নবম শ্রেণী জীবন বিজ্ঞান – জীবন ও তার বৈচিত্র্য – জীবনের প্রধান/মূল বৈশিষ্ট্য – সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণীতে জীবন বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন করা হয় এবং এই অধ্যয়নে জীবন এবং তার বৈচিত্র্য নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচুর ধারণা প্রদান করা হয়। জীবনের প্রধান এবং মূল বৈশিষ্ট্যগুলির বার্তা হয় এবং সংক্ষেপে উত্তরধর্মী প্রশ্ন ও তাদের উত্তর দেওয়া হয়। এই সংক্ষেপ প্রশ্ন-উত্তর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের ধারণা প্রতিরূপ করা হয়, এবং এটি ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের নতুন দিকে দিয়ে উন্নত হতে সাহায্য করে। এই অধ্যায়টির মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন বৈচিত্র্য এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সংক্ষেপে জ্ঞান হয় এবং তাদের উদ্দীপনা প্রদান হয় যে, জীবন একটি অদৃশ্য এবং সুযোগের ধারণা এবং বৃদ্ধির অধিকারী একটি অভিজ্ঞান।

Table of Contents

জড় ও জীবের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

জড় ও জীবের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী বৈশিষ্ট্যসমূহ –

  • নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন
  • সুনির্দিষ্ট ও সুসংহত দেহ সংগঠন
  • কোশীয় প্রোটোপ্লাজমীয় সংগঠন
  • পুষ্টি ও বিপাক
  • বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ
  • শ্বাসকার্য ও শ্বসন
  • চলন ও গমন
  • রেচন
  • উত্তেজিতা
  • দেহের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ বা হোমিওস্ট্যাসিস
  • জনন
  • অভিযোজন, পরিব্যক্তি ও অভিব্যক্তি।

উত্তেজিতা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তেজিতা (Irritability) – কোনো জীবের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ পরিবেশের কোনো পরিবর্তন ঘটলে সেই পরিবর্তনের সাপেক্ষে জীবের মধ্যে সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা লক্ষ করা গেলে, তাকে উত্তেজিতা বলে।
যে সকল কারণে জীবদেহে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, তাদের উদ্দীপক বলে।

উদাহরণ – i. লজ্জাবতী গাছের পাতা স্পর্শ করলে পাতাগুলি মুদে যায়। ii. চলমান কোনো শামুককে স্পর্শ করলে শামুক তার দেহ খোলকের মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়।

চলমান শামুককে স্পর্শ করলে শামুক তার দেহ খোলকে ঢুকিয়ে নেয়

ছন্দবন্ধতা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

ছন্দবন্ধতা (Rhythmicity) – জীবদেহের সমস্ত শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলি নির্দিষ্ট ছন্দে পরিচালিত হয়। জীবের সব শারীরবৃত্তীয় কাজ কিছুক্ষণ সক্রিয় ও কিছুক্ষণ নিষ্ক্রিয় থাকে, আবার নির্দিষ্ট সময় পরে সক্রিয় হয়। এইভাবে সক্রিয় নিষ্ক্রিয় সক্রিয় একটি নির্দিষ্ট ব্যবধানে পর্যায়ক্রমে সংঘটিত হয়। এই অবস্থাকে ছন্দবদ্ধতা বলে।

উদাহরণ – সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পদ্ম, শালুক প্রভৃতি ফুলের প্রস্ফুটিত হওয়া, হৃৎস্পন্দন, ফুসফুসের সংকোচন-প্রসারণ প্রভৃতি।

পদ্মফুল ফুটে ওঠা

জরা ও মৃত্যু বলতে কী বোঝো?

জরা – বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবদেহের শারীরস্থানিক গঠনের ও উপাদানের গুণগত বৈশিষ্ট্যসমূহের পরিবর্তন ঘটে এবং শারীরবৃত্তীয় ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পায়। জীবদেহের এই অবস্থাকে জরা বলে।

মৃত্যু – জরা কবলিত জীবদেহ দীর্ঘ সময়ের সারণিতে চলতে থাকলে একসময় জীবদেহ থেকে জীবনের সমস্ত লক্ষণগুলি অবলুপ্ত হয়। এই অবস্থাকে মৃত্যু বলে।

আদি পৃথিবীর আবহাওয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লেখো।

আদি পৃথিবীর আবহাওয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য –

  • হাইড্রোজেনের প্রাচুর্যতা – আদি পৃথিবীতে হাইড্রোজেনের (H2) প্রাচুর্যতা ছিল। এটি নাইট্রোজনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া (NH3), অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে জলীয় বাষ্প (H2O) এবং কার্বনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে মিথেন (CH4) সৃষ্টি করে।
  • মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতি – আদি পৃথিবীর পরিবেশে অক্সিজেন (O2) মুক্ত অবস্থায় ছিল না। অক্সিজেন জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং বিভিন্ন ধাতব অক্সাইড রূপে উপস্থিত ছিল।
  • ওজোন (O3) স্তরের অনুপস্থিতি – পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বহিঃপ্রান্তে ছাতার মতো ওজোন (O3) স্তর অনুপস্থিত ছিল। ফলে সূর্য থেকে UV রশ্মি, মহাজাগতিক রশ্মি সহজেই পৃথিবীপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ত।

কেমোজেনি কাকে বলে? কোমোজেনির ঘটনাগুলি পর্যায়ক্রমে ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।

আদিম পৃথিবীতে সামুদ্রিক পরিবেশে যে ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে সরল মৌল উপাদান থেকে ক্রমান্বয়ে জটিল জৈব যৌগ সংশ্লেষিত হয় এবং প্রাণ সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থার উৎপত্তি ঘটে, তাকে কেমোজেনি (Chemogeny) বলে।

কেমোজেনির ধারাবাহিক পর্যায়সমূহ – 1. মুক্ত আণবিক অবস্থা → 2. মুক্ত অণুসমূহ থেকে সরল অজৈব যৌগ গঠন (বিজারণধর্মী বায়ুমণ্ডল) → 3. সরল জৈব যৌগের উৎপত্তি (মনোমার) → 4. জটিল জৈব যৌগের উৎপত্তি (পলিমার) → 5. কোয়াসারভেট, মাইক্রোস্ফিয়ারের উৎপত্তি (আদিকোশের প্রাথমিক অবস্থা)

বায়োজেনি কাকে বলে? বায়োজেনির পর্যায়গুলি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো।

প্রায় 3.7 বিলিয়ন বছর আগে প্রোটোসেল বা আদিকোশ সৃষ্টি ও তার জৈব বিবর্তনকে বায়োজেনি বলে। বায়োজেনির পর্যায়গুলি হল –

বায়োজেনির পর্যায়গুলি ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করো

জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত হ্যালডেন ও ওপারিনের মতবাদের মূল বক্তব্যগুলি লেখো।

জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত হ্যালডেন ও ওপারিনের মতবাদের মূল বক্তব্যগুলি হল — 1. পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ও আজকের পৃথিবীর পরিবেশ সম্পূর্ণ আলাদা। আদিম পৃথিবীর পরিবেশে মুক্ত অক্সিজেন অনুপস্থিত ছিল এবং পরিবেশ বিজারণধর্মী ছিল কিন্তু আজকের পৃথিবীর পরিবেশে মুক্ত অক্সিজেন বর্তমান এবং পরিবেশ জারণধর্মী। আজকের এই পৃথিবীতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জীবন সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। 2. প্রায় 370 কোটি বা 3.7 বিলিয়ন বছর আগে আদিম পৃথিবীতে সামুদ্রিক পরিবেশে প্রাথমিক জীবনসদৃশ পদার্থের উৎপত্তি ঘটে। 3. বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের ঘনীভবন ও পলিমারাইজেশনের মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম জীবনের উৎপত্তি ঘটে।

জীববৈচিত্র্যের বিভিন্ন স্তরগুলি সম্পর্কে ধারণা দাও।

জীববৈচিত্র্যের স্তর – জীববৈচিত্র্যকে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত করা হয়। যথা —

  • জিনগত বৈচিত্র্য – একই প্রজাতিভুক্ত জীবের জিনের বৈচিত্র্য বা ভিন্নতাকে জিনগত বৈচিত্র্য বলে।
  • জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে জিন। ক্রোমোজোমের গঠনগত ও সংখ্যাগত এবং জিনের সজ্জাবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটলে জিনগত প্রকরণ সৃষ্টি হয়।
  • প্রজাতি বৈচিত্র্য – কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির জীবের বৈচিত্র্যকে একত্রে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। প্রজাতি হল জীববৈচিত্র্যের একক।
  • বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য -একটি বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রজাতির বা একাধিক বাস্তুতন্ত্রের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রজাতির বৈচিত্র্যকে একত্রে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যকে আবার তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা —

  • আলফা বৈচিত্র্য
  • বিটা বৈচিত্র্য ও
  • গামা বৈচিত্র্য।

নবম শ্রেণীতে জীবন বিজ্ঞান অধ্যয়নের সমাপ্তিতে, ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জীবন এবং এর বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান করার মাধ্যমে এই অধ্যয়ন শক্তিশালী এবং উপকারী হয়েছে। জীবনের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে উত্তরধর্মী প্রশ্ন এবং তাদের উত্তরে আলোচনা করা হয়েছে, যা ছাত্র-ছাত্রীদের মানবিক বৃদ্ধি এবং জীবনবিদ্যায়ী চিন্তা বৃদ্ধির দিকে মুখোমুখি করেছে।

Share via:

মন্তব্য করুন