বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?
Contents Show

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?

নারী সমাজের ব্যাপক তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।

নারী সমাজের বিলাতি পণ্য বর্জন –

ভারতীয় নারী সমাজ বিলাতি পণ্য – বস্ত্র, প্রসাধন, রন্ধনসামগ্রী, শিক্ষাসামগ্রী এমনকি বিদেশি ওষুধপত্র পর্যন্ত পরিহার করে বঙ্গভঙ্গে শামিল হয়েছিলেন। বিদেশি পণ্য বর্জনের আন্দোলনে বহুক্ষেত্রেই পুরুষের চেয়ে নারীরা ছিলেন অগ্রণী।

নারী সমাজের রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে যোগদান –

সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বহু নারী সেদিন পুরুষের সমান তালে রাজনৈতিক সভা-সমিতি, মিটিং-মিছিল, পিকেটিং-এ অংশ নিয়ে দেশবাসীকে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। জলপাইগুড়ির অম্বুজা সুন্দরী দাশগুপ্ত, ময়মনসিংহের পুণ্যলতা গুপ্ত প্রমুখের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।

নারী সমাজের স্বদেশি প্রচার –

বয়কটের পরিপুরক রূপে স্বদেশি ভাবধারার সর্বাত্মক প্রচারে নারী সমাজ এগিয়ে আসে। চরকা ও খাদি-র প্রচলন, স্বদেশি মেলার আয়োজন ও স্বদেশি শিল্প প্রদর্শনীতে তারা অগ্রণী ছিলেন। লীলাবতী মিত্র, নির্মলা সরকার, হেমাঙ্গিনী দাস, সুবলা আচার্য প্রমুখ বঙ্গনারীর ভূমিকা এপ্রসঙ্গে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

নারী সমাজের রাখী বন্ধন ও অরন্ধনে যোগদান –

বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবিত দিনে অর্থাৎ 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর দলে দলে নারী কবিগুরুর আহ্বানে রাখী বন্ধন উৎসবে যোগ দিয়ে এবং রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর প্রস্তাবিত ‘অরন্ধন দিবস’ পালন করে তারা তাদের রাজনৈতিক সচেতনতারই সাক্ষ্য দেয়।

সৃজনশীলকর্মে নারী সমাজের অংশগ্রহণ –

মহিলা কবি, সাহিত্যিক, সংবাদপত্রের সম্পাদকেরাও সেদিন পিছিয়ে ছিলেন না। সরলাদেবীর ‘ভারতী’, সরযুবালা দত্তের ‘ভারত মহিলা’ এবং ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি ও বয়কটের আদর্শ প্রচারে শামিল হয়। স্বর্ণকুমারী দেবী, কামিনী রায়, কুমুদীনি বসু প্রমুখ মহিলা কবি-সাহিত্যিকদের সৃজনশীল প্রতিভা সেদিন বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা –

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তাদের আন্দোলনের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল –

আন্দোলনে যোগদানকারী নারীদের অধিকাংশই ছিলেন শহুরে এবং উচ্চবর্গের বাঙালি হিন্দু পরিবারের সন্তান। গ্রামের সাধারণ কৃষক বা মুসলিম পরিবারের তেমন কোনো নারী প্রত্যক্ষভাবে এই আন্দোলনে যোগ দেননি। মুসলিম পরিবারের খয়রুন্নেসা খাতুন ‘নবনূর’ নামক পত্রিকায় ‘স্বদেশানুরাগ’ নামক রচনা প্রকাশ করে স্বদেশি আন্দোলনের প্রসারে সচেষ্ট হলেও তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম মাত্র।

সর্বোপরি, নারীরা স্বাধীনভাবে এই অন্দোলন পরিচালনা করতে পারেননি, তাদের আন্দোলনসূচি ছিল পূর্ব নির্দিষ্ট ও পুরুষ নিয়ন্ত্রিত।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের মূল্যায়ন –

বস্তুতপক্ষে নারী সমাজের রাজনৈতিক চেতনা তখন যে স্তরে ছিল, তাতে তাদের সাফল্য সীমাবদ্ধ হতে বাধ্য। তথাপি পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন নারী সমাজের রাজনৈতিক চেতনাকে নিঃসন্দেহে উচ্চস্তরে উন্নীত করেছিল।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের অংশগ্রহণের প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলো কী ছিল?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের অংশগ্রহণের প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলো ছিল –
1. শ্রেণি ও ধর্মগত সীমাবদ্ধতা – অধিকাংশ নারী শহুরে ও উচ্চবর্ণের হিন্দু পরিবার থেকে এসেছিলেন; গ্রামীণ ও মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ কম ছিল।
2. পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত আন্দোলন – নারীদের আন্দোলন পুরুষদের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হতো, স্বাধীনভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ কম ছিল।
3. সীমিত রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা – নারীদের রাজনৈতিক সচেতনতা তখনও প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল, তাই তাদের ভূমিকা কিছুটা সীমিত ছিল।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়?

নারীসমাজের অংশগ্রহণ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ –
1. এটি নারীদের রাজনৈতিক চেতনা বাড়িয়েছিল।
2. সমাজে নারীর ভূমিকা শুধু গৃহস্থালির মধ্যে সীমিত নয়—এটি প্রমাণ করেছিল।
3. যদিও অংশগ্রহণ সীমিত ছিল, তবুও এটি পরবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণের পথ প্রশস্ত করেছিল।

কোন কোন নারী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে?

কিছু উল্লেখযোগ্য নারী নেতৃত্বদানকারী ছিলেন –
1. অম্বুজা সুন্দরী দাশগুপ্ত (জলপাইগুড়ি),
2. পুণ্যলতা গুপ্ত (ময়মনসিংহ),
3. লীলাবতী মিত্রনির্মলা সরকারহেমাঙ্গিনী দাসসুবলা আচার্য (স্বদেশি প্রচারে),
4. খয়রুন্নেসা খাতুন (মুসলিম নারী, ‘নবনূর’ পত্রিকায় লেখার মাধ্যমে)।

নারীদের স্বদেশি আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান কী ছিল?

নারীদের স্বদেশি আন্দোলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল –
1. বিলাতি পণ্য বর্জন – নারীরা ঘরে ঘরে বিদেশি জিনিস বর্জন করে আন্দোলনকে গণমুখী করেছিলেন।
3. সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ – রাখী বন্ধন, অরন্ধন পালন, স্বদেশি গান ও সাহিত্যের মাধ্যমে জনমত গঠন।
3. শিক্ষা ও সচেতনতা – নারী-সম্পাদিত পত্রিকা ও লেখালেখির মাধ্যমে স্বদেশি চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে রাখী বন্ধন ও অরন্ধনের মাধ্যমে নারীরা কী বার্তা দিয়েছিলেন?

1. 16 অক্টোবর 1905-এ বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হওয়ার দিনটিকে শোকদিবস হিসেবে পালন করা হয়।
2. রাখী বন্ধন – হিন্দু-মুসলিম ঐক্য রক্ষার্থে নারীরা একে অপরের হাতে রাখী বেঁধে দেন।
3. অরন্ধন (রান্না বন্ধ) – সেদিন বাড়িতে চুলা জ্বালানো হয়নি, যা ব্রিটিশ বিরোধী প্রতিবাদের প্রতীক ছিল।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ইতিহাসে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ কারণ –
1. এটি ছিল ভারতীয় নারীদের প্রথম গণ-রাজনৈতিক আন্দোলন
2. নারীরা প্রমাণ করেছিলেন যে তারা শুধু গৃহিণী নন, জাতীয় আন্দোলনের অগ্রসৈনিকও হতে পারেন।
3. এই আন্দোলন ভারতের নারী আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অবদান আলোচনা করো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (1953 খ্রিস্টাব্দ) কেন গঠিত হয়েছিল? ভারতের রাজ্য পুনর্গঠন এর ভিত্তিগুলি লেখো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা