আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সমাজজীবনে চলচ্চিত্র‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

সমাজজীবনে চলচ্চিত্র
ভূমিকা – সাহিত্যের মতো চলচ্চিত্রও সমাজজীবনের দর্পণ। চলচ্চিত্রকে বলা যায় সমাজজীবনের জীবন্ত দলিল। সমাজজীবন চলচ্চিত্রে বিম্বিত হয়ে চিরকালীন সময়ের সাক্ষী হয়ে যায়। সমাজের রীতিনীতি, আচার-আঙ্গিক চলচ্চিত্রে রূপলাভ করে সেই সময়কে মূর্ত করে তোলে। কোনো সময়কে জানার জন্য বিস্তারিত আলোচনার জন্য অবশ্যই সেই সময়ের নির্মিত চলচ্চিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ধারা – ভারতীয় চলচ্চিত্র একশো বছরের সুদীর্ঘ সময় অতিক্রম করেছে; আর এই দীর্ঘ সময়ের ধারা বেয়ে নির্বাক থেকে সবাক চলচ্চিত্রের রূপায়ণ কিংবা সাদা-কালো থেকে রঙিন পর্দার রূপান্তর কিংবা ট্রলি ক্যামেরা থেকে হাল আমলের থ্রিডি উপস্থাপন সব কিছুর মধ্য দিয়ে একশো বছরের সময় ইতিহাস শুধু নয় সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা বহু বিষয়ের বিন্যাস বর্তমান।
‘রাজা হরিশচন্দ্র’ থেকে শুরু করে নানান সময়ের চলচ্চিত্রে সমাজজীবন, পারিবারিক জীবন, জটিল মনস্তত্ত্ব, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিভিন্ন সময়ের সামাজিক অস্থিরতা সবকিছুই চিত্রিত হয়েছে। ‘পথের দাবী’, ‘ঝড়’, ‘ফেরারি ফৌজ’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রের মধ্যে পরাধীন ভারতের যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে। চলচ্চিত্র অত্যন্ত শক্তিশালী গণমাধ্যম। আর শুধুমাত্র সেই কারণেই সত্যজিৎ রায় নির্মিত ‘পথের পাঁচালী’ বিশ্বের দরবারে ভারতের অবস্থানকে করেছে সুচিহ্নিত। গৌতম ঘোষের ‘অন্তর্জলি যাত্রা’-র মধ্য দিয়ে সমাজের অন্যায় কুপ্রথা, কিংবা ‘অগ্রদানী’ চলচ্চিত্রে দেখানো কুসংস্কার পরবর্তী সময়ের সমাজে চিরস্থায়ী হতে পারে না।
সমাজজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব – সমাজজীবনে চলচ্চিত্রের প্রভাব অপরিসীম বলেই অনেক ঘটনা চলচ্চিত্রায়িত হওয়ার পর সমাজগঠন, সামাজিক বিপ্লব, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ইত্যাদি নানা রূপ ধারণ করে। ‘সীমাবদ্ধ’, ‘মহানগর’, ‘জনঅরণ্য’ ‘গণশত্রু’ কিংবা ‘রং দে বাসন্তী’, ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘তারে জমিন পর’ থেকে শুরু করে একেবারে বর্তমান সময়ের ‘রামধনু’ প্রভৃতি বাংলা এবং প্রাদেশিক ভাষার চলচ্চিত্রে ডিসলেক্সিয়া, অটিজম, নকশাল আন্দোলন ও কেরিয়ারসর্বস্ব আত্মকেন্দ্রিক জীবনের ছবি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, আমাদের অবস্থান ঠিক কোথায়। আর মূলত এইসব চলচ্চিত্রের কারণেই সমাজের প্রচলিত উদাসীনতা বদলে যায় সহানুভূতিতে, আপাত উন্নাসিকতা পরিবর্তিত হয়ে যায় দায়বদ্ধতায়। একদেশ, একজাতি, দেশপ্রেম – এই বোধে জাগরিত হয় সমাজজীবন।
শুধু ভারতবর্ষেই নয়, বিশ্বের ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায় যে, মহান চলচ্চিত্রকার চার্লি চ্যাপলিন, আলফ্রেড হিচকক থেকে শুরু করে বার্গম্যান প্রমুখ স্রষ্টার নানান সৃষ্টির দ্বারা সমাজজীবন উজ্জীবিত হয়েছে। চ্যাপলিনের ‘মডার্ন টাইম’, ‘গোল্ড রাশ’ প্রমুখ চলচ্চিত্র সময়ের কত আগে নির্মিত হয়েও বর্তমান সময়ের ভোগবাদী, আত্মকেন্দ্রিকতার ছবি প্রকাশ করেছে তা আমাদের বিস্মিত করে।
উপসংহার – সমাজজীবনে চলচ্চিত্রের অপরিসীম প্রভাবের কারণেই বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অসবর্ণ বিবাহ, অসমবয়সী সম্পর্ক, বিপরীত অবস্থানগত সম্বন্ধ – এই সমস্ত সামাজিক বিস্ময়গুলি সর্বজনমান্যতা লাভ করেছে। সর্বোপরি বলা যায়, চলচ্চিত্রের অসীম প্রভাবের কারণেই বর্তমান সমাজজীবনে সোচ্চার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে – “আমাকে আমার মতো থাকতে দাও।”
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘সমাজজীবনে চলচ্চিত্র‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন