এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
প্রাক্-জাতীয় কংগ্রেস পর্বে ভারতবর্ষে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক সভা-সমিতিগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ভারত সভা’ বা Indian Assotiation.
ভারত সভার প্রতিষ্ঠা –
1876 খ্রিস্টাব্দের 26 জুলাই সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি প্রমুখের উদ্যোগে কলকাতার অ্যালবার্ট হলে এই সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারত সভার উদ্দেশ্য –
ভারত সভা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ ছিল –
- ব্রিটিশ সরকারের শোষণমূলক নীতি ও পক্ষপাতদুষ্ট আইনের বিরুদ্ধে দেশে শক্তিশালী জনমত গঠন করা,
- সর্বভারতীয় রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ভিত্তি করে ভারতের বিভিন্ন জাতি ও মতাবলম্বী গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা।
- হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ঐক্যবোধ গঠন এবং
- জনগণকে গণআন্দোলনে শামিল করা।
ভারত সভার প্রসারে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ভূমিকা –
সুরেন্দ্রনাথের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ‘ভারত সভা’ লর্ড লিটন কর্তৃক সিভিল সার্ভিসে ভারতীয় পরীক্ষার্থীদের বয়ঃসীমা 21 থেকে কমিয়ে 19 করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলে। সুরেন্দ্রনাথ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বহু জনসভায় বক্তৃতা করে পরীক্ষা সংক্রান্ত নতুন বিধির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। বিভিন্ন প্রদেশের রাজনৈতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সুরেন্দ্রনাথ জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভারতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালাবার এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে – ‘ভারতের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত সুরেন্দ্রনাথের প্রচারকার্য ভারতের রাজনৈতিক চেতনার ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’ সুরেন্দ্রনাথের উদ্যোগে লক্ষ্ণৌ, মিরাট, লাহোর, সিন্ধু প্রভৃতি অঞ্চলে ভারত সভার শাখা গড়ে ওঠে।
দমনমূলক ‘মাতৃভাষা সংবাদপত্র আইন’ (1878 খ্রিস্টাব্দ) এবং অস্ত্র আইন (1878) -এর বিরুদ্ধেও ‘ভারত সভা’ তথা সুরেন্দ্রনাথ প্রতিবাদে শামিল হন।
ইলবার্ট বিলের (1883 খ্রিস্টাব্দ) সপক্ষে ‘ভারত সভা’ আন্দোলনে শামিল হয়। সুরেন্দ্রনাথের উদ্যোগে 1883 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় ‘সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন’। অমলেশ ত্রিপাঠী এই সম্মেলনকে ‘জাতীয় কংগ্রেসের মহড়া’ বলে অভিহিত করেছেন।
ভারত সভার মন্তব্য –
বস্তুতপক্ষে ‘ভারত সভা’ ছিল সেই গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক, যা অতিক্রম করে ভারতবাসী পেয়েছিল জাতীয় কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান। 1885 খ্রিস্টাব্দে ‘জাতীয় কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠিত হলে অচিরেই ‘ভারত সভা’ এই সংগঠনের সঙ্গে মিশে যায়। সুরেন্দ্রনাথ তথা ভারত সভার অপরাপর সদস্যদের যোগদান নিঃসন্দেহে জাতীয় কংগ্রেসের শক্তিবৃদ্ধি করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ভারত সভা কবে, কোথায় এবং কাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়?
1876 খ্রিস্টাব্দের 26 জুলাই কলকাতার অ্যালবার্ট হলে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি প্রমুখ নেতার উদ্যোগে ভারত সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারত সভার প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
ভারত সভার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল –
1. ব্রিটিশ শাসনের শোষণমূলক নীতির বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা।
2. ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা।
3. হিন্দু-মুসলিম ঐক্য গড়ে তোলা।
4. সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত করা।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত সভার প্রসারে কী ভূমিকা পালন করেন?
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ভারত সভার প্রসারে ভূমিকা –
1. তিনি লর্ড লিটনের সিভিল সার্ভিস বয়সসীমা কমানোর (21 থেকে 19 বছর) সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
2. তিনি সারা ভারত ভ্রমণ করে জনমত গঠন করেন এবং বিভিন্ন শহরে ভারত সভার শাখা প্রতিষ্ঠা করেন (যেমন – লক্ষ্ণৌ, লাহোর, মিরাট)।
3. মাতৃভাষা সংবাদপত্র আইন (1878) ও অস্ত্র আইনের (1878) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করেন।
4. ইলবার্ট বিল (1883) -এর পক্ষে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করেন।
ভারত সভা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক কী?
ভারত সভা ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে সম্পর্ক ছিল –
1. ভারত সভা ছিল প্রাক্-কংগ্রেস যুগের সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠন।
2. 1885 সালে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর ভারত সভা এর সঙ্গে মিশে যায়।
3. সুরেন্দ্রনাথ ও ভারত সভার অন্যান্য নেতারা কংগ্রেসে যোগ দিয়ে এর শক্তি বৃদ্ধি করেন।
ভারত সভার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
ভারত সভার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল –
1. এটি প্রথম সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠন যা জাতীয় স্তরে আন্দোলন গড়ে তোলে।
2. এটি জাতীয় কংগ্রেসের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।
3. অমলেশ ত্রিপাঠী একে “জাতীয় কংগ্রেসের মহড়া” বলে অভিহিত করেছেন।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন ‘ভারত সভার প্রাণপুরুষ’ বলা হয়?
1. তিনিই ভারত সভার মূল সংগঠক ও নেতা ছিলেন।
2. তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভারত সভা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
3. তিনি সাম্প্রদায়িক ঐক্য, গণআন্দোলন ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ভারত সভার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।