আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ
ভূমিকা – বিজ্ঞান শুধু সংকলিত তথ্যের ভিড় নয়। বিজ্ঞান হল জনকল্যাণ ও উন্নয়নের সোপান। আদিমকাল থেকেই মানুষ তার মগজাস্ত্রকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কৃৎকৌশলকে আয়ত্ত করে জীবনের জয়যাত্রাকে সুগম করে চলেছে। আগুন থেকে চাকার আবিষ্কার-মানুষের এই বিজ্ঞানবোধের জাগরণে সময় লেগেছে প্রচুর। গুহাবাসী মানুষ থেকে গৃহবাসী মানুষ, কৃষিজীবী থেকে পশুপালক মানুষের তুলনায় শিল্পবিপ্লবোত্তর যুগের মানুষ বিজ্ঞানচেতনায় উন্নতি ঘটিয়েছে উল্কার গতিতে। এই গতি এখন ‘সর্বভূতে’ বিজ্ঞানের অস্তিত্ব ও অগ্রগতিকে সূচিত করছে। করোনা ভাইরাসের গ্রাসে যখন সমগ্র পৃথিবী, তখনও বিচ্ছিন্ন পরিবারের পাশে তাকে দেখা গেছে ত্রাতার ভূমিকায়।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সেকাল – বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় প্রাচীন ও মধ্যযুগ কেটেছে মূলত মানুষের বুনিয়াদি জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করার কাজে। কৃষিজীবী মানুষ বিজ্ঞানকে ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিবৈচিত্র্যের পথে হেঁটেছে। অন্নের চাহিদা মিটিয়ে সে বস্ত্রের চাহিদা ও গুণমানে নজর দিয়েছে। প্রকৃতির প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করতে গিয়ে উদ্ভাবন করেছে নানা যন্ত্র ও যন্ত্রচালিত বস্তু, যা তার জীবনযাত্রাকে দিয়েছে প্রগতি। সুস্বাস্থ্যের সন্ধানে তাকে ঔষধ গাছগাছড়া থেকে শল্যচিকিৎসায় বিজ্ঞানভাবনাকে উন্নীত করতে হয়েছে। জলপথ ছেড়ে ক্রমাগত স্থলপথে তার যাত্রাকে বাধাহীন করতে পথ ও ভূতল যানবাহনের উন্নতি ঘটাতে হয়েছে।
একালে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা – আধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রা রূপকথার গল্পের মতো। একালের বিজ্ঞানে শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার মানবসমাজে বিপ্লব এনেছে। সেকালের আগুনের মতো একালের বিদ্যুতের ব্যবহার মানুষের সামনে হাজির করেছে বিচিত্র সম্ভার। বিজ্ঞানের দোসর হয়েছে প্রযুক্তি, দ্বৈতের মিলনে সভ্যতার উন্নয়নের অভাবনীয় উল্লম্ফন ঘটেছে। যে মানুষ একদিন অবাক বিস্ময়ে আপ্লুত ছিল বৈদ্যুতিক বাল্ব, পাখা, টেলিভিশন, রেডিয়ো, ফ্রিজ, হিটার, টেলিফোন, গ্যাস ওভেন ইত্যাদি দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের ব্যাবহারিক রূপ দেখে; সে মানুষ এখন একে সীমিত বলে মনে করে। যে মানুষ ট্রেন, বাস, এরোপ্লেনের মাধ্যমে গতিকে অভিনব করতে চেয়েছিল সে এখন আরও গতিপ্রত্যাশী। তার সীমাকে উত্তরোত্তর বাড়িয়ে তোলার নিরলস প্রয়াসে সে উদ্যোগী।
অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রা – কম্পিউটার ও ইনটারনেটের বিজ্ঞান আজ একদা অসম্ভবের কল্পজগৎকে চরম বাস্তবে পর্যবসিত করেছে। চিঠিপত্রের দীর্ঘযাত্রাপথের বিলম্বকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে ই-মেল ও স্কাইপের প্রযুক্তি, সুদূরকে প্রত্যক্ষ করাচ্ছে গৃহকোণে। মহামারিকালেও অব্যাহত থেকেছে শিক্ষার প্রবাহ। ইনটারনেটের সাহায্যেই সচল হয়েছে অনলাইন ক্লাস, অফিস-কাছারির ক্ষেত্রে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। মহাকাশগবেষণা ও পরমাণুগবেষণা ক্রমশ আমাদের মধ্যে এই ধারণার জন্ম দিচ্ছে, পৃথিবীতে বিজ্ঞানের দৌলতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। চাঁদ থেকে মঙ্গলগ্রহে যাত্রা আরও গ্রহান্তরে যাত্রার আগ্রহকে বাড়িয়ে দিয়েছে। উপগ্রহ প্রেরণ এখন মহাকাশবিজ্ঞানের প্রাথমিক জ্ঞানের পর্যায়ে পর্যবসিত। পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা তথা ‘ঈশ্বর কণার’ আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীরা প্রচলিত পদার্থবিজ্ঞানের ধারাকে বদলে নতুন ভাবনায় চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে চাইছেন। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান দেবত্বকে মনুষ্যত্বের সীমায় নিয়ে আসছে তথাকথিত অসম্ভবকে সম্ভব করে। জিনতত্ত্বের গবেষণা আজ অনেক রোগকেই আতুর ঘরেই বিনষ্ট করতে চাইছে। বছরের পর বছর কোমায় আক্রান্ত রোগীকেও নতুন জীবন ফিরিয়ে দিচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জয়যাত্রা।
অগ্রগতির প্রেক্ষিতে ভবিষ্যৎ ভাবনা – সভ্যতার ইতিহাসের অগ্রগতির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের ধ্বংসের বীজ। চেতনার জগতে নেতিবাচক পক্ষাবলম্বী স্বার্থান্বেষীর সংখ্যাও কম নয়। পরমাণুবিজ্ঞান ও মহাকাশগবেষণা আমাদের যেমন আশান্বিত করছে, পাশাপাশি পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনায় পৃথিবী ধ্বংসের প্রহর গুনছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি পণ্যায়নের সংস্কৃতিকে যত বাড়িয়ে তুলছে; জীবনে তত যান্ত্রিকতা বাড়ছে, বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে, ব্যক্তিগত গণ্ডি ছাড়িয়ে সবই পণ্য হয়ে উঠছে। ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ -এর পৃথিবীতে মনুষ্যত্ব নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মানুষের মধ্যে যে শুভ চেতনা আছে তার প্রতি আস্থা রেখে আমরাও বলতে পারি “মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ”।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন