অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – স্বাদেশিকতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অষ্টম শ্রেণির বাংলা বিষয়ের স্বাদেশিকতা অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এইভাবে স্বাদেশিকতা অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি যদি তোমরা প্রস্তুত করে না যাও তাহলে পরীক্ষায় স্বাদেশিকতা অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলোর উত্তর দিতে পারবে না। তাই স্বাদেশিকতা অধ্যায়ের প্রশ্ন ও উত্তর গুলি ভালো করে মুখস্ত করে গেলে তোমরা পরীক্ষায় খুব ভালো ফলাফল পাবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “স্বাদেশিকতা” প্রবন্ধে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বাদেশিকতার প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞতা ও অক্লান্ত উদ্যমের এক চিত্র তুলে ধরেছেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, যাকে রবীন্দ্রনাথ “জ্যোতিদাদা” নামে অভিহিত করেছেন, তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই এবং একজন উদ্যমী স্বাদেশিক কর্মী।

প্রবন্ধে বর্ণিত হয়েছে যে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কলকাতার একটি গলির পোড়োবাড়িতে গোপনভাবে “স্বাদেশিক সভা” গঠন করেছিলেন। এই সভায় রাজনারায়ণ বসু সভাপতিত্ব করতেন। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাদেশিক চেতনা জাগিয়ে তোলা এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কেবল আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তিনি বাস্তব জীবনেও স্বাদেশিকতার নীতি প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। এর একটি উদাহরণ হল ভারতবর্ষের জন্য একটি সর্বজনীন পোশাক নির্বাচন।

ধৃতি পোশাক কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক এবং পায়জামা বিদেশী বলে মনে করে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নতুন পোশাকের নকশা তৈরি করেন। তিনি পায়জামার উপরে একটি কাপড় পাট করে মালকোঁচা যুক্ত করে এই নতুন পোশাক তৈরি করেন এবং নিজেই তা ব্যবহার শুরু করেন। সমাজের রক্ষণশীল মানুষ এই নতুন পোশাক দেখে বিস্মিত হলেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাদের কথা গ্রাহ্য করেননি। রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেছেন যে, দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার মানুষ অনেক থাকলেও, স্বাদেশিকতার প্রতি এমন দৃঢ় বিশ্বাস ও সাহস প্রদর্শনের ক্ষমতা কেবল জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই ছিল।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ স্বাদেশিকতার নেশায় উৎসাহিত হয়ে নানা নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। তিনি কিছুকাল ধরে প্রবলভাবে কাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু ব্যর্থ হলেও তিনি কখনো হাল ছেড়ে দেননি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এই অদম্য চেতনা ও দেশপ্রেম ঠাকুর পরিবারের সকলকেই অনুপ্রাণিত করেছিল। রবীন্দ্রনাথ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্বাদেশিকতার এই উদাহরণ তুলে ধরে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। যদিও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উদ্যোগ সবসময় সফল হয়নি, তবুও তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও দেশপ্রেম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।

স্বাদেশিকতা প্রবন্ধটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বাদেশিকতার প্রতি আগ্রহ এবং তাঁর কর্মকাণ্ডের বর্ণনা প্রদান করে।

অষ্টম শ্রেণি – বাংলা – স্বাদেশিকতা

স্বাদেশিকতা অধ্যায়ের লেখক পরিচিতি

১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে, ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ, কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম। মাত্র সাত-আট বছর বয়স থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবিতা রচনার পাশাপাশি প্রবন্ধ, ছোটোগল্প, নাটক, উপন্যাস, গান ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটে। বাংলা ছোটোগল্পের যথার্থ রূপটি গড়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথের হাতেই। ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত ‘ভারতী’ ও ‘বালক’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। ‘কথা ও কাহিনি’, ‘সহজ পাঠ’, ‘রাজর্ষি’, ‘ছেলেবেলা’, ‘শিশু’, ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘হাস্যকৌতুক’, ‘ডাকঘর’ প্রভৃতি রচনা শিশু ও কিশোরমনকে আলোড়িত করে। দীর্ঘজীবনে অজস্র কবিতা, গান, ছোটোগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর গল্পগুলি ‘গল্পগুচ্ছ’-এর বিভিন্ন খণ্ডে আছে। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ‘Song Offerings’-এর জন্য এশিয়ায় তিনিই প্রথম নোবেল পুরস্কার পান। দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁর রচনা। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ এই মহান মানুষের দেহাবসান হয়।

স্বাদেশিকতা অধ্যায়ের বিষয়সংক্ষেপ

স্বাদেশিকতা নামক পাঠ্যাংশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জ্যোতিদাদা অর্থাৎ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে গড়ে ওঠা স্বাদেশিক সভার পরিচয় দিয়েছেন। সে সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজনারায়ণ বসু। কলকাতার এক গলির এক পোড়োবাড়িতে গঠিত সেই সভার মূল বিষয়ই ছিল গোপনীয়তা। প্রাবন্ধিক বলেছেন, এই সভা সাধারণ মানুষ বা শাসকশক্তি কারোর মধ্যেই কোনো ভীতি আনতে পারেনি। কিন্তু এ যেন ছিল এক অসীম রহস্যে আবৃত। এখানে যেন তাঁরা সমস্ত সংকোচ ত্যাগ করে স্বাদেশিকতার এক উত্তেজনার তাপ পোহাতেন। কিন্তু কোনো বীরধর্ম তার ভিতর রক্ষিত হয়নি এবং শাসকশক্তিও অত্যধিক সন্দেহবশত তার উপর কোনো আঘাতও হানেনি।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই সভায় স্বাদেশিকতার উপমা প্রদর্শন করতেন। এমনই একটি হল ভারতবর্ষের সর্বজনীন পোশাক নির্বাচন। ধৃতি যেহেতু কাজের ক্ষেত্রে খুব সুবিধার নয় এবং পায়জামা যেহেতু বিজাতীয়, তাই তিনি এখানে এক নতুন পোশাকের নমুনা পেশ করলেন। পায়জামার উপর একখণ্ড কাপড় পাট করে একটা মালকোঁচা জুড়ে দিলেন এবং সেই পোশাক মানুষের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার আগে নিজেই তা ব্যবহার করতে শুরু করলেন। চারপাশের মানুষ তাতে কতটা বিস্মিত হত সে বিষয়ে তাঁর কোনো ভ্রুক্ষেপই থাকত না। দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার মানুষ অনেক থাকলেও, স্বাদেশিকতার জন্য এমন অদ্ভুত সর্বজনীন পোশাক পরে সর্বসমক্ষে নিজেকে প্রকাশ করার ক্ষমতা একমাত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথের ছিল বলে রবীন্দ্রনাথ এখানে মন্তব্য করেছেন।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ স্বাদেশিকতার নেশায় উৎসাহিত হয়ে নানারকম নতুন নতুন পন্থা গ্রহণ করতেন এবং কিছুকাল সেই বিষয় নিয়ে প্রবল উদ্যোগে কার্যে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। শেষপর্যন্ত তিনি সাফল্যের মুখ হয়তো দেখতে পেতেন না। কিন্তু ব্যর্থ হয়েও তিনি কখনও সম্পূর্ণরূপে হাল ছেড়ে দিতেন না। তাঁর স্বাদেশিকতার এই নেশায় সমগ্র ঠাকুর পরিবারেই যেন উৎসাহের ঝড় বইত। আলোচ্য প্রবন্ধে জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এমনই এক স্বাদেশিকতার উদাহরণ তুলে ধরেছেন প্রাবন্ধিক। সেই যুগে দাঁড়িয়ে সফল না হলেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এই চেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। পরিকল্পনা তেমন কিছু না থাকলেও তিনি কিন্তু সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে দেশের উন্নতির চেষ্টাতেই এই কাজে জড়িয়ে পড়তেন।

স্বাদেশিকতা অধ্যায়ের শব্দার্থ ও টীকা

স্বাদেশিক – স্বদেশ সম্বন্ধীয়। স্বাদেশিকতা – স্বদেশ হিতৈষণা; স্বদেশপ্রীতি। অর্বাচীন – নবীন; অপরিপক্ব বুদ্ধি। বিকার – বিকৃতি। অন্তঃশীলা – অপ্রকাশিত; গুপ্ত। ইষ্টক – ইট। সর্বজনীন – সকলের পক্ষে হিতকর; সকলের উদ্দিষ্ট। দ্বারী – দ্বার প্রহরী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বাদেশিকতা সভা ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই সভা স্বদেশপ্রেমের আলো ছড়াতে এবং ভারতীয়দের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত করতে সাহায্য করেছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “স্বাদেশিকতা” প্রবন্ধে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বাদেশিকতার প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞতা ও অক্লান্ত উদ্যমের এক চিত্র ফুটে উঠেছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ, যাকে রবীন্দ্রনাথ “জ্যোতিদাদা” নামে অভিহিত করেছেন, তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই এবং একজন উদ্যমী স্বাদেশিক কর্মী। প্রবন্ধে বর্ণিত হয়েছে যে, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কলকাতার একটি গলির পোড়োবাড়িতে গোপনভাবে “স্বাদেশিক সভা” গঠন করেছিলেন। এই সভায় রাজনারায়ণ বসু সভাপতিত্ব করতেন। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাদেশিক চেতনা জাগিয়ে তোলা এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলা।

জ্যোতিরিন্দ্রনাথ কেবল আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, বরং তিনি বাস্তব জীবনেও স্বাদেশিকতার নীতি প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন। এর একটি উদাহরণ হল ভারতবর্ষের জন্য একটি সর্বজনীন পোশাক নির্বাচন। ধৃতি পোশাক কাজের ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক এবং পায়জামা বিদেশী বলে মনে করে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নতুন পোশাকের নকশা তৈরি করেন। তিনি পায়জামার উপরে একটি কাপড় পাট করে মালকোঁচা যুক্ত করে এই নতুন পোশাক তৈরি করেন এবং নিজেই তা ব্যবহার শুরু করেন।

সমাজের রক্ষণশীল মানুষ এই নতুন পোশাক দেখে বিস্মিত হলেও জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাদের কথা গ্রাহ্য করেননি। রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেছেন যে, দেশের জন্য প্রাণ দেওয়ার মানুষ অনেক থাকলেও, স্বাদেশিকতার প্রতি এমন দৃঢ় বিশ্বাস ও সাহস প্রদর্শনের ক্ষমতা কেবল জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই ছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ স্বাদেশিকতার নেশায় উৎসাহিত হয়ে নানা নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করতেন। তিনি কিছুকাল ধরে প্রবলভাবে কাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু ব্যর্থ হলেও তিনি কখনো হাল ছেড়ে দেননি। জ্যোতিরিন্দ্রনাথের এই অদম্য চেতনা ও দেশপ্রেম ঠাকুর পরিবারের সকলকেই অনুপ্রাণিত করেছিল।

রবীন্দ্রনাথ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের স্বাদেশিকতার এই উদাহরণ তুলে ধরে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। যদিও জ্যোতিরিন্দ্রনাথের উদ্যোগ সবসময় সফল হয়নি, তবুও তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও দেশপ্রেম আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।

Share via:

মন্তব্য করুন