বে বাংলায় বৈপ্লবিক আন্দোলনের কীরূপ প্রসার ঘটেছিল?

রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা কীভাবে গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল?

রশিদ আলি দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতা কীভাবে গণআন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছিল?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

পাঁচটি কঠিন বর্জ্য পদার্থের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আলোচনা করো।

নর্দমার জলকে কীভাবে পরিশোধন করা হয়?

BOD এবং COD বলতে কী বোঝো?

মাতঙ্গিনী হাজরা বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় নাম কেন?

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা লেখো।