ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব - প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব

“মোদের চোখে বিশ্ববাসীর
স্বপ্ন দেখা হোক সফল।”

-নজরুল ইসলাম

ভূমিকা – ছাত্ররা হল মানবজাতিরূপ উদ্যানে ফুলের কুঁড়ির মতো। স্বপ্ন দেখার শুরু ছাত্রজীবনেই। ছাত্রদের শৈশবস্বপ্নের মধ্যে আছে নির্ভেজাল আন্তরিকতা, নিষ্পাপ আকাঙ্ক্ষা আর আকাশছোঁয়া সাধ। ছাত্রদের সেই স্বপ্নকে সার্থক করার পশ্চাতে রয়েছে প্রযুক্তিবিদ্যার একটি বড়ো অবদান।

প্রযুক্তিবিদ্যা কাকে বলে – পাশ্চাত্য লেখক ব্রনোস্কি (Bronowski) বলেছেন, “Technology is the sum total of all the different techinques by which man changes his environment.” প্রযুক্তিবিদ্যা বলতে আমরা বিভিন্ন শিল্পে বিজ্ঞানের নীতিগুলির ব্যাবহারিক প্রয়োগ সংক্রান্ত বিদ্যা বুঝে থাকি। তাই স্বভাবতই বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ্যারও অগ্রগতি ঘটেছে। আবার আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে বিজ্ঞানেরও নানা ক্ষেত্রে নতুন নতুন আবিষ্কার আমাদের জ্ঞানভাণ্ডারকে নিয়ত সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা – বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ্যার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। কারণ প্রযুক্তিবিদ্যা বিজ্ঞানের একটি শাখা। আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা প্রয়োগ করে বিজ্ঞানের সমস্ত শাখার অগ্রগতি ঘটানো সম্ভব হয়েছে। আবার বিভিন্ন গবেষণাসংস্থা প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছে। বিজ্ঞান সর্বজনীন কিন্তু প্রযুক্তিবিদ্যা সর্বজনীন নয়। বিজ্ঞানকে বিচার করা হয় সামাজিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে। তবে আমাদের দেশ এখন প্রযুক্তিবিজ্ঞানে স্বয়ংসম্পূর্ণ।

ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব – ছাত্রদের শিক্ষাগ্রহণে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছে। প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষা খুবই শ্রমসাপেক্ষ। বর্তমান যুগে ছাত্ররা প্রযুক্তি ছাড়া শিক্ষার কথা ভাবতেই পারে না। কম্পিউটার, মোবাইল, ক্যালকুলেটর – এসব বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার আবশ্যিক উপকরণ। মুহূর্তের মধ্যেই তারা মেধা বা শ্রমের অপেক্ষা না করে, অপর্যাপ্ত সময় ব্যয় না করে বড়ো বড়ো অঙ্কের সমাধান করে ফ্যালে ক্যালকুলেটরের মাধ্যমে। বর্তমানে ছাত্রজীবনের শুরুতেই একজন ছাত্র কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে। শ্রেণিকক্ষের পাঠদানে তারা অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। সর্বক্ষেত্রেই তারা প্রযুক্তিবিদ্যার আকর্ষণ ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষা, ব্যাবসাবাণিজ্য, গোটা বিশ্বের কর্মকাণ্ড প্রযুক্তির বদান্যতায় অব্যাহত ছিল। বর্তমানে একজন ছাত্র শৈশব থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়। এর জন্য অনেকাংশে অভিভাবকরাই দায়ী। আগে একজন মা তাঁর শিশুকে রূপকথার গল্প শুনিয়ে খাওয়াতেন; কিন্তু বর্তমানে একজন মা দূরদর্শনের কার্টুন দেখিয়ে বা মোবাইলের গান শুনিয়ে তাঁর শিশুর মন ভোলান। এভাবে শিশুর শিশুসুলভ মন প্রযুক্তির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। জন্মলগ্ন থেকে শিশু প্রাকৃতিক শক্তি ও সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পূর্বেই প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ফলে ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই ছাত্ররা প্রযুক্তি ছাড়া এক পাও হাঁটতে পারে না। কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রযুক্তিই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে বিনোদন দুনিয়াকে। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের গতানুগতিক শিক্ষালাভের পর তারা শিক্ষার বৃহত্তর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে পড়ে। সাধারণ শিক্ষাগ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে।

উপসংহার – শিক্ষাকে কোনো সংজ্ঞার মধ্যে ধরা যায় না। সাধারণ মানুষ ‘শিক্ষা’ বলতে বোঝে ‘লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়া।’ সাধারণ মানুষের এই কথার মধ্যে শিক্ষাবিজ্ঞানের কোনো দার্শনিক তত্ত্ব নেই বা কোনোও মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও নেই। কিন্তু বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় জ্ঞানপিপাসা মেটানোর ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। বর্তমান যুগের এই প্রযুক্তিগত শিক্ষা ছাত্রদের প্রকৃত শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করে না। প্রযুক্তির প্রভাবে ছাত্ররা প্রয়োজনের বাইরে তাদের মেধা প্রয়োগ করে না। প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভাবে প্রভাবিত ছাত্রদের মানসিক বিকাশের পক্ষে প্রযুক্তিবিদ্যা তাই খুবই ক্ষতিকারক। তাই পরিশেষে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলা যায়, “যতটুকু অত্যাবশ্যক তাহার মধ্যে সীমাবদ্ধ হইয়া থাকা মানবজীবনের ধর্ম নহে। আমাদের দেহ সাড়ে তিন হাত, তাই বলিয়া আমরা সাড়ে তিন হাত পরিমাণবিশিষ্ট গৃহ নির্মাণ করি না। স্বাধীন বিচরণের জন্য অনেক পরিধিবিশিষ্ট গৃহ নির্মাণ করে।”


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী - সত্যেন্দ্রনাথ বসু - প্রবন্ধ রচনা

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু – প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন - প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন – প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ - প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু – প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন – প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ – প্রবন্ধ রচনা

করোনা মহামারিকালে অনলাইন ক্লাস – ভালো ও মন্দ – প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব – প্রবন্ধ রচনা