এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।
বিংশ শতাব্দীর শ্রমিক আন্দোলনের নতুন ইতিহাস সূচিত হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে। স্বদেশি আন্দোলনজাত রাজনৈতিক আদর্শ, কল-কারখানাগুলিতে ইউরোপীয় মালিকদের বৈষম্যমূলক শ্রমনীতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইতিহাসের এই পর্বে শ্রমিকশ্রেণিকে আন্দোলনমুখী করে তুলেছিল।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকদের অংশ-গ্রহণ
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ –
ইতিহাসের এই পর্বে শ্রমিক আন্দোলন ছিল মূলত কলকাতা কেন্দ্রিক। 1905 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে হাওড়ায় বার্ন কোম্পানির 147 জন শ্রমিক কর্মস্থল ত্যাগ করে বয়কট আন্দোলনে শামিল হয়। কলকাতা ট্রাম কোম্পানির শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে এ বছরের অক্টোবরে ধর্মঘট করলে অপূর্ব কুমার ঘোষ ও অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তার মীমাংসা সূত্র বের হয়। একই সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের 950 জন গার্ড বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। 1905 খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের শ্রমিকরা “Railway Mens Union” গঠন করে। বজবজের ক্লাইভজুট মিলের শ্রমিকরাও বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে শামিল হয়। একই সময়ে কলকাতা পুরসভার 2000 কুলি ও মেথরও আন্দোলনে যোগ দেয়।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে দক্ষিণ ভারতের শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ –
তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে বাড়তি মজুরীর দাবি জানিয়ে ইংরেজ মালিকাধীন বস্ত্রকারখানায় ধর্মঘট শুরু হয়। ধর্মঘটিদের সমর্থনে প্রচার চালান সুব্রহ্মন্য শিব ও চিদাম্বরম পিল্লাই। এঁদের দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হলে শ্রমিক আন্দোলন আরও ব্যাপক ও সর্বাত্মক হয়ে ওঠে।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে পাঞ্জাবের শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ –
1907 খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডির রেলওয়ে ওয়ার্কশপে শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হয়। ‘মারাঠা’, ‘কেশরী’ পত্রিকাদ্বয়ের সম্পাদক হিসেবে সরকার বিরোধী লেখার দায়ে বালগঙ্গাধর তিলক রাজরোষে পড়েন ও গ্রেপ্তার হন। বিচারে তিলককে ছয় বছরের জন্য দ্বীপান্তরিত করা হলে তার প্রতিবাদে বোম্বাইয়ের বস্ত্র কারখানা ও রেলওয়ে ওয়ার্কশপের শ্রমিকরা টানা ছয় দিন স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালন করে।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির মন্তব্য –
1905 খ্রিস্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ছিল ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের প্রকৃত সূচনাকাল। এইসময় থেকেই শ্রমিক শ্রেণি সংঘবদ্ধ সামাজিক শ্রেণিরূপে তাদের গুরুত্বের পরিচয় দেয় এবং ক্রমে জাতীয় আন্দোলনের মূলস্রোতের অংশীদার হয়ে ওঠে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকরা কেন অংশ নিয়েছিল?
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকরা মূলত তিনটি কারণে আন্দোলনে যোগ দেয় –
1. স্বদেশি আদর্শের প্রভাব – বিদেশি পণ্য বর্জনের ডাকে উদ্বুদ্ধ হয়ে।
2. অর্থনৈতিক দাবি – মজুরি বৃদ্ধি ও ইউরোপীয় মালিকদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
3. রাজনৈতিক সচেতনতা – জাতীয়তাবাদী নেতাদের প্রভাবে শ্রমিকরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের প্রধান ঘটনাগুলো কী ছিল?
1. হাওড়ার বার্ন কোম্পানির 147 জন শ্রমিকের কাজ ছেড়ে দেওয়া (সেপ্টেম্বর 1905 খ্রিস্টাব্দ)।
2. কলকাতা ট্রাম কোম্পানির ধর্মঘট (অক্টোবর 1905 খ্রিস্টাব্দ), যা অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও অপূর্ব ঘোষের মধ্যস্থতায় মিটেছিল।
3. ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ের 950 জন গার্ডের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলন ও “Railway Mens Union” গঠন।
4. বজবজের ক্লাইভ জুট মিল ও কলকাতা পুরসভার কুলি-মেথরদের ধর্মঘট।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে দক্ষিণ ভারত ও পাঞ্জাবে শ্রমিক আন্দোলন কীভাবে প্রকাশ পেয়েছিল?
1. তামিলনাড়ু – তুতিকোরিনের বস্ত্রশ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘট করে। নেতা চিদাম্বরম পিল্লাই ও সুব্রহ্মন্য শিব -এর গ্রেপ্তারে আন্দোলন তীব্র হয়।
2. পাঞ্জাব – 1907 সালে রাওয়ালপিন্ডি রেলওয়ে ওয়ার্কশপে ধর্মঘট। বালগঙ্গাধর তিলক-এর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বোম্বাইয়ের শ্রমিকরা 6 দিন ধর্মঘট করে।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনই প্রথমবারের মতো শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তারা শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, জাতীয় আন্দোলনেরও অংশ হয়ে ওঠে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে শ্রমিকদের ভূমিকাকে প্রসারিত করে।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের ফলে শ্রমিক আন্দোলনের কী পরিবর্তন ঘটে?
1. শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের দিকে অগ্রসর হয় (যেমন: Railway Mens Union)।
2. ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
3. জাতীয় নেতারা (তিলক, অশ্বিনীকুমার প্রমুখ) শ্রমিকদের সাথে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে গণআন্দোলনে রূপ দেন।
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সীমাবদ্ধতাগুলো কী ছিল?
বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সীমাবদ্ধতাগুলো ছিল –
1. অধিকাংশ আন্দোলন ছিল কলকাতাকেন্দ্রিক; গ্রামীণ শ্রমিকদের সম্পৃক্ততা কম ছিল।
2. ধর্মঘটগুলোর পিছনে অর্থনৈতিক দাবি প্রাধান্য পেলেও রাজনৈতিক দিকটি দুর্বল ছিল।
3. দীর্ঘমেয়াদি সংগঠনের অভাব ছিল।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণির অংশগ্রহণ সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন