আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিজ্ঞানমনষ্কতা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বিজ্ঞানমনষ্কতা
ভূমিকা – বিজ্ঞান হল বিশেষ জ্ঞান। কল্পনা নয়, কষ্টকর চিন্তা নয়; বিজ্ঞান চায় সব কিছুকে স্পষ্ট করে দেখতে, উপলব্ধি করতে, তাকে বুঝতে, প্রয়োজনে বিশেষভাবে প্রয়োগ করতে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এমার্সন বলেছেন, “Science suppresses the old miracles of mythology.” আধুনিক যুগের মানুষ বিজ্ঞানবলে অসাধ্যসাধন করেছে, এমনকি স্বর্গমর্ত্যের সীমারেখাকেও মুছে দিয়েছে। তবু আজ উচ্চশিক্ষিত মানুষদের আচার-আচরণ, তাবিজকবচের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি, পাড়ায় পাড়ায় গ্রহশান্তির জন্য পাথর অথবা শিকড় বিক্রির বহর দেখে মনে প্রশ্ন জাগে আমরা ষোড়শ শতক থেকে কতটা বিজ্ঞানচেতনায় অগ্রসর হতে পেরেছি।
বিজ্ঞানশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা – বিজ্ঞান মানুষকে তার পারিপার্শ্ব ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে কৌতূহলী করে তোলে। ওপর ওপর কিছু কথা জানলে বিজ্ঞানকে জানা যায় না। কবি লর্ড টেনিসন যথার্থই বলেছেন, “There live many faiths in honest doubt.” প্রকৃত সন্দেহ বা অনুসন্ধিৎসার মধ্যেই থাকে বহু সত্য। তাই বিজ্ঞানশিক্ষার জন্য প্রয়োজন নিষ্ঠা, একাগ্রতা এবং ধৈর্য।
বিজ্ঞানমনস্কতার সংজ্ঞা ও লক্ষণ – বিজ্ঞানমনস্কতা বোঝায় বিজ্ঞানচেতনাকে। বিজ্ঞানমনস্ক মনের অবশ্যম্ভাবী লক্ষণগুলি হয়ে থাকে এইরকম –
- বিজ্ঞানচেতন মন হয় যুক্তিবাদী, অন্ধভাবে সে মন বহুকাল প্রচলিত কোনো আপ্তবাক্যকে মেনে নেয় না।
- বিজ্ঞানচেতন মন হয় বস্তুবাদী। অলৌকিক প্রসঙ্গকে সে মনের সীমায় ধরতে না পারলে গ্রহণ করে না।
- বিজ্ঞানমনস্ক মন হয় আত্মবিশ্বাসী। আধিভৌতিক, আধিদৈবিক ব্যাপার তার মনে কোনো ছাপ ফেলতে পারে না।
বিজ্ঞানমনস্কতা প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রাচীন ও বর্তমান কাল – সব জানা সত্ত্বেও আজও মানুষের অন্ধত্ব ও কুসংস্কারের প্রতি বিশ্বাস কতটা কমেছে তা প্রমাণসাপেক্ষ। প্রাচীন যুগে প্রকৃতির রহস্য সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত হয়নি বলে কোনো বড়ো প্রাকৃতিক দুর্বিপাককে মানুষ তখন ঈশ্বরের রোষ বলে ভাবত। তাই সেই রোষ প্রশমনের জন্য তারা পূজা-অর্চনার ব্যবস্থা করত। কিন্তু আধুনিক যুগেও যখন পাঁজিপুথির ব্যাপক প্রচলন চোখে পড়ে, গৃহ প্রতিষ্ঠা কিংবা বিজ্ঞান গবেষণাগারের প্রতিষ্ঠার জন্যও এদেশে যখন দিনক্ষণ গণনা করা হয়, পূজা হোমযজ্ঞের পর নারকেল ফাটিয়ে কাটা হয় নব নির্মিত দ্বারের ফিতে-তখন মনে সংশয় জাগে আমরা কি সত্যই বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠেছি?
বিজ্ঞানমনস্কতা ও কুসংস্কার – ডিরোজিও যে বিজ্ঞানচিন্তার পথ নির্মাণ করে গিয়েছিলেন যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সে পথ এখন একজনের মতকে অস্বীকার করে অন্যের পথকে স্বীকার করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে ‘বিজ্ঞান ক্লাব’ বিজ্ঞানচেতনার ব্যর্থ অহংকার হয়েছে – অলংকার হতে পারেনি। তাই আশ্চর্য লাগে যুক্তিবাদ ও প্রত্যক্ষ প্রমাণমূলক বাস্তবের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে বিজ্ঞান সেই বিজ্ঞানের ধারক-বাহকদের যখন দু-হাতের দশ আঙুলে নবগ্রহের রোষ প্রশমনের জন্য দশটা আংটি দেখতে পাই। তাই বুঝতে অসুবিধা হয় না সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণকে কেন এখনও সাধারণ মানুষ দেব-দানবের যুদ্ধ বলে মনে করেন। গ্রামাঞ্চলে কেন এখনও যুক্তিহীন, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন কার্যাদি অবলীলায় সংঘটিত হয়।
উপসংহার – “There are many things in earth and heaven Horatio, that are not in your dictionary.” শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক হ্যামলেটের এই উক্তি আজ স্মরণীয়। পৃথিবীর সব জিজ্ঞাসার উত্তর আমাদের কাছে নেই। কিন্তু এই কম্পিউটার, ইন্টারনেটের যুগে অনেক কিছুই আবার আমরা জানি। প্রাত্যহিক জীবনে কুসংস্কারকে বরণ করার চেয়ে যতটা তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় ততই মঙ্গল। এজন্য দরকার প্রথাগত শিক্ষার বাইরে নানা আলোচনাচক্র, পাঠচক্র, স্থানে স্থানে বিজ্ঞানবিষয়ক বিতর্কসভা ও বিজ্ঞানপ্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা। মানুষকে বিজ্ঞানসচেতন করতে হলে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার বাঞ্ছনীয়। আর এই বিজ্ঞানশিক্ষার সাফল্য নির্ভর করে পরিচ্ছন্ন জীবনাচরণে, মুক্তচিন্তার প্রকাশে, যুক্তিবাদিতায় এবং সুগভীর মানবপ্রীতিতে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিজ্ঞানমনষ্কতা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন