এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি আলোচনা করো।
ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশ। ভারতের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ভারতের অনুমিত জনসংখ্যা 1600 খ্রিস্টাব্দে প্রায় 10 কোটি, 1800 খ্রিস্টাব্দে 12 কোটি, 1841 খ্রিস্টাব্দে 13 কোটি, 1871 খ্রিস্টাব্দে 15.5 কোটি। ভারতে প্রথম জনগণনা শুরু হয় 1865-1872 খ্রিস্টাব্দে। 1901 খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনসংখ্যা ছিল 23.84 কোটি এবং 2011 খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে দাঁড়ায় 121.02 কোটি। এই 110 বছরে 5 গুণের বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের 110 বছরের জনমিতি ইতিহাসকে চারটি সুনির্দিষ্ট সময়ে ভাগ করা যায়। যথা –
প্রথম পর্যায় নিশ্চল বৃদ্ধি –
1901 থেকে 1921 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল অত্যন্ত নিশ্চল বা মন্থর। উচ্চ জন্মহার (48-49/1000) এবং উচ্চ মৃত্যুহার (43-47/1000) -এর কারণে মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় মাত্র 1.29 কোটি। বিগত 110 বছরের জনমিতির ইতিহাসে একমাত্র 1911-1921 এই দশ বছরে বিভিন্ন মহামারি (কলেরা, বসন্ত, প্লেগ, ম্যালেরিয়া) ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের (খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ) কারণে জনসংখ্যা 0.08 কোটি হ্রাস পেয়েছিল।
দ্বিতীয় পর্যায় বা ধীর বৃদ্ধি –
1921-1951 খ্রিস্টাব্দ, এই 30 বছরে ভারতের জনসংখ্যা ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে 25.13 কোটি থেকে 36.11 কোটি হয় অর্থাৎ 10.98 কোটি বৃদ্ধি পায়। উচ্চ জন্মহার (40-48/1000) এবং ক্রম নিম্নমুখী মৃত্যুহারের (47-27/1000) কারণে জনসংখ্যা ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায়। এই সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করার জন্য খাদ্য উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়। মৃত্যুহার কমিয়ে আনার জন্য পয়ঃপ্রণালী ও চিকিৎসা পরিসেবার প্রচুর উন্নতি ঘটানো হয়।
তৃতীয় পর্যায় বা জনবিস্ফোরণ –
1951-1981 খ্রিস্টাব্দ, এই 30 বছরে জনসংখ্যা অতি দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। 1951 খ্রিস্টাব্দে 36.11 কোটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে 1981 খ্রিস্টাব্দে হয়েছে 68.33 কোটি। অর্থাৎ এই 30 বছরে 32.22 কোটি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার 2% -এর বেশি ছিল অর্থাৎ এই সময় জনবিস্ফোরণ ঘটে। উচ্চ জন্মহার (37-40) এবং মৃত্যুহার (27-15) দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
চতুর্থ পর্যায় বা ক্রমহ্রাসমান বৃদ্ধি (1981-2011) –
1981 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ঊর্ধ্বমুখী গতি ক্রমশ নিম্নমুখী থাকে। 1981 খ্রিস্টাব্দে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল 24.66%, যা 2011 খ্রিস্টাব্দে হ্রাস পায় 17.64%। এই 30 বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় (121.02 থেকে 68.33) কোটি = 52.69 কোটি। চিকিৎসা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি, নারী শিক্ষার প্রসার, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি থেকে শিল্পে অধিক নির্ভরশীলতা, গতিশীল জীবনযাত্রা প্রভৃতি কারণে জন্মহার 37% থেকে 26% -এ এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অতি উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ প্রভৃতি কারণে মৃত্যুহার হ্রাস পেয়ে 15% থেকে 8% -এ নেমে যায়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বর্তমানে ভারতের জনসংখ্যা কত?
2023 সালের হিসাবে, ভারতের জনসংখ্যা প্রায় 142 কোটি (1.42 বিলিয়ন) এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকে অতিক্রম করেছে।
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ কী?
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো –
1. উচ্চ জন্মহার (ঐতিহাসিকভাবে 40-48 প্রতি হাজারে)।
2. মৃত্যুহারের দ্রুত পতন (চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি)।
3. যুব জনসংখ্যার আধিক্য (প্রজননক্ষম বয়সের মানুষের সংখ্যা বেশি)।
4. সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণ (শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, শিশু মৃত্যু হার কমানো)।
1921 সালকে ভারতের জনসংখ্যা ইতিহাসে “মহাবিভাজক বছর” বলা হয় কেন?
1921 সালকে ভারতের জনসংখ্যা ইতিহাসে “মহাবিভাজক বছর” বলা হয় কারণ এই বছরের পর থেকে মৃত্যুহার কমতে শুরু করে, ফলে জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
1951-1981 সময়কালকে “জনবিস্ফোরণের যুগ” বলা হয় কেন?
1951-1981 সময়কালকে “জনবিস্ফোরণের যুগ” বলা হয় কারণ এই সময়ে –
1. জন্মহার বেশি (37-40/1000)।
2. মৃত্যুহার দ্রুত কমে (27 থেকে 15/1000)।
3. জনসংখ্যা 36.11 কোটি থেকে 68.33 কোটিতে প্রায় দ্বিগুণ হয়।
1981 সালের পর থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে কেন?
1981 সালের পর থেকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে কারণ –
1. পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির সাফল্য।
2. নারী শিক্ষার প্রসার।
3. শহুরে জীবনযাত্রার প্রভাব (ছোট পরিবারের প্রবণতা)।
4. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (কৃষিনির্ভরতা কমে শিল্প ও সেবাখাতে চাকরি বৃদ্ধি)।
ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
ভারতের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে –
1. জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি (1952 সালে চালু)।
2. দুটি সন্তানের নীতি (কিছু রাজ্যে)।
3. স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম (বালিকা শিক্ষা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রসার)।
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব কী?
ভারতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব হলো –
1. প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ (জল, জমি, বন)।
2. বেকারত্ব বৃদ্ধি।
3. শহরগুলিতে অপরিকল্পিত বসতি ও পরিবেশ দূষণ।
4. স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার উপর চাপ।
ভবিষ্যতে ভারতের জনসংখ্যা কী হারে বৃদ্ধি পাবে?
জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, 2060 সালের দিকে ভারতের জনসংখ্যা সর্বোচ্চ (~170 কোটি) হবে, তারপর স্থিতিশীল বা কমতে শুরু করবে।
ভারতের কোন রাজ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ও কম?
1. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ – বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ।
2. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বনিম্ন – কেরল, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ (নিম্ন জন্মহার ও উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন