আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ
ভূমিকা – মানব বা প্রাণীকুলের মতো উদ্ভিদকুলও বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি। জীবনচক্রের ক্রমবিকাশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। এক্ষেত্রে বন ও বন্যপ্রাণী পরস্পরের পরিপূরক, তাই উভয়ক্ষেত্রেই যথাযথ সংরক্ষণ প্রয়োজন। সাহিত্যিক সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, “বন্যেরা বনে সুন্দর/শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।”
সংরক্ষণ বলতে কী বোঝায়? – পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ – খনিজদ্রব্য, জল, বায়ু, মাটি, বন, বন্যপ্রাণী প্রভৃতির অপচয় ও যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে মানুষ আজ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। জীবজগতের সার্বিক মঙ্গলের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ, পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং সীমিত ব্যবহারকে সংরক্ষণ বলা হয়।
বনসংরক্ষণের গুরুত্ব – জীবজগত ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির ওপর দৃষ্টিপাত করতে হয় তা হল বনসংরক্ষণ। বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন (20.93%) ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (0.03%) -এর ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনসৃজন ও পরিচর্যা প্রয়োজন। অরণ্য উচ্ছেদের ফলে বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে খরা দেখা দিতে পারে, জলস্তর নেমে যায়, ভূমিক্ষয় হয়। পরিমিতিবোধ ও দূরদর্শিতার অভাবে, ভোগবাদী মানুষ ও চৌরাশিকারিদের দৌরাত্ম্যে বনকর্মীদের নজর এড়িয়ে বহুমূল্যবান কাঠ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ওষধিরূপে পাওয়া বহুমূল্যবান দুষ্প্রাপ্য গাছের প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হতে বসেছে। জ্বালানি, জাহাজ ও গৃহনির্মাণের কাঠ, ধুনো, লাক্ষা, গঁদ, কুইনাইন, কপূর, মোম, মধু প্রভৃতি সমস্ত কিছুই আমরা বনভূমি থেকে পাই। সুতরাং জীবের স্বার্থেই বনসংরক্ষণ আবশ্যক।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা – অর্থের লোভে বন্যপ্রাণী হত্যার ফলেও পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। বিবিধ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, উভচর, সরীসৃপ, কীটপতঙ্গ প্রভৃতির বিলুপ্তি ঘটছে। মানুষের খেয়াল চরিতার্থ করতে গিয়ে বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে। পরিবেশে কোনো প্রজাতির অবলুপ্তি ঘটলে অন্য প্রজাতির ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। তৃণভোজী প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটলে মাংসাশী প্রাণীদেরও অবলুপ্তি ঘটবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও পর্যটন শিল্পের উন্নতিকল্পে বিচরণশীল বন্যপ্রাণীর ভূমিকা রয়েছে। সমস্ত কথা মাথায় রেখেই বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ প্রয়োজন।
সংরক্ষণের সমস্যা – প্রতিদিন অরণ্য উচ্ছেদ, চোরাশিকারিদের উৎপাত, জীবনধারণের জন্য কিছু মানুষের বন্যপ্রাণী শিকার, মাংসের লোভে হরিণ-কচ্ছপ, চামড়ার জন্য বাঘ-কুমির, বহুমূল্য খঙ্গের জন্য গন্ডার ও দাঁতের জন্য হাতি নিধন ইত্যাদি কারণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে সংরক্ষণে।
বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য করণীয় ব্যবস্থা – নৈতিক, অর্থনৈতিক, নান্দনিক ও বৈজ্ঞানিক কারণে সংরক্ষণ প্রয়োজন। 1952 খ্রিস্টাব্দে World Wildlife Fund (WWF) গঠিত হয়েছে। ভারতে 1972 খ্রিস্টাব্দে বন ও বন্যপ্রাণীর জন্য আইন পাস হয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার জন্য ‘বনসংরক্ষণ সমিতি’ গঠিত হয়েছে। বসুন্ধরা সম্মেলনে সংরক্ষণের শপথ নেওয়া হয়েছে। তাতে ৪৩ রকমের বন্যপ্রাণী ও 18 রকমের পাখি ধরা নিষেধ। পর্যটন শিল্পের উন্নতির দ্বারা সরকারের আয় বৃদ্ধি পাবে। তা ছাড়া, আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে হবে।
উপসংহার – আধুনিক জীবনে ‘বৃক্ষচ্ছেদনের পাশাপাশি বৃক্ষ রোপণ’ প্রয়োজন। মানববিকাশের জন্য বন ও বন্যপ্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ এই স্লোগানকে বাস্তবায়িত করতে হবে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন