আজকের এই আর্টিকেলে আমরা অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাদশ অধ্যায় ‘একটি চড়ুই পাখি’–এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় উঠে আসে।
চতুর চড়ুই এক ঘুরে ফিরে আমার ঘরেই বাসা বাঁধে। – চড়ুইপাখিকে এখানে চতুর বলা হল কেন?
বাসা কথাটির মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের বিষয়টি লুকিয়ে আছে। এখানে পাখিটি জনহীন পরিবেশে কবির ভাঙাচোরা ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। সে যেন জানে একাকিত্ব কবিকে এমনই গ্রাস করেছে যে, চাইলেও কবি তাকে তাড়িয়ে দেবেন না। তার বুদ্ধির ক্ষিপ্রতার জোরেই সে যেন কবিমনকে বুঝতে পেরেছে। আরও বুঝেছে সে-ই কবির একক ঘরে একমাত্র নির্ভরযোগ্য জীবন। সেই অর্থেই ‘চতুর’ কথাটি ব্যবহৃত।
কবিতায় বিধৃত চিত্রকল্পগুলি দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।
আধুনিক কবি তারাপদ রায় রচিত ‘একটি চড়ুইপাখি’ কবিতায় কবি বেশ কিছু চিত্রকল্পের সাহায্য নিয়েছেন, অর্থাৎ কথার মাধ্যমে চিত্র এঁকে যেতে চেয়েছেন। ‘সন্ধ্যা ফেরে’-সন্ধ্যার আগমন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। ‘ছড়ায় শব্দের টুকরো’-চড়ুই – এর সংগৃহীত ধান ও খড়ের ঘর্ষণে অনুরণিত শব্দকে এই চিত্রকল্পে কবি তুলে ধরেছেন। ‘রাত্রির নির্জন ঘরে’ – রাতের নির্জনতাকে গভীর করে তুলতেই এর ব্যবহার।
চড়ুইপাখিকে কেন্দ্র করে কবির ভাবনা কীভাবে আবর্তিত হয়েছে, তা কবিতা অনুসরণে আলোচনা করো।
আধুনিকতার জীবনমুখিনতা অনুভূত করার জন্য জীবনে প্রকৃতি এবং ঈশ্বরসৃষ্ট প্রাণীকুলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। বাংলার চড়ুইপাখি কবি মনের গভীরে রেখাপাত করে, যার চাঞ্চল্য, অস্থিরতা, বুদ্ধিমত্তা আর চাতুর্য তার কবিতায় প্রকাশ পায়। তার ‘বাসা’ কবিকে নিরাপদ আশ্রয়ের কথা বলে, কিন্তু ঝড় ও বাতাসে পাখির নীড় ভেঙ্গে যাওয়ায় অস্থিরতা অনুভূত হয়। কবি চড়ুইপাখির সান্নিধ্যে দেখে তার সৃষ্টিশক্তির দক্ষতা, এবং কিভাবে সম্পূর্ণ আত্মনির্ভর করতে পারে তা মন্তব্য করেন। কবি চড়ুইপাখির দৃষ্টিতে এককালে সমৃদ্ধি এবং একান্ত বৃদ্ধি এককালে নির্জন একাধিক ভাবে চিত্রিত করেন।
তবুও যায় না চলে এতটুকু দয়া করে পাখি – পঙ্ক্তিটিতে কবিমানসিকতার কীরূপ প্রতিফলন লক্ষ করা যায়?
কবি বড়োই নিঃসঙ্গ, সারাদিন একাকী গৃহের কক্ষে তিনি থাকেন। দিনাবসানে পাখিটি যখন ধান ও খড়ের টুকরো নিয়ে ফিরে আসে তার সংগৃহীত জিনিসের গোছগাছ আর কিচিরমিচির শব্দে, মুহূর্তের মধ্যে কবির নির্জন কক্ষ এক অজানা সুরের মূর্ছনায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। কবিমনও আলোড়িত হয়। নির্জন ঘরে পাখির একাকিত্ব অনুভব করেই কৃপাবশত সে এখানে থেকে যায়।
ছোটো চড়ুইপাখির জীবনবৃত্ত কীভাবে কবিতার ক্ষুদ্র পরিসরে আঁকা হয়েছে তার পরিচয় দাও।
আধুনিক কবি তারাপদ রায় রচিত ‘একটি চড়ুই পাখি’ কবিতায় কবি বাংলার অতিপরিচিত চড়ুইপাখির বুদ্ধিমত্তা, চাতুর্যশীলতা, স্বাধীনভাবে বিচরণের চিত্রটি অতি সুন্দরভাবে পরিবেশন করেছেন। এরই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কবিজীবনের নিঃসঙ্গতা মোচনে পাখিটি কীভাবে সাহায্য করেছে। সবসময় সে যেন কবিমনকে ভরিয়ে রাখতে পেরেছে। দিনাবসানে সে কবির কক্ষটিতে ফিরে আসে খড়কুটো ও ধান সংগ্রহ করে। একদিকে কবির অগোচরে সে কবির কক্ষেও যেমন স্থান করে নিয়েছে, তেমনি কবির মনেও স্থান করে নিতে পেরেছে। স্বাধীন বা মুক্ত মনোভাবের জন্য সে ইচ্ছামতো এপাড়ায় ওপাড়ায় পালেদের, বোসেদের বাড়ি চলে যেতে পারে। নেহাতই একটা বন্ধনকে সে ছিন্ন করতে না পেরে একই জায়গায় স্থির হয়েছে।
কৌতূহলী দুই চোখ মেলে অবাক দৃষ্টিতে দেখে – চড়ুইপাখির চোখ কৌতূহলী কেন? তার চোখে কবির সংসারের কোন্ চালচিত্র ধরা পড়ে?
চড়ুইপাখি কৌতূহলী কারণ সাধারণত অট্টালিকা জনপূর্ণ হয়। কিন্তু এই বাড়িতে কোথায় একটা শূন্যতা তাকে বিস্মিত করে তোলে। আধুনিক জীবনে নিঃসঙ্গতা, আত্মকেন্দ্রিকতা ও অতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে ঘরটিতে। তাই চড়ুইটির মনে হয় কবির অনুপস্থিতিতে বিধাতার কৃপায় কক্ষের সর্বস্ব তারই হয়ে যাবে।
সাংসারিক জীবনের টানাপোড়েন অনেক সময় মানুষকে বিপর্যস্ত করে দেয়, কিন্তু এখানে নিঃসঙ্গ এক মানুষের একাকিত্ব বড়ো বেশি করে পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে। এই একাকিত্ব কখনও এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে, একটি চড়ুইপাখির এই কক্ষে থাকা না থাকা কবিমনকে উতলা করে তোলে। তাই তিনি এই কবিতায় বলেছেন চড়ুই – এর মধ্যে দয়ামায়া আছে বলেই সে কৃপা করে এই গৃহে স্থিত হয়। ইচ্ছা করলেই সে পারে তার বাসা বদল করতে। অসহায় কবির গভীরে একাকিত্ব এই কবিতাকে বেদনাবিধুর করে তুলেছে।
রাত্রির নির্জন ঘরে আমি আর চড়ুই একাকী – পঙ্ক্তিটিতে একাকী শব্দটি প্রয়োগের সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।
কবির জীবনে একাকিত্ব কোথায় যেন এক গভীর বেদনার সৃষ্টি করেছে। আধুনিক জীবনের সবচেয়ে বড়ো ব্যাধি আত্মকেন্দ্রিকতা আর তার থেকে বহু মানুষের জীবনে একাকিত্বের ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই জনহীন কক্ষে কবি আর সঙ্গী চড়ুইটিও সঙ্গীবিহীন। সেই অর্থেই ‘একাকী’ শব্দ নিঃসঙ্গ জীবনের বেদনাকে আরও গাঢ় করে তুলেছে।
একটি চড়ুইপাখি ছাড়া কবিতাটির অন্য কোনো নামকরণ করো। কেন তুমি এমন নাম দিতে চাও, তা বুঝিয়ে লেখো।
একটি চড়ুই পাখি’ ছাড়া একলা ঘরে আমি ও চড়ুই’ – এই নামকরণ কবিতায় প্রয়োগ করা যায়। মূলত কবিতার কেন্দ্রবিন্দুতে দুটি প্রাণী রয়েছে। কবিতানুযায়ী এরা দুজনেই একা। তবে কবির একাকিত্ব গভীর। আমরা মনে করি কোনো মানুষ এক মুহূর্তে অন্য মানুষের সহযোগিতা, সহৃদয়তা, ভালোবাসা পেলে তার অন্তর আনন্দে পূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষত জীবনের শেষলগ্নে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই একাকিত্ব প্রবল হয়ে ওঠে; তখন একটা চড়ুইপাখির কক্ষে আনাগোনা, বাসা প্রস্তুতও কবিমনকে ভরিয়ে তোলে। একা থাকার কষ্ট খানিকটা তিনি ভুলে থাকেন। তাই একলা ঘরে কবি ও চড়ুই – এর অবস্থান বোঝাতে এই ধরনের নামকরণ।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের দ্বাদশ অধ্যায় ‘একটি চড়ুই পাখি’ – এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়শই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, অনুগ্রহ করে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাতে তারা ও উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ!