নবম শ্রেণি – বাংলা – নোঙর – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

কবিতাটি একটি রূপকধর্মী কবিতা। কবিতায় নোঙরকে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। নোঙর ছাড়া একটি জাহাজ কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। ঠিক তেমনি, জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়া মানুষ কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না।

Table of Contents

কবিতাটিতে কবি জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেছেন, জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়া জীবন অর্থহীন। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মানুষকে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

নোঙর – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। — এখানে কবির আক্ষেপ কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?

অথবা, নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। — মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।

কবির আক্ষেপ – নোঙর এখানে বন্ধনের এবং তট বাস্তবজীবনের প্রতীক। সুদূরের পিয়াসি কবির মন অজানা-অচেনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে চায় দূর সমুদ্রপারে। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে তিনি নানা কর্মের বন্ধনে বাঁধা পড়ে আছেন। সংসারের বিভিন্ন দায়িত্ব-কর্তব্যে তাঁর দৈনন্দিন জীবন বাঁধা। কবিমন সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্তি চায়, ছুটে যেতে চায় স্বপ্ন-কল্পনার মায়াবী জগতে। কিন্তু মন চাইলেও বাস্তবকে উপেক্ষা করে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।

সারারাত মিছে দাঁড় টানি, / মিছে দাঁড় টানি। — দাঁড় টানাকে কবি মিছে বলেছেন কেন?

দাঁড় টানাকে মিছে বলার কারণ – অজানার প্রতি আকর্ষণ কবির মনকে প্রতি মুহূর্তে চঞ্চল করে তোলে, কিন্তু বাস্তবে কবির পক্ষে সেখানে পৌঁছোনো সম্ভব হয় না। তবু কবির সুদূর পিয়াসি মন আশায় বুক বেধে সারারাত ধরে কল্পনার জাল বুনে চলে। কিন্তু কবির সচেতন সত্তা জানে, নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। অর্থাৎ জীবনের নৌকা দায়দায়িত্বপূর্ণ কর্মমুখর সংসারে বাঁধা পড়েছে। সে নৌকা আর চলবে না । তাই দাঁড় টানা বৃথা।

এ-তরীতে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে তারা ছোটে। — পঙ্ক্তিটির অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো।

অন্তর্নিহিত অর্থ – বাধাহীন জীবনের খোঁজে কবি দূর সিন্ধুপারে পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনতরি কর্মময় বাস্তবতার নোঙরে বাঁধা পড়েছে। জোয়ারের ঢেউগুলি কবির নৌকায় ঘা দিয়ে সমুদ্রের দিকে চলে যায়। সেই সমুদ্রের দিকে কবিও যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সংসারের বন্ধনে তিনি আবদ্ধ। কবির স্থিতিশীল জীবনে গতিশীল ঢেউগুলি নানা স্বপ্ন-ইচ্ছে-কল্পনার প্রতীক। কবির জীবন-নৌকাকে বন্ধনমুক্ত করতে চেয়ে তারা ব্যর্থ হয়ে মাথা ঠুকে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলে।

তারপর ভাঁটার শোষণ/ স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ। — স্রোতের প্রবল প্রাণ আহরণ করা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

অথবা, তারপর ভাঁটার শোষণ/স্রোতের প্রবল প্রাণ করে আহরণ। — অংশটির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য আলোচনা করো।

অথবা, তারপর ভাঁটার শোষণ — এই কথার অর্থ কী?

তাৎপর্য – জোয়ারের ফলে নদীর জল ফুলে ওঠে আর ভাটা এলে সেই জল নেমে যায়। জোয়ারের স্রোতের প্রবল শক্তিকে দুর্বল করে ভাটার টান। কবির জীবনতরি বাঁধা সংসারের ঘাটে। তাঁর আকুল হৃদয় চায় সাতসাগরে পাড়ি দিতে। কবির বুকে এক বাঁধনহারা উদ্দাম জীবনের আশা জাগে । সে আশা জোয়ারের ঢেউয়ের মতো ফুলে ফুলে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই বাস্তবের ধাক্কায় কবির আশা-উৎসাহ ভাটার শোষণের মতো স্তিমিত হয়ে যায়।

আমার বাণিজ্য – তরী বাঁধা পড়ে আছে। — কথাটির তাৎপর্য লেখো।

তাৎপর্য – কবি তাঁর রচিত সাহিত্যকীর্তিগুলি নিয়ে ভেসে যেতে চান দূরে দূরান্তরে। সাতসমুদ্রের পাড়ের সেই সুদূর জগতে কবি তাঁর মনের আনন্দ খুঁজে পাবেন। এই আশায় কবি প্রতিদিন বুক বাঁধেন, যেন তিনি নৌকার দাঁড় টেনে গন্তব্যে চলেছেন। কিন্তু, পরমুহূর্তেই তাঁর মনে পড়ে যায়, বাস্তব জীবন ও সংসারের দায়িত্ব-কর্তব্য ত্যাগ করে তিনি কোনোদিনই গন্তব্যে যেতে পারবেন না। তাই গভীর হতাশার সঙ্গে কবি আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

সারারাত মিছে দাঁড় টানি — কবি দাঁড় টানাকে মিছে বলেছেন কেন? তারপরেও কবি দাঁড় টেনে যান কেন?

দাঁড় টানাকে মিছে বলার কারণ – অজানার প্রতি আকর্ষণ কবির মনকে প্রতি মুহূর্তে চঞ্চল করে তোলে, কিন্তু বাস্তবে কবির পক্ষে সেখানে পৌঁছোনো সম্ভব হয় না। তবু কবির সুদূর পিয়াসি মন আশায় বুক বেধে সারারাত ধরে কল্পনার জাল বুনে চলে। কিন্তু কবির সচেতন সত্তা জানে, নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে। অর্থাৎ জীবনের নৌকা দায়দায়িত্বপূর্ণ কর্মমুখর সংসারে বাঁধা পড়েছে। সে নৌকা আর চলবে না । তাই দাঁড় টানা বৃথা।
দাঁড় টেনে যাওয়ার কারণ – দাঁড় টানা মিথ্যা জেনেও কবি দাঁড় টেনে যান। কারণ অজানার প্রতি আকর্ষণ মানুষের চিরন্তন। সংসার বন্ধনকে অস্বীকার করতে না পারলেও কল্পনাবিলাসী মন পেতে চায় বন্ধনহীন জীবনের স্বাদ। তটভূমিতে আটকে থাকাটা হয়তো বাস্তবতা কিন্তু সপ্তসিন্ধুপারে অর্থাৎ নিরুদ্দিষ্ট গন্তব্যে পাড়ি দেওয়াটা মনের গভীরে লালিত আরেক রকমের চিরবাসনা। একে থামিয়ে রাখা অথবা এড়িয়ে চলা কবির পক্ষে সম্ভব নয়। সে কারণেই দাঁড় টানা মিথ্যা হবে জেনেও কবি দাঁড় টেনে যান।

নোঙরের কাছি বাঁধা তবু এ নৌকা চিরকাল। — নৌকা কেন চিরকাল নোঙরের কাছিতে বাঁধা?

নৌকা চিরকাল নোঙরের কাছিতে বাঁধা থাকার কারণ – মানুষ মূলত সামাজিক ও সাংসারিক জীব। সমাজ-সংসারের কর্তব্য ও দায়িত্বের বাঁধনে সে সবসময় জড়িয়ে থাকে। কঠোর বাস্তবের সংঘাতে জীবনের অনেক স্বপ্ন-কল্পনাই অপূর্ণ থেকে যায়। কবির জীবনও বাস্তব জগৎ ও সংসারের বাঁধনে বাঁধা পড়ে আছে। কিন্তু সৃষ্টিশীল মানুষের থাকে কল্পনাপ্রবণ মন — যে মন বারবার বাস্তবের বন্ধন ছিন্ন করে দূর অজানায় পাড়ি দিতে চায়। কিন্তু জীবনতরি বাস্তবের দায়িত্ব-কর্তব্যের নোঙরে চিরকাল বাঁধাই পড়ে থাকে।

ততই বিরামহীন এই দাঁড় টানা – বিরামহীন দাঁড় টানা – র মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

তাৎপর্য – অজানার আকর্ষণে মানুষ কোনো দূর গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেরোলেও নানা রকমের প্রতিকূলতা কবির পথ আটকে দেয়। জীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে, তটের কিনারায় নোঙর পড়ে যায়। জীবন কখনও বাধাহীন মসৃণ হতে পারে না। কিন্তু এর ফলে চলা যে চিরকালের মতো থেমে যাবে — তা-ও নয়। গতি এবং এগিয়ে চলার প্রতিই মানুষের রয়েছে চিরকালের আকর্ষণ। তাই তারার দিকে তাকিয়ে দিক-নিশানা যেমন চলতেই থাকে, ঠিক সেরকমই দাঁড় টানাও অব্যাহত থাকে।

স্রোতের বিদ্রুপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে। — স্রোতের বিদ্রুপ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

তাৎপর্য – কবি নৌকা নিয়ে দূর সমুদ্রে পাড়ি দিতে চান। কিন্তু তাঁর সেই নৌকো তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে গেছে। কবির মন বাধা অগ্রাহ্য করে দাঁড় টেনে চলে। প্রতিবার দাঁড় টানলে জলের যে শব্দ ওঠে তা যেন স্রোতের ঠাট্টা-উপহাস। স্রোত গতিশীল, কিন্তু কবির জীবনতরি আটকা পড়ে আছে। কবি চাইলেও সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন করে সুদূরের আহ্বানে নৌকা ভাসাতে পারছেন না। তাই স্রোত কবির এই থমকে থাকাকে ব্যঙ্গবিদ্রুপে বিদ্ধ করে চলে।

নোঙর কবিতাটি একটি গভীর জীবনবোধের কবিতা। এই কবিতায় কবি জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির কথা বলেছেন। তিনি জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, নীতি – নৈতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। এই কবিতাটি আমাদের জীবনে চলার পথে অনেকটা আলোকিত করে।

Share via:

মন্তব্য করুন