ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো
ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো
Contents Show

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের অবস্থান –

ছত্তিশগড় রাজ্যের দুর্গ জেলার ভিলাই -এ ভারত সরকারের উদ্যোগে পূর্বতন সোভিয়েত সরকারের সহযোগিতায় কারখানাটি স্থাপিত হয়। 4 ফেব্রুয়ারি, 1959 খ্রিস্টাব্দে এর উৎপাদন শুরু হয়। এটি ভারতের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ –

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি হলো –

  1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা – ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হল এই অঞ্চলে কাঁচামাল সহজে পাওয়া যায়।
    • আকরিক লোহা – নিকটবর্তী দাল্লিরাজহারা ও বায়লাডিলা খনি থেকে উচ্চমানের আকরিক লোহা সংগৃহীত হয়, যা এই শিল্পকেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়।
    • কয়লা – স্থানীয় কোরবা খনি ছাড়াও ঝরিয়া, রানিগঞ্জ ও বোকারো খনি থেকে কয়লা সংগ্রহ করে এই কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়।
    • অন্যান্য খনিজ পদার্থ – নন্দিনী ও বিলাসপুর অঞ্চলের চুনাপাথর, ভালোয়ার, পাটপাড়া ও হার্ডি অঞ্চলের ডলোমাইট এবং ভাণ্ডারা ও বালাঘাটের ম্যাঙ্গানিজ ভিলাই ইস্পাত উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
  2. শক্তির উৎস – নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও কোরবা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এই শিল্পকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
  3. জলের উৎস – মহানদী ও তুন্দুলা জলাধার থেকে শিল্পকাজের জন্য প্রয়োজনীয় স্বচ্ছ জল সহজেই পাওয়া যায়।
  4. শ্রমিকের প্রাপ্যতা – ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য থেকে সুলভ ও দক্ষ শ্রমিক সহজে পাওয়া যায়, যা শিল্প পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
  5. পরিবহণ ব্যবস্থা – দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেলপথ এবং জাতীয় সড়ক NH-6 ও NH-43 -এর মাধ্যমে কাঁচামাল ও প্রস্তুত পণ্য পরিবহনের সুব্যবস্থা রয়েছে।
  6. বন্দরের নৈকট্য – বিশাখাপত্তনম বন্দর নিকটে অবস্থিত হওয়ায় আমদানি ও রপ্তানিতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।
  7. বাজারের বিস্তৃতি – জনবহুল শিল্পাঞ্চল যেমন চেন্নাই, বিশাখাপত্তনম ও পুণে-তে ইস্পাতের বিশাল বাজার রয়েছে, যা উৎপাদিত পণ্যের বিপণনে সহায়ক।
  8. উৎপাদন ক্ষমতা – ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র বছরে প্রায় 32 লক্ষ টন বিক্রয়যোগ্য ইস্পাত এবং 40 লক্ষ টন ইস্পাত পিণ্ড (যার 75-80% বিক্রয়যোগ্য) উৎপাদন করে।

উৎপাদন – বাৎসরিক প্রায় 32 লক্ষ টন বিক্রয়যোগ্য ইস্পাত এবং 40 লক্ষ টন ইস্পাত পিণ্ড (75-80%) উৎপাদিত হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের দুর্গ জেলার ভিলাই শহরে অবস্থিত।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

এটি 1959 সালের 4ঠা ফেব্রুয়ারি উৎপাদন শুরু করে।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার প্রধান কারণ কী?

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার প্রধান কারণগুলি হল —
1. কাঁচামালের সহজলভ্যতা – (দাল্লিরাজহারা ও বায়লাডিলার লৌহ আকরিক, কোরবা ও ঝরিয়ার কয়লা)।
2. শক্তির উৎস – (কোরবা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন)।
3. জলের সুবিধা – (মহানদী ও তুন্দুলা জলাধার)।
4. পরিবহণ সুবিধা – (রেলপথ, NH-6 ও NH-43 সড়ক)।
5. বাজারের নৈকট্য – (দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের শিল্পাঞ্চল)।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রে কোন কোন কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়?

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামালগুলি হলো —
1. লৌহ আকরিক – দাল্লিরাজহারা, বায়লাডিলা।
2. কয়লা – কোরবা, ঝরিয়া, রানিগঞ্জ, বোকারো।
3. চুনাপাথর – নন্দিনী, বিলাসপুর।
4. ডলোমাইট – ভালোয়ার, পাটপাড়া, হার্ডি।
5. ম্যাঙ্গানিজ – ভাণ্ডারা, বালাঘাট।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের জন্য জল কোথা থেকে আসে?

মহানদী ও তুন্দুলা জলাধার থেকে জল সরবরাহ করা হয়।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা কত?

বর্তমানে এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় 32 লক্ষ টন ইস্পাত।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের সঙ্গে কোন দেশের সহযোগিতা ছিল?

এটি ভারত সরকার ও প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন -এর যৌথ সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের পরিবহণ সুবিধা কী?

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের পরিবহণ সুবিধাগুলি হলো —
1. রেলপথ – দক্ষিণ-পূর্ব মধ্য রেলওয়ে।
2. সড়কপথ – NH-6 ও NH-43।
3. বন্দর – বিশাখাপত্তনম বন্দরের নিকটবর্তী।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র ভারতের কততম বৃহৎ ইস্পাত কারখানা?

এটি ভারতের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানা এবং এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম।

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের অর্থনৈতিক গুরুত্ব কী?

ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্রের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিশাল, কারণ —
1. ভারতে ইস্পাত শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
2. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
3. দেশের অবকাঠামো ও শিল্পায়নে ইস্পাত সরবরাহ করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ভিলাই ইস্পাত কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - চলতড়িৎ - রোধের সমবায়

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – চলতড়িৎ – রোধের সমবায়

একটি অ্যামিটারকে কোনো তড়িৎ বর্তনীর রোধের সঙ্গে সমান্তরালভাবে এবং একটি ভোল্টমিটারকে শ্রেণিতে রাখা হল। এর ফল কী হবে?

অ্যামিটারকে তড়িৎ বর্তনীর রোধের সঙ্গে সমান্তরালভাবে এবং ভোল্টমিটারকে শ্রেণিতে রাখা হলে কী হবে?

একটি তামার তারের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদ অপরিবর্তিত রেখে তারটিকে গরম করলে তারের রোধের কী পরিবর্তন ঘটবে? তামার তারের পরিবর্তে কার্বন তন্তু ব্যবহার করলে রোধের কোনো পরিবর্তন দেখা যাবে কি?

একটি তামার তারের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদ অপরিবর্তিত রেখে তারটিকে গরম করলে তারের রোধের কী পরিবর্তন ঘটবে?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – চলতড়িৎ – রোধের সমবায়

অ্যামিটারকে তড়িৎ বর্তনীর রোধের সঙ্গে সমান্তরালভাবে এবং ভোল্টমিটারকে শ্রেণিতে রাখা হলে কী হবে?

একটি তামার তারের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদ অপরিবর্তিত রেখে তারটিকে গরম করলে তারের রোধের কী পরিবর্তন ঘটবে?

সমান দৈর্ঘ্যের একটি সরু এবং একটি মোটা তামার তার একই ব্যাটারির সঙ্গে যুক্ত করা হলে, কোন্ তারে বেশি তড়িৎ প্রবাহিত হবে?

পরিবাহীর রোধ কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?