বীণা দাস স্মরণীয় কেন?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বীণা দাস স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বীণা দাস স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বীণা দাস স্মরণীয় কেন?

বীণা দাস স্মরণীয় কেন?

সশস্ত্র বিপ্লববাদের ইতিহাসে বাঙালি বীরাঙ্গনা, সুভাষচন্দ্র বসুর বাল্যশিক্ষক বেণীমাধব দাসের কন্যা বীণা দাস এক স্মরণীয় নাম।

বীণা দাসের প্রথম জীবন –

স্বল্পভাষিনী ও শান্ত প্রকৃতির বীণা কৈশোরেই পিতা বেণীমাধব দাসের আদর্শ ও স্বদেশপ্রেমের ভাবধারায় দীক্ষিত হন। কলকাতার বেথুন কলেজে পড়ার সময় তিনি সাইমন কমিশন বয়কট, পিকেটিং আন্দোলন, কলকাতার কংগ্রেস অধিবেশনে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রভৃতিতে অংশ নেন।

বীণা দাসের মতাদর্শের পরিবর্তন –

ব্রিটিশের ক্রমবর্ধমান শোষণ, অত্যাচার প্রত্যক্ষ করে এবং 1931 খ্রিস্টাব্দে গান্ধি-আরউইন চুক্তি স্বাক্ষরের ঘটনায় মর্মাহত হয়ে তিনি ক্রমশ সশস্ত্র বিপ্লববাদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং কলকাতার ‘ছাত্রী সংঘে’র সদস্যারূপে যৌবনের প্রারম্ভে তিনি অস্ত্রচালনার পাঠ নেন।

বীণা দাসের জ্যাকসনকে হত্যার প্রচেষ্টা –

বীরাঙ্গনা বীণার জীবনের সবচেয়ে দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডটি ছিল বাংলার অত্যাচারী গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার প্রচেষ্টা। 1932 খ্রিস্টাব্দের 6 ফেব্রুয়ারি কলকাতার বেথুন কলেজের গ্রাজুয়েট একুশ বছরের বীণা দাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে আচার্য হিসেবে ভাষণরত গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে পরপর পাঁচটি গুলি ছোড়েন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তিনি লক্ষভ্রষ্ট হন। এই দুঃসাহসিক কর্মে তাঁকে পিস্তলটি সরবরাহ করেছিলেন অপর বিখ্যাত নারী সংগ্রামী কমলা দাশগুপ্ত।

বীণা দাসের কারাবাস –

জ্যাকসনকে গুলি চালানোর ঘটনায় বীণা গ্রেপ্তার হন এবং বিচারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন – “I fired on the Governor, impelled by love for my country.” বিচারে তিনি নয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। মেদিনীপুর জেলে বন্দি থাকার সময় তিনি শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরি প্রমুখের সঙ্গে জেলারের অত্যাচারের প্রতিবাদে অনশন শুরু করেন।

বীণা দাসের পরবর্তী জীবন –

1939 সালে আগাম কারামুক্তির পর তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদানের অপরাধে পুনরায় তিন বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। স্বাধীনতা উত্তর ভারতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যা হিসেবে তিনি সমাজ সংস্কারের কাজ চালিয়ে যান। 1960 খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘পদ্মশ্রী’ সম্মানে ভূষিত হন।

বীণা দাসের মন্তব্য –

বীরাঙ্গনা বীণার সংগ্রাম মুখর জীবন; তাঁর ত্যাগ, তিতিক্ষা এবং মাতৃভূমির স্বাধীনতাযজ্ঞে সর্বস্ব সমর্পণের আদর্শ ভারত ইতিহাসে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বীণা দাস কে ছিলেন?

বীণা দাস ছিলেন একজন বাঙালি বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী, যিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি বাংলার অত্যাচারী গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন।

বীণা দাসের পরিবারিক পটভূমি কী ছিল?

বীণা দাসের পিতা বেণীমাধব দাস ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর বাল্যশিক্ষক এবং একজন স্বদেশপ্রেমিক। পিতার আদর্শ থেকেই বীণা দাস স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হন।

বীণা দাস কেন বিখ্যাত?

1932 সালের 6 ফেব্রুয়ারি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে গুলি করার চেষ্টা করেছিলেন। এই ঘটনার জন্য তিনি গ্রেপ্তার হন এবং 9 বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন।

বীণা দাসকে কে পিস্তল সরবরাহ করেছিলেন?

বীণা দাসকে অপর নারী বিপ্লবী কমলা দাশগুপ্ত তাঁকে পিস্তল সরবরাহ করেছিলেন।

বীণা দাসের বিচারে কী হয়েছিল?

তিনি আদালতে বলেছিলেন, “I fired on the Governor, impelled by love for my country.” (আমি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে গভর্নরকে গুলি করেছি)। তাঁকে 9 বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

জেলে বীণা দাসের ভূমিকা কী ছিল?

মেদিনীপুর জেলে তিনি শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরীর সঙ্গে জেলারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে অনশন করেন।

স্বাধীনতার পর বীণা দাস কী করেছিলেন?

তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যা হিসেবে সমাজ সংস্কারের কাজ করেছিলেন এবং 1960 সালে পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছিলেন।

বীণা দাসকে কেন স্মরণ করা হয়?

তাঁর সাহসিকতা, দেশপ্রেম, ত্যাগ ও নারীশক্তির প্রতীক হিসেবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বীণা দাস স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বীণা দাস স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।

কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?

কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সম্পর্কে টীকা লেখো।

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সম্পর্কে টীকা লেখো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।

কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?

বীণা দাস স্মরণীয় কেন?

চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন সম্পর্কে টীকা লেখো।

বর্জ্যজনিত বায়ুদূষণ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে?