এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের নবম অধ্যায়, ‘ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)’ অধ্যায়ের কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

মেসোপটেমিয়া সভ্যতা সম্পর্কে কী জানো?

অথবা, মেসোপটেমিয়া সভ্যতার অবদান কী?

খ্রিস্টপূর্ব 4000 অব্দে মিশরের টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর সঙ্গমস্থলে যে-মানবসভ্যতা গড়ে উঠেছিল তাকে বলা হয় মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। মেসোপটেমিয়া শব্দটির অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী দেশ। এখানেই গড়ে উঠেছিল সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয় প্রভৃতি সভ্যতা। বিশ্ব ইতিহাসে এই সভ্যতার দান প্রচুর। এখানেই সৃষ্টি হয়েছিল কিউনিফর্ম লিপি। প্রথম কাগজের ব্যবহার, বাটখারা ও কাঠের চাকার ব্যবহার তারাই শিখেছিল। ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান ছিল পৃথিবীর আশ্চর্যতম সৃষ্টি। বর্তমানে ইরাক দেশটি প্রাচীনকালে মেসোপটেমিয়া নামে পরিচিত ছিল।

প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে মেসোপটেমিয়া সভ্যতা কি অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে একটি উন্নত ধরনের সভ্যতা ছিল বলে তোমার মনে হয়?

যে-কোনো নদীমাতৃক সভ্যতাগুলির মতো এই সভ্যতা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর সঙ্গমস্থলে গড়ে উঠেছিল। এর দুটি অংশ ছিল – সুমেরীয় অংশ ও ব্যাবিলনীয় অংশ। এই সভ্যতায় কিউনিফর্ম লিপি -এর আবিষ্কার হয়। এই যুগে গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং অন্যান্য বিষয়ের চর্চা হত। প্রথম লিখিত আইন রচিত হয়েছিল ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির সময়ে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মেসোপটেমিয়া সভ্যতাকে অন্যান্য সভ্যতার চেয়ে উন্নত করে তুলেছিল।

হিমালয় পর্বতের গিরিপথগুলির সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার সম্পর্ক কী?

অথবা, হিমালয় পর্বতমালা কীভাবে বাইরের দেশের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশের সম্পর্ক স্থাপন করেছিল?

ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে হিমালয় পর্বতমালা অবস্থিত। নানা কারণে হিমালয় পর্বতের গিরিপথগুলির সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যেমন –

  • খাইবার, বোলান, গোমাল প্রভৃতি গিরিপথগুলির মাধ্যমে পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া অপরদিকে চিন ও তিব্বতের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় ছিল।
  • এরই সঙ্গে বিদেশি রাজনৈতিক শক্তিগুলি গিরিপথ ব্যবহার করে ভারতীয় উপমহাদেশে এসে নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।
  • ব্যাবসাবাণিজ্য, শিল্প ও সংস্কৃতির আদানপ্রদান এই পথ-গুলি দিয়েই ঘটেছিল।

পাহাড়ঘেরা গ্রিসের ছোটো ছোটো রাষ্ট্রগুলিকে কী বলা হত? সেগুলির মধ্যে বিখ্যাত ছিল কোন্ দুটি? তাদের মধ্যে যুদ্ধের বিবরণ কোন্ ঐতিহাসিকের রচনায় পাওয়া যায়?

পাহাড় ঘেরা গ্রিসের ছোটো ছোটো রাষ্ট্রগুলিকে বলা হত পলিস বা নগর-রাষ্ট্র। পলিসগুলির মধ্যে বিখ্যাত ছিল যে দুটি পলিস সেগুলি হল – এথেন্স ও স্পার্টা। গ্রিক ঐতিহাসিক থুকিডাইডিসের রচনায় এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে যুদ্ধের বিবরণ পাওয়া যায়।

প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার মানচিত্র
প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার মানচিত্র

চীনের সভ্যতা কোন্ দুটি নদীর তীরে অবস্থিত? চীনের শাসকরা বাইরের আক্রমণ ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন?

চিনের সভ্যতা হোয়াংহো ও ইয়াংসিকিয়াং নদীর তীরে অবস্থিত। চিনের শাসকরা বাইরের আক্রমণ ঠেকাতে প্রাচীর দিয়ে সাম্রাজ্য ঘিরে রেখেছিলেন। সেই বিরাট প্রাচীরগুলিকে একসঙ্গে চিনের প্রাচীর বলা হয়।

চিনের প্রাচীর
চিনের প্রাচীর

‘হিন্দু’ ও ‘ইন্ডিয়া’ নামটি কীভাবে এসেছে?

অথবা, হিদুষ কী?

পারসিকরা গন্ধার অঞ্চল ছাড়াও ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য অংশে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তাদের একটি লেখতে ‘হিদুষ’ শব্দটি পাওয়া যায়। সিন্ধু নদ থেকে এর উৎপত্তি হয়।

  • পারসিকরা ‘স’ কে ‘হ’ বলে উচ্চারণ করত। তাই পারসিকরাই হিদুষ শব্দের উদ্গাতা। এই হিদুষ থেকেই ‘হিন্দু’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
  • গ্রিকরা ‘হ’ -কে উচারণ করত ‘ই’ -রূপে। সিন্ধু শব্দটি গ্রিকদের কাছে পরিবর্তিত হয়ে হয় ইন্দুস। ইন্দুস থেকে পরবর্তী সময়ে উৎপত্তি হয় ‘ইন্ডিয়া’ -র।

গ্রিকদের সঙ্গে ব্যাকট্রীয়-গ্রিকদের সম্পর্ক কী ছিল?

একসময়ে গ্রিক রাজারা ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে ব্যাকট্রিয়া অধিকার করে সেখানে বসবাস করতে শুরু করে। পরবর্তীকালে গ্রিক রাজাদের অনেকেই ব্যাকট্রিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। ব্যাকট্রিয়ার গ্রিক রাজাদের বলা হত যবন। এই গ্রিক শাসকদের বলা হত ব্যাকট্রীয়-গ্রিক বা ইন্দো-গ্রিক।

দরায়বৌষ সম্পর্কে কী জানো?

অথবা, ভারতীয় উপমহাদেশ ও পারস্যের যোগাযোগের বিষয়টি আলোচনা করো।

দরায়বৌষ বা দরায়ুষ ছিলেন পারস্যের হখামনীয় একজন শাসক। তিনি খ্রিস্টপূর্ব 522-486 অব্দ পর্যন্ত পারস্যের শাসক ছিলেন। তিনি গন্ধার অভিযান করে তা দখল করেন। খুব সম্ভবত ভারতবর্ষের ইন্দুস বা নিম্ন সিন্ধু অঞ্চলে তাঁর কর্তৃত্ব গড়ে উঠেছিল। তাঁর শিলালেখতে ‘হিদুষ’ কথাটির উল্লেখ আছে, যার উৎপত্তি হয়েছে সিন্ধুনদ থেকে।

হেরোডোটাসের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, ইন্দুস বা ইন্ডিয়া ছিল পারস্যের একটি স্যাট্রাপি বা প্রদেশ। আমরা দেখেছি ভারতে পারসিক শাসনের কিছু প্রভাব, যেমন – শক ও কুষাণ রাজারা পারস্যের অনুকরণে স্যাট্রপি বা প্রদেশ গড়ে তোলেন। এগুলির শাসকদের বলা হত স্যাট্রাপ বা ক্ষত্রপ।

মিনান্দার সম্পর্কে কী জানো?

মিনান্দার ছিলেন একজন ইন্দো-গ্রিক শাসক। ইন্দো-গ্রিক শাসকদের (খ্রিস্টপূর্ব 165/155-130 অব্দ) মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। তিনি প্রাচীন গন্ধার ও কান্দাহার অঞ্চল শাসন করতেন এবং ব্যাকট্রিয়ার কিছু অংশ এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে তাঁর শাসন চালু ছিল। তাঁর রাজধানী ছিল সাকল বা বর্তমান পাকিস্তানের শিয়ালকোট। তিনি বৌদ্ধভিক্ষু নাগসেনের কাছে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন। নাগসেন মিলিন্দপঞহো নামে গ্রন্থটি রচনা করেন।

জান কি? – ইন্দো-গ্রিক রাজাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন প্রথম মিনান্দার। তা ছাড়া দ্বিতীয় মিনান্দার ছিলেন ইন্দো-গ্রিক রাজাদের মধ্যে অন্যতম।

ভারতে সেক বা শক শাসনের পরিচয় দাও।

যাযাবর গোষ্ঠীর প্রধান ছিল স্কাইথীয়রা। এরাই উপমহাদেশে শক নামে পরিচিত ছিল। যাযাবর শকগণ ব্যাকট্রিয়া দখল করে খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের মাঝামাঝি এবং পরে ভারতের অংশ বিশেষে রাজত্ব শুরু করে। শক রাজারা ক্ষত্রপ ও মহাক্ষত্রপ নামে পরিচিত ছিলেন। এদের দুটি বংশ ছিল – একটি হল তক্ষশীলা ও মথুরার ক্ষত্রপ এবং অপর শাখাটি ছিল সৌরাষ্ট্রের পশ্চিমি ক্ষত্রপ। ভারতে প্রথম শক্তিশালী শক রাজা ছিলেন মোয়েস বা মোগ। তাঁর পরবর্তী শাসকগণ ছিলেন আজেস। পশ্চিমি ক্ষত্রপদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন নহপান। উজ্জয়িনীর ক্ষত্রপদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন রুদ্রদামন।

পল্লবরাজ গন্ডোফারনেস সম্পর্কে কী জানো?

গন্ডোফারনেস ছিলেন একজন পহ্লব রাজা। তিনি আনুমানিক 20 অথবা 21 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ শকদের হারিয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে রাজত্ব শুরু করেন। গন্ধার ও পাঞ্জাবের অংশবিশেষ এবং সিন্ধু প্রদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে তাঁর সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল। তিনি নিজের মুদ্রায় রাজাধিরাজ উপাধি ব্যবহার করতেন।

তাঁর রাজদরবারে সেন্ট থমাস নামে এক খ্রিস্টান ধর্মযাজক উপস্থিত হয়েছিলেন। জানা যায় গন্ডোফারনেস-সহ তাঁর পরিবার খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর ভারতে পহ্লব সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়।

মৌর্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে অন্যান্য সাম্রাজ্যের দূত বিনিময় ব্যবস্থা কেমন ছিল? বর্তমানে কি এই ব্যবস্থা আছে?

প্রাচীন যুগে অন্যান্য সাম্রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল প্রধানত দূত বিনিময় ব্যবস্থা। প্রধানত মৌর্য রাজাদের সময়ে এই ব্যবস্থা বেশি চালু ছিল। সেলিউকাসের দূত মেগাস্থিনিস, ডায়ামাকাস মৌর্য দরবারে গিয়েছিলেন। টলেমি দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন ডায়োনিসিয়াসকে। বিন্দুসারের সময়ে সিরিয়ার সঙ্গে দূতের মাধ্যমে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য সিরিয়া, মিশর, ম্যাসিডন, সিংহল প্রভৃতি দেশে দূত পাঠিয়েছিলেন।

বর্তমানে প্রতিটি দেশেই অন্যান্য দেশের দূতাবাস আছে। দূতাবাসে নিযুক্ত দূতের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

রেশমপথ কী?

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব 200 থেকে খ্রিস্টীয় 300 অব্দের মধ্যে সেই বাণিজ্যিক যোগাযোগ সবথেকে বেড়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের লেনদেন চলত। জলপথ ও স্থলপথে এই যোগাযোগ হত। রোম সাম্রাজ্য ও ভূমধ্যসাগরের পূর্বদিকে চিন ও ভারতের নানা জিনিসের চাহিদা ছিল। বাণিজ্যিক দ্রব্যের মধ্যে সবথেকে বেশি জনপ্রিয় ছিল চিনের রেশম। এই রেশম তাকলামাকান মরুভূমি পার হয়ে দুটি পথে নিয়ে আসা হত। পথ দুটি কাশগড়ে গিয়ে মিশত। সেখান থেকে বিভিন্ন পথ ধরে রেশম পৌঁছোত ভূমধ্যসাগরের পূর্বদিকের এলাকায়। এই পথ রেশমপথ নামে পরিচিত হয়।

পেরিপ্লাস অব দ্য ইরিথ্রিয়ান সি কী?

‘পেরিপ্লাস অব দ্য ইরিথ্রিয়ান সি’ হল গ্রিক ভাষায় লেখা একটি বই। এর বাংলা অর্থ ‘ইরিথ্রিয়ান সাগরে ভ্রমণ’। প্রাচীন গ্রিক ও রোমান ভূগোলে ইরিথ্রিয়ান সাগর বলতে ভারত মহাসাগর, লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগর বোঝাত। সম্ভবত খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে এই বইটি লিখেছিলেন একজন গ্রিক যিনি মিশরে থাকতেন। তবে বইটির প্রকৃত লেখক কে তা সঠিকভাবে জানা যায় না। এই বই থেকে মৌর্য পরবর্তী যুগের ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।

তাম্রলিপ্ত কী? এ সম্পর্কে তুমি কী জানো?

তাম্রলিপ্ত ছিল প্রাচীন বাংলার একটি পরিচিত নদীবন্দর। প্রাচীন ভারতের বিভিন্ন সাহিত্য এবং বিদেশি লেখকদের লেখায় এর নাম উল্লেখ আছে। গ্রিকরা তাম্রলিপ্তকে তামালিতেস বলত। সুয়ান জাং ও ফাসিয়ান এই বন্দর সম্পর্কে লিখেছেন। মৌর্য যুগ থেকে শুরু করে পাল ও সেন যুগে এই বন্দরটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখানে বড় পরিসরে বিদেশি বাণিজ্য হত। কিন্তু খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকের পর থেকে এই বন্দরটি নানা কারণে তার গৌরব হারায়।

তাম্রলিপ্ত – টীকা লেখো।

তাম্রলিপ্ত ছিল প্রাচীন বাংলার একটি নদীবন্দর এবং জনপদ। বর্তমানে এটি তমলুক নামে পরিচিত, যা পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত। প্রাচীন ভারতের ঐতিহাসিক গ্রন্থে এর নাম উল্লেখ পাওয়া যায়। মৌর্য যুগে এই বন্দরের অনেক উন্নতি হয়েছিল এবং এখান দিয়ে বহির্বাণিজ্য চলত। তাম্রলিপ্ত থেকে তামা ব্রহ্মদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় রফতানি করা হত।

গুপ্ত যুগে তাম্রলিপ্ত ছিল একটি বড় বাণিজ্য কেন্দ্র। কথাসরিতসাগর গ্রন্থে এর নাম পাওয়া যায়। পাল ও সেন যুগেও এটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল।

ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে গ্রিক প্রভাব সম্পর্কে কী জানো?

গ্রিকরা ভারত আক্রমণ করলে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে তাদের প্রভাব পড়েছিল। যেমন –

  • ভারতীয় সংস্কৃতি – উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রিকরা যে শহরগুলো তৈরি করেছিল, সেখানে তারা বাস করত। পরে তারা ভারতীয় জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশে গিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করে।
  • মুদ্রা বানানোর কৌশল – ভারতীয়রা গ্রিকদের কাছ থেকে মুদ্রা বানানোর কৌশল শিখেছিল। ইন্দো-গ্রিক শাসকরা ভারতে সোনার মুদ্রা চালু করেছিলেন।
  • শিল্পের প্রভাব – গ্রিক প্রভাবের কারণে ভারতে গন্ধার ভাস্কর্য শিল্পের জন্ম হয়। ভগবান বুদ্ধের মূর্তিগুলি তার প্রমাণ।

মৌর্য শিল্পরীতিতে কীরূপ পারসিক প্রভাব লক্ষ করা যায়?

মৌর্য যুগের শিল্পে পারসিক প্রভাব দেখা যায়। যেমন –

  • খরোষ্ঠী লিপি – সম্রাট অশোক উত্তর-পশ্চিম ভারতে খরোষ্ঠী লিপি ব্যবহার করেছিলেন, যার উৎস ছিল পারসিক বা আরামীয় লিপি।
  • লিপি লেখার পদ্ধতি – এই লিপিগুলি ডানদিক থেকে বামদিকে লেখা হত।
  • স্তম্ভ নির্মাণের কৌশল – পারসিক শাসকরা পাথরের স্তম্ভ তৈরি করতেন এবং তাদের গায়ে লেখা থাকত। অশোক তাঁর স্তম্ভ নির্মাণের সময় এই কৌশল অনুসরণ করেছিলেন।
  • ইন্দো-পারসিক রীতি – ভারতে এই সময় স্থাপত্যশিল্পে ইন্দো-পারসিক রীতির সূচনা হয়।

পেরিপ্লাস অব দ্য ইরিথ্রিয়ান সি গ্রন্থটির গুরুত্ব সংক্ষেপে লেখো। – টীকা লেখো।

পেরিপ্লাস অব দ্য ইরিথ্রিয়ান সি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক গ্রন্থ। লেখক সম্পর্কে জানা যায় না, তবে ধারণা করা হয় এটি কোনো এক গ্রিক লেখক লিখেছেন। গ্রন্থটির রচনাকাল নিয়ে মতভেদ আছে, তবে এটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের মাঝামাঝি সময়ে লেখা হয়েছিল।

প্রাচীন গ্রিক ও রোমানরা ভারত মহাসাগর, লোহিত সাগর এবং পারস্য উপসাগরকে ‘ইরিথ্রিয়ান সি’ বা ‘ইরিথ্রিয়ান সাগর’ বলত। বইটির বাংলা অর্থ হলো ‘ইরিথ্রিয়ান সাগরে ভ্রমণ’। গ্রন্থটি থেকে অনেক তথ্য জানা যায়, যেমন –

  • ওই এলাকার বন্দর ও ব্যবসাবাণিজ্য সম্পর্কে বিস্তারিত।
  • ওই অঞ্চলের মানুষ, গাছপালা, পশু-পাখি সম্পর্কে তথ্য।
  • ওই অঞ্চলে মৌসুমি বায়ু এবং তার গতিপ্রকৃতি ইত্যাদি।

উপমহাদেশে নাটকের চর্চার ওপর গ্রিক প্রভাব কীভাবে পড়েছিল বলে তোমার মনে হয়? বর্তমানে কি সেই প্রভাব আছে?

বিশেষ করে মঞ্চ বানানো এবং যবনিকা (পর্দা) টানার ক্ষেত্রে উপমহাদেশে নাটকের ওপর গ্রিক প্রভাব পড়েছিল। সংস্কৃতে গ্রিকদের ‘যবন’ বলা হত। এই ‘যবন’ শব্দ থেকেই ‘যবনিকা’ শব্দের উৎপত্তি।

এখনও নাটক বা যে কোনো অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ বানানো হয়। মঞ্চ ছাড়া কোনো অনুষ্ঠান ভালোভাবে হয় না। নাটকে পর্দার ব্যবহারও আছে। পর্দা ফেলে নাটক বা অনুষ্ঠান শেষ হলে যবনিকা টানা হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় গ্রিস ও ভারতের মধ্যে কীভাবে সংস্কৃতি চর্চার বিনিময় হয়েছিল?

গ্রিস ও ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা একে অপরকে প্রভাবিত করেছিল। গ্রিক পণ্ডিত অ্যারিস্টটল ও অ্যারিস্টারকাস বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ধারণা দিয়েছিলেন। ভারতীয় পণ্ডিত আর্যভট্ট ও বরাহমিহির এই ধারণাগুলো আরও বিস্তৃত করেন। গ্রিক ভাষায় লেখা ‘যবনজাতক’ গ্রন্থটি সংস্কৃতে অনুবাদ করা হয়েছিল। বরাহমিহিরের লেখা ‘পঞ্চসিদ্ধান্তিকা’ গ্রন্থে গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের ‘পৌলিশ’ এবং ‘রোমক’ সিদ্ধান্তগুলোর কথা আলোচনা করা হয়েছিল।

গন্ধার শিল্প – টীকা লেখো।

খ্রিস্টপূর্ব 50 থেকে খ্রিস্টীয় 500 অব্দের মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতে (গন্ধার, জালালাবাদ, সোয়াট, বেগ্রাম) রোম-ভারত ও গ্রিক ভাস্কর্য রীতির মিশ্রণে যে শিল্পরীতি তৈরি হয়, তাকে বলা হয় গন্ধার শিল্প।

  • গন্ধার শিল্পের মূল বিষয় ছিল বুদ্ধের জীবন ও বৌদ্ধধর্ম। গন্ধার শিল্পে বুদ্ধের মূর্তির বৈশিষ্ট্য ছিল নাক টিকালো, ভুরু টানা এবং চোখ আধবোজা। মূর্তির পায়ের জুতো ছিল রোমান জুতোর মতো। মূর্তিগুলিতে সোনালি রঙের ব্যবহার নতুন এক বৈশিষ্ট্য এনে দেয়।
  • গন্ধার শিল্পের ভাবনায় ভারতীয় এবং গ্রিক-রোমান শিল্পের মিশ্রণ স্পষ্ট। অর্থাৎ, গন্ধার শিল্প ছিল গ্রিক, রোমান ও ভারতীয় শিল্পের সংমিশ্রণ। পাশাপাশি ইরানীয় এবং মধ্য এশীয় শিল্পেরও প্রভাব ছিল।

কুমারজীব কে ছিলেন? চিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল কীভাবে?

কুমারজীব ছিলেন কাশ্মীরি বৌদ্ধ পণ্ডিত।

চিনের কুচি আক্রমণের সময় কুমারজীব কুচিতে ছিলেন। পরে, কান-সু প্রদেশ থেকে তিনি চিন সম্রাটের অনুরোধে 401 খ্রিস্টাব্দে চিনের রাজধানীতে চলে যান। কুমারজীব সেখানে এগারো বছর বৌদ্ধ ধর্মচর্চা করেন। সংস্কৃত ও চিনা ভাষায় দক্ষ হওয়ায় তিনি অনুবাদকের কাজ করে বৌদ্ধধর্ম ও সাহিত্যকে সাহায্য করেন।

ফাসিয়ান ও সুয়ান জাং কোন্ দেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন এবং কেন?

ফাসিয়ান ও সুয়ান জাং উভয়েই চিন থেকে ভারতে এসেছিলেন। তাঁরা ছিলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। বৌদ্ধ ধর্ম ও সাহিত্য সম্পর্কে আরো জানার জন্য তাঁরা ভারতে আসেন। বিভিন্ন বৌদ্ধ কেন্দ্র ঘুরে এদেশে বৌদ্ধ ধর্মচর্চা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। শুধু বৌদ্ধ ধর্ম নয়, ব্রাহ্মণ্য ধর্ম সম্পর্কেও তাঁরা জ্ঞান আহরণ করেন।

কুমারজীব – টীকা লেখো।

অথবা, তিনি স্মরণীয় কেন?

কুমারজীব ছিলেন খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের একজন বিখ্যাত বৌদ্ধ পণ্ডিত। তাঁর বাবার নাম ছিল কুমারযান। তিনি কুচি রাজপরিবারের রাজগুরু ছিলেন। 9 বছর বয়সে কুমারজীব কাশ্মীরে যান এবং বন্ধুদত্ত নামক এক বৌদ্ধ পণ্ডিতের কাছে শিক্ষালাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি মধ্য এশিয়ায় ভ্রমণ করেন। এই সময়েই তাঁর নাম ও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। চতুর্থ শতকের শেষের দিকে চিনের শাসক কুচি আক্রমণ করেন। সে সময় কুমারজীব কুচিতেই ছিলেন। চিনের রাজা কুমারজীবকে নিয়ে কান-সু প্রদেশে যান। এরপর 401 খ্রিস্টাব্দে কুমারজীব চিন সম্রাটের অনুরোধে চিনের রাজধানী গমন করেন। তিনি 412 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে ছিলেন এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ নিয়ে গভীর গবেষণা করেন। তিনি সংস্কৃত ও চিনা ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন।

ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে গ্রিসের কীভাবে যোগাযোগ গড়ে ওঠে?

গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের কারণে ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে গ্রিসের যোগাযোগ গড়ে ওঠে।

ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে বাইরের দেশগুলোর যোগাযোগের একটি বড় মাধ্যম ছিল বৌদ্ধধর্ম। বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার ও শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে অনেক পণ্ডিত এদেশ থেকে অন্য দেশে যেতেন। আবার, বাইরের দেশ থেকেও অনেকে বৌদ্ধধর্ম ও শিক্ষার চর্চা করতে ভারতে আসতেন। চিনা পণ্ডিত ফাসিয়ান ও সুয়ান জাং-এর নাম এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতক থেকে চিনে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার হয় এবং এর মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বৌদ্ধিক যোগাযোগ শুরু হয়।

প্রাচীন বিশ্বের চারটি সভ্যতা এবং উল্লেখযোগ্য নদীগুলির নাম লেখো।

প্রাচীন বিশ্বের চারটি সভ্যতা ছিল –

  • মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতা
  • মিশরীয় সভ্যতা
  • চিন সভ্যতা
  • রোমান সভ্যতা

এই সভ্যতাগুলি নদী উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল। সেগুলি হল –

  • সুমেরীয় সভ্যতা – টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী উপত্যকা
  • মিশরীয় সভ্যতা – নীলনদ অববাহিকা
  • চিন সভ্যতা – হোয়াংহো ও ইয়াংসিকিয়াং নদী উপত্যকা

চিন সভ্যতা – টীকা লেখো।

বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে একটি ছিল চিন বা চৈনিক সভ্যতা। এই সভ্যতা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল –

  • চিন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল হোয়াংহো ও ইয়াংসি-কিয়াং নদী উপত্যকায়।
  • চিনের মানুষরা প্রথম কাগজ আবিষ্কার করেন।
  • কাঠের হরফ বানিয়ে ছাপার কৌশল চিনেই প্রথম তৈরি হয়েছিল।
  • তারা প্রথমবার বারুদের ব্যবহার শেখে।
  • বিদেশি শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তারা উঁচু প্রাচীরে ঘেরা সাম্রাজ্য তৈরি করেন।

প্রাচীন রোমান সভ্যতার পরিচয় দাও।

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম রোমান সভ্যতা। এই সভ্যতা সম্পর্কে জানা যায় যে –

  • আনুমানিক 753 খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইতালির টাইবার নদীর ধারে রোম নগরী গড়ে ওঠে। পরে একেই কেন্দ্র করে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। 1453 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এর অস্তিত্ব টিকে ছিল।
  • এই সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন জুলিয়াস সিজার।
  • এই সভ্যতার মানুষরা শিল্প, সাহিত্য, আইন ও রাজনীতি বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী ছিল।
  • রোমানদের হাত ধরেই ক্যালেন্ডারের জন্ম হয়। উল্লেখ্য জুলাই মাসের নামকরণ হয় রাজা জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে।
  • রাষ্ট্রনীতি ও আইন বিষয়েও তারা পারদর্শী ছিল। সিসেরো ছিলেন (106-143খ্রিস্টপূর্ব) বিখ্যাত রোমান চিন্তাবিদ।

সুমেরীয় সভ্যতা সম্পর্কে কী জানো?

সুমেরীয় সভ্যতা ছিল একটি তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা। এই সভ্যতা ছিল মেসোপটেমীয় সভ্যতার অন্তর্গত। যা টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী উপত্যকায় গড়ে উঠেছিল।

বিশ্ব ইতিহাসে এই সভ্যতা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ –

  • তারা লিপির ব্যবহার জানত। সেই লিপিকে বলা হয় কীলাকীকৃত লিপি বা কিউনিফর্ম লিপি। এই সময় সুমেরীয়রা কাদামাটির মণ্ড তৈরি করে তাতে তিরের ফলার অগ্রভাগ দিয়ে লিখত। পরে তা আগুনে পুড়িয়ে নেওয়া হত।
  • তারা ইটের তৈরি ঘরবাড়ি বানাত।
  • তারা কৃষি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য ও শিক্ষায় উন্নত ছিল।
  • তারাই সৃষ্টি করেছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মহাকাব্য। যার নাম গিলগামেশ।

ভারত ও বহির্বিশ্বের মধ্যে যোগাযোগের যে কোনো একটি মাধ্যম আলোচনা করো।

অথবা, প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে পড়াশোনার কী ভূমিকা ছিল?

ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল বৌদ্ধধর্ম এবং শিক্ষা। এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে অনেক ছাত্র ও পর্যটক ভারতে আসতেন। তেমনি ভারত থেকেও অনেক মানুষ বিদেশ যেতেন। যেমন –

  • চীনা পর্যটক ফাসিয়ান গুপ্তযুগে (দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সময়) ভারতে এসেছিলেন। তিনি অনেক সময় পাটলিপুত্রে কাটান এবং সেখানে সংস্কৃত সাহিত্য ও বৌদ্ধধর্ম চর্চা করেন।
  • আবার, হর্ষবর্ধনের সময় ভারতে আসেন সুয়ান-জাং। তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁরা সবাই চীন ফিরে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে দেন।

অন্যদিকে, ভারত থেকেও অনেক পণ্ডিত বিদেশে যেতেন। তাঁরা ছিলেন –

  • কাশ্মিরী বৌদ্ধপণ্ডিত বুদ্ধযশ, যিনি মধ্য এশিয়ার কাশগড় যাত্রা করেছিলেন।
  • পণ্ডিত পরমার্থ, যিনি শিক্ষালাভের জন্য চীন গিয়েছিলেন।
  • বৌদ্ধপণ্ডিত কুমারজীব, যিনি চীনে গিয়ে বৌদ্ধধর্ম ও চিকিৎসাবিদ্যা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।

ভারতীয় উপমহাদেশের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার যোগাযোগ কিভাবে গড়ে ওঠে?

মৌর্যদের আমল থেকেই ভারতবর্ষের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তা গড়ে ওঠে বিভিন্ন উপায়ে, যেমন –

  • দূত বিনিময় – সম্রাট অশোক তাঁর রাজত্বকালে মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দূত পাঠিয়েছিলেন। সেখানকার শাসকরাও মৌর্যদের সঙ্গে দূত বিনিময় করতেন। এই দেশগুলির মধ্যে ছিল সিরিয়া ও মিশর।
  • সাম্রাজ্যবিস্তার – প্রথমে শকরা ভারতবর্ষ আক্রমণ করে এবং মধ্য এশিয়ায় তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে। পরে কুষাণরা ওই অঞ্চলসহ ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। এর আগে পহ্লবরাও সিন্ধু উপত্যকায় তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছিল।

এই সব কারণে উভয় অঞ্চলের সভ্যতা ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটে।

ভারতীয় উপমহাদেশে স্থলপথে প্রধান বাণিজ্য দ্রব্যের নাম লেখো। প্রাচীন ভারতে রেশমপথের গুরুত্ব লেখো।

ভারতীয় উপমহাদেশে স্থলপথে প্রধান বাণিজ্যদ্রব্যটি ছিল রেশম।

রেশমপথের গুরুত্ব

  • এই পথের মাধ্যমে নানা বাণিজ্যপণ্য আমদানি-রফতানি করা হত।
  • রেশমপথের বণিকদের কাছ থেকে কুষাণ রাজারা প্রচুর শুল্ক আদায় করতেন। ফলে কুষাণ যুগের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিল।
  • এই পথ চিনকে ভারতবর্ষ ও রোমের সঙ্গে যুক্ত করেছিল।
  • এই পথে কাগজ, মুদ্রণযন্ত্র, বারুদ, এমনকি রেশম ইউরোপে রফতানি করা হত।
  • এই পথের মাধ্যমে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগ সুদৃঢ় হয়।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের নবম অধ্যায়, “ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন