আজকের আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্বিংশ অধ্যায় ‘গড়াই নদীর তীরে’ এর ওপর ভিত্তি করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই প্রশ্নগুলো পরীক্ষায় নিয়মিতই আসে এবং অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কুটিরখানিরে লতাপাতা ফুল মায়ায় রয়েছে ঘিরে। – এখানে কুটিরটিকে লতাপাতা-ফুলের মায়া দিয়ে ঘিরে রাখা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
কবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় গড়াই নদীর তীরে প্রকৃতির বুকে অবস্থিত কুটিরটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, কুটিরটি যেন লতাপাতা-ফুলমালার বন্ধনে বাঁধা পড়েছে। আসলে লতাপাতা কুটিরটিকে এমনভাবে বেষ্টন করে আছে যেন মনে হচ্ছে যে, সে বাঁধা পড়েছে ওই লতাপাতার বেষ্টনীতে। প্রকৃতি যেন পরম মমতায় তার স্নেহবন্ধনে বেঁধে এই কুটিরটিকে রক্ষা করছে।
ডাহুক মেয়েরা বেড়াইতে আসে গানে গানে কথা কয়ে। – ‘ডাহুক মেয়ে’ কারা? তারা কাদের নিয়ে আসে? তারা কীভাবে কথা বলে?
মা-ডাহুক পাখিদের স্নেহবশত কবি জসীমউদ্দীন ‘ডাহুক মেয়ে’ বলেছেন।
জলচর ডাহুক গৃহস্থবাড়ি সংলগ্ন খানা-ডোবায় থাকে। ছোটো ছোটো তুলোর বলের মতো সন্তানদের নিয়ে তারা কখনও কচুরিপানায়, কখনও ঝোপঝাড়ে, মাঝেমাঝে গৃহস্থের উঠোনেও ঘুরে বেড়ায়। মা-পাখিরা, কবির ভাষায় ডাহুক মেয়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে আসে।
পাখির ডাক অনেক ক্ষেত্রেই এতটাই শ্রুতিমধুর যে মানুষ তাকে সংগীতের মর্যাদা দেয়। গ্রাম্যপ্রকৃতির কোমলসুন্দর পটে ডাহুকের ডাক কবিপ্রাণে সংগীতের মূর্ছনা এনে দিয়েছে। তাই কবি বলেছেন তারা গানে গানে কথা বলে।
যেন একখানি সুখের কাহিনি নানান আখরে ভরি, – ‘আখর’ শব্দটির অর্থ কী? সুখের কাহিনির যে নানা ছবি কবি এঁকেছেন তার মধ্যে কোনটি তোমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে এবং কেন?
আখর শব্দের অর্থ হল অক্ষর বা বর্ণ।
কবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় সুখের যে চিত্রগুলি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তার সবগুলিই মনোমুগ্ধকর। কিন্তু তার ভিতর, মাচার উপর ফুটে থাকা লাউ-কুমড়ো আর সিমলতার ফুল এবং তার নীচে লাল নটেশাকের বিস্তার আমার মনকে সবচেয়ে আকর্ষণ করে। এখানে মনে হয় যেন রঙের এক অপরূপ ঢেউ খেলে যাচ্ছে। তা ছাড়া কুটিরের বধূর মেলে দেওয়া লাল শাড়ি এই সৌন্দর্যকে যেন আরও বাড়িয়ে তুলছে। প্রকৃতির অপরূপতা আর তার উপর মানুষের হালকা স্পর্শ যেন এখানে মানুষ ও প্রকৃতিকে একাত্ম করে দিয়েছে। সবমিলিয়ে এক অপরূপ রঙিন প্রকৃতি যেন আমাদের মন ভরিয়ে দিয়েছে, এ যেন এক অদৃশ্য শিল্পীর পটে আঁকা চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছুখন যেন থামিয়া রয়েছে এ বাড়িরে ভালোবেসে। – রঙিন মেঘেরা বাড়িটিকে ভালোবেসে থেমে থাকে। এর মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
পল্লিকবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় গড়াই নদীর কূলে অবস্থিত একটি কুটিরের অপরূপ চিত্র অঙ্কন করেছেন। প্রকৃতি যেন কুটিরটিকে পরম মমতায় আপন স্নেহবন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। আকাশের কোলে ভেসে চলা রঙিন মেঘেরাও যেন মাটির বুকে অবস্থিত এই কুটিরটির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে। তাই তারাও কুটিরের উপর দিয়ে ভেসে চলার সময় থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে কুটিরটিকে ভালোবেসে। আকাশ এবং মাটির বিস্তর ব্যবধান থাকলেও দুটিই প্রকৃতির অঙ্গ। এখানে যেন আকাশ এবং মাটির সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয় প্রকৃতির সৌন্দর্য।
আলপনা আঁকা কার – ‘আলপনা আঁকা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
পল্লিকবি জসীমউদ্দীন তাঁর ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় প্রকৃতির কোলে অবস্থিত একটি কুটিরের অপূর্ব চিত্র আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। প্রকৃতি যেন স্নেহ-মায়ার বন্ধনে এই কুটিরটিকে ঘিরে রয়েছে। কুটিরের মানুষ এর আঙিনায় রোদে শুকোতে দেয় তাদের নিত্য ব্যবহার্য মটর ডাল, মশুর ডাল, কালো জিরা, ধনে, লংকা। প্রকৃতির রঙের সঙ্গে মিশে রোদে শুকোতে দেওয়া এই জিনিসগুলির রং দিয়ে যেন উঠোনে আঁকা হয়ে যায় অপূর্ব আলপনা, যা এই কুটিরের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
কুটিরে আঁকা আলপনা দিয়ে কী চিত্রিত হল বলে কবি মনে করেন?
কবি জসীমউদ্দিনের ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত যে কুটিরটির কথা বলা হয়েছে, সেই শান্তির নীড় কুটিরটির উঠোনের বুকে এক রঙিন চিত্র যেন নানান বর্ণে লিখে রাখে এই কুটিরের মানুষের জীবনের হাসি-আনন্দের চিত্র। এ যেন এক সুখ-শান্তি ভরা জীবনের ছবিই আমাদের সামনে চিত্রিত করে। প্রকৃতির বুকে যে সাধারণ জীবনযাত্রার মাঝেও অসাধারণ শান্তি বিরাজ করে তারই কথা কবি এখানে তুলে ধরেছেন।
আজকের এই আর্টিকেলে অষ্টম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের চতুর্বিংশ অধ্যায় ‘গড়াই নদীর তীরে’ – এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো অষ্টম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনার পড়াশোনার জন্য সহায়ক হয়েছে। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আরও সহায়তার প্রয়োজন হয়, তবে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। নিবন্ধটি শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন আপনার বন্ধুরাও এই সুবিধা পায়। ধন্যবাদ!