অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – আদাব – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের আদাব অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে আদাব অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় আদাব অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই আদাব অধ্যায়ের ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

সমরেশ বসুর অসাধারণ গল্প “আদাব” সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভয়াবহতা তুলে ধরে একটি মানবিক সত্যের সন্ধান করে। দাঙ্গা মানুষের জীবনবোধকে বিকৃত করে, সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষকে সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত করে ঘৃণার শিকার করে তোলে।

গল্প শুরু হয় রাতের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে মিলিটারি টহলের গাড়ির শব্দে। শহরে জারি ১৪৪ ধারা ও কারফিউ। মানুষ হাতে দা, সড়কি, ছুরি নিয়ে মুখোমুখি। গুপ্তঘাতকের দল অন্ধকারে লুকিয়ে আঘাত হানছে। লুটেরারা উল্লাস করছে মৃত্যুর বিভীষিকায়। বস্তিতে বস্তিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে। আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃত্যুকাতর মানুষের চিৎকার। এই বীভৎস পরিবেশে মাঝেমধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সৈন্যবাহী, যারা আইনরক্ষার নামে নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে।

লেখক দাঙ্গার পরিবেশ সারা গল্পে ধরে রেখেছেন। মাঝি ও সুতামজুরের ভাবনা, আচার-আচরণ, কথাবার্তা তাদের সন্দেহ, অবিশ্বাস ও আতঙ্কের মাধ্যমে দাঙ্গার ভয়াবহতা ফুটে ওঠে। হিন্দু ও মুসলমান একে অপরের প্রতি তীব্র অবিশ্বাস ও সন্দেহে আচ্ছন্ন। সুতামজুর বলে, “রায়টে’ আমার ভগ্নিপতিরে কাইটা চাইর টুকরা কইরা মারল।” মেথর ও সুতামজুর যখন লুকিয়ে থাকে, তখন এক ইংরেজ অশ্বারোহী রিভলবার হাতে তাদের বুকে অশ্বখুর ধ্বনি তুলে চলে যায়। এ যেন দাঙ্গাজনিত পরিস্থিতিরই প্রতীক।

গল্পের শেষে দেখা যায়, পুলিশ ভুল করে এক নিরীহ মানুষকে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের নামে গুলি করে হত্যা করে। দরিদ্র নাওয়ের মাঝিও দাঙ্গার শিকার হয়। “আদাব” কেবল একটি গল্প নয়, বরং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বীভৎসতা ও তার ধ্বংসাত্মক প্রভাবের একটি চলচ্চিত্র। লেখক মানুষের মনের অন্ধকারকে তুলে ধরে পাঠককে গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করেন।

আদাব – অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ জারি হওয়ার সুযোগে কী ঘটেছিল?

শহরে হিন্দু-মুসলমানে দাঙ্গা বেধে যাওয়ার পর ১৪৪ ধারা আর কারফিউ জারি হয়েছিল। গুপ্ত ঘাতকের দল চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্ধকারকে আশ্রয় করে তারা চোরাগোপ্তা হানা দিল। লুটেরাও তাদের অভিযানে বেরিয়ে পড়েছিল। বস্তিতে বস্তিতে আগুন জ্বলছিল। মৃত্যুকাতর নরনারী-শিশুর চিৎকার স্থানিক আবহাওয়াকে বীভৎস করে তুলেছিল। বিদ্রোহ দমনের জন্য স্থানে স্থানে সৈন্যবাহিনীর লোকেরা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ছিল।

বিড়ি খাইবা? – বিড়ি খাওয়াকে কেন্দ্র করে কী ঘটেছিল?

দাঙ্গার পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। সবাই ভাবছিল, কে কখন গোপন অস্ত্র বের করে আক্রমণ করে বসে। এই পরিস্থিতিতে সর্বাগ্রে সবার জিজ্ঞাসা – এ হিন্দু না মুসলমান? তাই যখন সুতামজুর একটা বিড়ি নাওয়ের মাঝির দিকে এগিয়ে দিয়েছিল, তখন মনে হয়েছিল, একটা বন্ধুত্বের বাতাবরণ তৈরি হতে চলেছে। কিন্তু স্যাঁতানো দেশলাই কাঠি হঠাৎ জ্বালিয়ে ফেলে মাঝি যখন সোল্লাসে ‘সোহান্-আল্লা’ বলে ফেলেছিল, তখন চিহ্নিত হয়ে পড়ে সে মুসলমান। এতে নিমেষে সুতামজুর আতঙ্কিত হয়ে যায়।

অন্ধকার গলিতে ডাস্টবিনের দু-পাশে দুটি প্রাণী নিজেদের বিপদের কথা কী ভেবেছিল?

অন্ধকার গলির দুটি প্রাণী নাওয়ের মাঝি ও সুতামজুর। তারা দাঙ্গা বোঝে না, নিতান্ত সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ হিসেবে তাদের মনে হয়েছিল ঘরের কথা, মা-বউ, ছেলেমেয়েদের কথা। আরও মনে হয়েছিল এদের কাছে কী তারা প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে। অন্য একটা বিপদের কথাও তাদের মনে হয়েছে – তাদের অনুপস্থিতিতে এই দাঙ্গার বাজারে তারাই বা কীভাবে বেঁচে থাকবে।

দাঙ্গা বাধার ফলে মাঝির কী ক্ষতির সম্ভাবনা ঘনিয়ে উঠেছিল?

মাঝি খেয়াপারাপার করে জীবন নির্বাহ করে। তার আশঙ্কা ছিল যে, সে আর নৌকো ফিরে পাবে না। তাই তার বুঝি দানা মারা গেল। মাঝির এক বাঁধা খদ্দের ছিল জমিদার রূপবাবুর বাড়ির নায়েবমশাই। তিনি প্রতিমাসে একবার করে নইরার চরে কাছারি করতে যেতেন। তাঁর হাতও ছিল হজরতের হাত। তিনি মাঝিকে যাত্রী ভাড়া দিতেন পাঁচ টাকা, বকশিশ পাঁচ টাকা; অর্থাৎ তার দশ টাকা বাঁধা আয় ছিল। দাঙ্গার ফলে কী কোনো হিন্দুবাবু আর মাঝির নৌকোয় আসবে এ প্রশ্ন তার মনে উঁকি দেয়।

মাঝির সংকেত মতো সামনে তাকিয়ে সুতামজুর কী দেখেছিল?

দাঙ্গা যখন প্রবল হয় তখন পুলিশবাহিনীর আর কাজের অন্ত থাকে না। দাঙ্গা দমনে তারা যেন তখন অক্লান্ত। মাঝির সংকেত অনুযায়ী সুতামজুর দেখেছিল প্রায় একশো গজ দূরে একটা ঘরে আলো জ্বলছে। ঘরের সংলগ্ন উঁচু বারান্দায় দশ-বারোজন বন্দুকধারী পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আর তাদের সামনে একজন ইংরেজ অফিসার কী যেন বলে চলেছে মুখে পাইপের ধোঁয়া ছেড়ে, হাত-পা নেড়ে। বারান্দার নীচে ঘোড়ার জিন ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর-একজন পুলিশ। ঘোড়াটি চঞ্চলভাবে কেবলই লাঠিতে পা ঠুকছে।

সমরেশ বসুর “আদাব” কেবল একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার গল্প নয়, বরং এটি মানবতার বিজয়েরও একটি কাহিনী। গল্পের দুই প্রধান চরিত্র – মাঝি ও সুতামজুর – যারা ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বরং মানবতার ভিত্তিতে একে অপরের সাথে সংযুক্ত।

দাঙ্গার ভয়াবহ পরিবেশেও তারা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখায়। গল্পের শেষে, যখন এক নিরীহ মানুষকে ভুল বোঝাবুঝিতে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে, তখনও মাঝি ও সুতামজুর মানবতার উপর তাদের বিশ্বাস হারায় না।

“আদাব” আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ কতটা ক্ষতিকর এবং এটি কীভাবে মানুষকে অমানুষ করে তোলে। এই গল্প আমাদের সকলকে ধর্ম, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানায়।

Share via:

মন্তব্য করুন