আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার
ভূমিকা – শিক্ষা চেতনার বাহক। সেই শিক্ষা যখন বিশেষ জ্ঞান অর্জনের সহায়ক হয়ে ওঠে, তখন তা মানবসভ্যতাকে অগ্রগতির দিশা দেখায়। আমরা উপলব্ধি করি বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবন অচল, উন্নতি বা অগ্রগতি তো দূরস্থ। তাই বিজ্ঞানকে আমাদের আত্মস্থ করতে হবে বা বন্ধুর মতো বিজ্ঞানের হাত ধরে আমাদের পৃথিবীকে করে তুলতে হবে কল্যাণময়। মানবপ্রেমিক, বিজ্ঞানমনস্ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাই বলছেন – “বিজ্ঞান মানুষের একালের প্রকৃত বন্ধু। তার প্রসন্ন, দক্ষিণ দৃষ্টিই মানবকল্যাণের জয়যাত্রাকে সূচিত করবে।”
বিজ্ঞানচেতনার উন্মেষ – অথচ সভ্যতার প্রাক্লগ্নে মানুষ ছিল প্রকৃতিনির্ভর। প্রকৃতির খেয়ালে নিয়ন্ত্রিত হত তার জীবন। কিন্তু প্রাকৃতিক শক্তিকে জয় করার অদম্য সাহস, অসীম উৎসাহ ও ক্লান্ত চেষ্টার কোনো অভাব ছিল না মানুষের মধ্যে। তাই আগুন আবিষ্কারে যার সূচনা ঘটে, সেই কৌতূহলই মানুষকে উজ্জীবিত করল বিজ্ঞানকে মাধ্যম করে প্রকৃতির ওপর আধিপত্য বিস্তারে। আজ আধুনিক সভ্যতার যে উৎকর্ষ তার শিকড় বিজ্ঞানচেতনার সেই উন্মেষের মধ্যেই নিহিত।
সামাজিক জীবনে বিজ্ঞানচেতনা – একবিংশ শতাব্দীর বুকে দাঁড়িয়েও আমরা অনেকে কুসংস্কারগ্রস্ত। ভাগ্য ফেরাতে আঙুলে পাথর ধারণ করি। গণেশের বিগ্রহকে দুধ খাইয়ে পুণ্য অর্জন করি। হাঁচি-টিকটিকির নির্দেশ মেনে পথে বের হই। বেড়াল সামনের পথ পেরোলে গাড়ি থামিয়ে দিই। ডাইনি সন্দেহে মানুষকে পুড়িয়ে মারি। সাপে কামড়ালে ওঝার শরণাপন্ন হই। এমন লজ্জাজনক উদাহরণ অসংখ্য, অগণিত। এজন্যই প্রয়োজন সামাজিক জীবনে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার ঘটানো। বিজ্ঞানই পারে মানুষকে যুক্তিবাদী করে তুলতে। তখন মানুষ এইসব ঘটনাকে বিশ্বাস করার আগে বিচারবিবেচনার কষ্টিপাথরে যাচিয়ে নেবে, অন্ধ কুসংস্কারের শিকার হবে না। মানবসমাজ হয়ে উঠবে সংস্কারমুক্ত, যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক।
উন্নয়নের স্বার্থে বিজ্ঞানচেতনা – মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এখন বিজ্ঞান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজতে পেস্ট, জলখাবার তৈরি করতে গ্যাস-ওভেন, মাইক্রোওভেন -এর ব্যবহার, স্কুল-কলেজ-অফিস যেতে বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি, দূরদেশে যেতে এরোপ্লেন, শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, যোগাযোগক্ষেত্রে মোবাইল-ইনটারনেট, চিকিৎসাক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি মানুষকে গতিশীল ও অত্যাধুনিক করে তুলেছে। করোনার গ্রাসে যখন নির্বাসিত মানবদুনিয়া, তখন বিজ্ঞানের একটা ক্লিকেই জীবনদায়ী ওষুধ থেকে বাজার-হাট, খাদ্য পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে মুঠোর মধ্যে। বিনোদনে খামতি রাখেনি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। দেশ ও দশের উন্নতির স্বার্থে এসব ব্যবহারের প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে। বিজ্ঞানচেতনার দ্বারাই কেবল তা সম্ভব। তাই তো বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু বলেছেন –
“যে-কোনো জাতির পক্ষে আজ বিজ্ঞানকে তুচ্ছ করা কিংবা তার সম্ভাব্যতাকে অবহেলা করা একান্ত বিপজ্জনক।”
বিজ্ঞানচেতনার প্রসারে ছাত্রসমাজ – আজকের ছাত্র, ভবিষ্যতের নাগরিক। তাদেরই দায়িত্ব নিতে হবে পৃথিবীর বুক থেকে কুসংস্কার, অশিক্ষা, অন্ধবিশ্বাস প্রভৃতির মতো জঞ্জাল সরিয়ে ফেলতে। এজন্যই প্রয়োজন নিজের বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠা, জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার ঘটানো। তবেই পৃথিবী আরও উন্নত হয়ে উঠবে। সভ্যতা এগিয়ে যাবে অগ্রগতির পথে; আনন্দময়, মঙ্গলময় ও শান্তিময় হয়ে উঠবে বিশ্বসংসার।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জনসাধারণের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন