এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?
ছাত্রসমাজের সার্বিক তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ছাত্ররা ছিল এই আন্দোলনের ‘স্বনিয়োজিত প্রচারক’।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
ছাত্রসমাজের বিদেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন –
ছাত্রসমাজ বয়কট আন্দোলনে শামিল হয়ে বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্জনের শপথ নেয়। পাশাপাশি তারা বিদেশি কাগজ-কলমে না লেখারও শপথ গ্রহণ করে। দমনমূলক কার্লাইল সার্কুলারের বিরুদ্ধে ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর উদ্যোগে 1905 খ্রিস্টাব্দের 4 নভেম্বর কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি।
ছাত্রসমাজের পিকেটিং-এ যোগদান –
বিদেশি বস্ত্র, পানীয়, চিনি, লবণ ইত্যাদি বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে ছাত্রসমাজ পিকেটিং বা অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে। বিদেশি দ্রব্যে অগ্নি সংযোগও চলতে থাকে। তাদের সর্বাত্মক প্রচারে বয়কট আন্দোলনের ভীত শক্ত হয়।
ছাত্রসমাজের বিভিন্ন জনসভার আয়োজন –
কলকাতার রিপন কলেজ, হিন্দু হস্টেল, টাউন হল ইত্যাদি জায়গায় একের পর এক জনসমাবেশের আয়োজন করে বয়কটের শপথ গ্রহণ করে ছাত্রসমাজ। 7 আগস্ট কলকাতার টাউন হলে এক ঐতিহাসিক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল বার করে প্রায় পাঁচ হাজার ছাত্র এই জনসভায় যোগদান করে।
ছাত্রসমাজের স্বদেশি ভাবধারার প্রচার –
বয়কটের পাশাপাশি গঠনমূলক স্বদেশি ভাবধারার প্রচারেও ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা নেয়। স্বদেশি ভান্ডারগুলিতে তারা স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তাদের কলমেও জাতীয়তাবাদী ভাবধারার আদর্শ প্রচারিত হয়।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের মন্তব্য –
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুক্ত সংগ্রামে ছাত্রসমাজ বিপ্লবের ধ্বজা বহন করেছে সম্মুখসারিতে। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী ছিল?
ছাত্রসমাজ এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন, পিকেটিং, জনসভা আয়োজন ও স্বদেশি ভাবধারা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্ররা বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন করেছিল কেন?
ব্রিটিশ শাসনের প্রতীক হিসেবে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পণ্য বর্জনের মাধ্যমে তারা স্বদেশি আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিল।
পিকেটিং বলতে কী বোঝায়? ছাত্ররা কীভাবে এতে অংশ নেয়?
পিকেটিং হলো বিদেশি পণ্য বিক্রি রোধ করার জন্য দোকানের সামনে বিক্ষোভ করা। ছাত্ররা বিদেশি কাপড়, চিনি, লবণ ইত্যাদি বিক্রির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং কখনও কখনও বিদেশি পণ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়।
অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি কী?
1905 সালের 4 নভেম্বর কলকাতায় ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে এই সংগঠন গঠিত হয়, যা কার্লাইল সার্কুলারের (ছাত্রদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দমনমূলক আদেশ) বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কোন কোন স্থানে ছাত্ররা বড় সমাবেশ করেছিল?
কলকাতার রিপন কলেজ, হিন্দু হস্টেল, টাউন হল প্রভৃতি স্থানে ছাত্ররা বড় জনসভার আয়োজন করে এবং 7 আগস্ট টাউন হলে এক ঐতিহাসিক সমাবেশ হয়।
স্বদেশি ভাবধারা প্রচারে ছাত্রদের ভূমিকা কী ছিল?
ছাত্ররা স্বদেশি ভান্ডারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে, স্বদেশি পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করে এবং জাতীয়তাবাদী আদর্শ প্রচার করে।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রসমাজ সম্পর্কে কী বলেছেন?
তিনি বলেছেন যে ছাত্ররা এই আন্দোলনের “স্বনিয়োজিত প্রচারক” ছিল।
বিশ্বের অন্যান্য আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকার তুলনা করা যায় কি?
হ্যাঁ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রসমাজ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনেও ছাত্ররা সেই ঐতিহ্য বহন করেছে।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণের গুরুত্ব কী ছিল?
ছাত্রদের অংশগ্রহণ আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপান্তরিত করে এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
ছাত্রদের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের প্রভাব কী ছিল?
তাদের আন্দোলন ব্রিটিশ শাসকদের নীতির বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীকালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার ছাত্রসমাজ কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন