নবম শ্রেণী জীবন বিজ্ঞান – জীবন ও তার বৈচিত্র্য – জীবনের প্রধান/মূল বৈশিষ্ট্য – টীকা লেখো

নবম শ্রেণীতে জীবন বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়ন এবং অধ্যয়নকারীদের উপকারের জন্য, এই অধ্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আগ্রহজনক। জীবনের মৌলিক এবং প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি চিন্তা করতে এবং বোঝার জন্য এই অধ্যায়টি অমূল্য তথ্য সরবরাহ করে। ছাত্র-ছাত্রীদের বৈচিত্র্যময় জীবন নির্মাণ করতে এবং পৃথিবীবন্দর্শন করতে এই টীকা একটি মৌল্যবান সাধনা।

নবম-শ্রেণী-জীবন-বিজ্ঞান-–-জীবন-ও-তার-বৈচিত্র্য-–-জীবনের-প্রধানমূল-বৈশিষ্ট্য-2-1

প্রোটোপ্লাজমীয় সংগঠন

প্রোটোপ্লাজমীয় সংগঠন (Protoplasm; Protos = আদি ও plasma = গঠন থেকে উৎপত্তি হয়েছে)।

সংজ্ঞা – প্রতিটি এককোশী ও বহুকোশী জীবের দেহে অবস্থিত সজীব কোশে যে অর্ধস্বচ্ছ, কোলয়েডীয়, জেলির মতো পদার্থ বর্তমান, তাকে প্রোটোপ্লাজম বলে।

আবিষ্কার – বিজ্ঞানী দুজারদিন প্রোটোপ্লাজম – কে সারকোড নামে অভিহিত করেন। প্রোটোপ্লাজম নামকরণ করেন বিজ্ঞানী পারকিনজি। বিজ্ঞানী হাক্সলে একে জীবনের ভৌতভিত্তি ও বিজ্ঞানী থমসন একে গতিশীল পদার্থের এক বিস্ময়কর অবস্থা রূপে বর্ণনা করেন।

গঠন – প্রোটোপ্লাজমের গঠনে প্রায় 85% জল, 10% প্রোটিন, 2% লিপিড, 1.5% কার্বোহাইড্রেট এবং 1.5% খনিজ পদার্থ উপস্থিত থাকে।

বিভাগ – প্রোটোপ্লাজম দুটি বিভাগযুক্ত, যথা –

  • নিউক্লিয়াস ও
  • সাইটোপ্লাজম।

কাজ – কোশের প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে যে – সমস্ত সুনিয়ন্ত্রিত জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি সংঘটিত হয় তাদেরই বহিঃপ্রকাশ হল জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত গঠন বা সংশ্লেষমূলক ও ভাঙনমূলক বিক্রিয়া চলে ততক্ষণ পর্যন্তই জীবের দেহে জীবনের লক্ষণগুলি প্রকাশিত হয়।

বৃদ্ধি (Growth)

সংজ্ঞা – জীবদেহের আকার, আয়তন ও শুষ্ক ওজনের স্থায়ী ও ঊর্ধ্বমুখী পরিবর্তনকে বৃদ্ধি বলে। অপচিতি বিপাকের তুলনায় উপচিতি বিপাক বেশি হলে বৃদ্ধি ঘটে।

প্রকারভেদ – জীবদেহে বৃদ্ধি তিন প্রকার। যথা –

  • অঙ্গজ বৃদ্ধি – এই প্রকার বৃদ্ধিতে জীবদেহের আকার, আয়তন বৃদ্ধি পায়।
  • জননগত বৃদ্ধি – এই প্রকার বৃদ্ধিতে জীবদেহে যৌনজনন অঙ্গের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটে ও জননকোশ উৎপন্ন হয়।
  • ক্ষয়পূরণজনিত বৃদ্ধি – এই প্রকার বৃদ্ধি জীবদেহের ক্ষয়পূরণ করে।

গুরুত্ব –

  • জীবদেহে ভ্রুণ, শিশু অবস্থা থেকে পর্যায়ক্রমে পূর্ণাঙ্গ অবস্থা প্রাপ্তির জন্য দায়ী হল বৃদ্ধি। অর্থাৎ, জীবদেহের সামগ্রিক পূর্ণতা প্রাপ্তি বৃদ্ধির জন্যই ঘটে।
  • জীবদেহের জননগত পূর্ণতা প্রাপ্তিতে বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জননগত বৃদ্ধির মাধ্যমেই জীব অপত্য সৃষ্টি এবং বংশবিস্তার করে থাকে।
  • কোশ বিভাজন ও বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবদেহের ক্ষতস্থান নিরাময় হয়।

অভিযোজন (Adaptation)

সংজ্ঞা – পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য জীবদেহের যে গঠনগত, আচরণগত ও শারীরবৃত্তীয় স্থায়ী পরিবর্তন ঘটে তাকে অভিযোজন বলে।

প্রকারভেদ – উৎপত্তির কারণের ভিত্তিতে অভিযোজন দু-প্রকার। যথা –

  • প্রাথমিক অভিযোজন – জলজ পরিবেশে মাছের অভিযোজন।
  • গৌণ অভিযোজন – তিমি, সিল প্রভৃতি স্তন্যপায়ী প্রাণীর জলে অভিযোজন।

অভিযোজনের অভিমুখ অনুসারে অভিযোজন দু-প্রকার। যথা-

  • অভিসারী অভিযোজন – জলে বসবাসকারী মাছ, কচ্ছপ, তিমি, সিল প্রভৃতির অভিযোজন।
  • অপসারী অভিযোজন – ইঁদুর (গর্তবাসী), তিমি (জলবাসী), উট (মরুবাসী), বানর (বৃক্ষবাসী) প্রভৃতি প্রাণীর অভিযোজন।

গুরুত্ব

  • জীবকে পরিবর্তিত পরিবেশে মানিয়ে নিতে ও সঠিকভাবে বংশবিস্তারে সাহায্য করে
  • জীবকে আত্মরক্ষায় সাহায্য করে
  • অভিযোজনের মাধ্যমে জীবের অভিব্যক্তির পথ সুগম হয়।

জীববৈচিত্র্য (Biodiversity)

বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্রে বা পরিবেশে বা বাসস্থানে বসবাসকারী সমস্তরকম উদ্ভিদ, প্রাণী, আণুবীক্ষণিক জীব প্রভৃতি যারা বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তাদের বৈচিত্র্যতাকে একত্রে জীববৈচিত্র্য বলে। জীববৈচিত্র্য বা Biodiversity শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন বিজ্ঞানী W. G. Rosen (1985)।

জীববৈচিত্র্যের মাত্রা –

  • জীববৈচিত্র্য হল পৃথিবীর বুকে জীবনের ব্যাপকতা।
  • বিজ্ঞানী রবার্ট মে (Robert May) – র মতে, পৃথিবীতে মোট জীববৈচিত্র্যের পরিমাণ হল প্রায় 7 মিলিয়ন।
  • প্রতি বছর পৃথিবীর বর্ষা অরণ্য, গভীর সমুদ্র, জলাভূমি থেকে প্রায় 15,000 নতুন জীবপ্রজাতিকে আবিষ্কার করা হচ্ছে।
  • বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে মোট আবিষ্কৃত জীবপ্রজাতির পরিমাণ হল প্রায় 1.7 – 1.8 মিলিয়ন। এদের মধ্যে উন্নত উদ্ভিদের সংখ্যা হল 2,70,000; মেরুদণ্ডী প্রাণীর সংখ্যা হল 53,239; পতঙ্গের সংখ্যা 1,025,000; ছত্রাক 7,200 প্রভৃতি।
  • সমীক্ষায় দেখা যায় পৃথিবীতে জ্ঞাত জীববৈচিত্র্যের মধ্যে প্রাণীপ্রজাতি প্রায় 70% এবং উদ্ভিদপ্রজাতি মাত্র 22%।

নবম শ্রেণীতে জীবন বিজ্ঞান শেখার সমাপ্তিতে, এই অধ্যায়টি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জীবনের মূল এবং প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে ভাল ধারণা দেওয়ার মাধ্যমে জীবনবিজ্ঞানে উদার দৃষ্টিকোণ প্রদান করে। টীকা বসানো হয়েছে এবং এটি ছাত্র-ছাত্রীদের চিন্তা এবং অধ্যায়ে প্রবৃদ্ধি করতে সাহায্য করে, তাদেরকে জীবনের নিজেই এবং পৃথিবীবন্দর্শনে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দেখানোর জন্য প্রস্তুত করতে।

Share via:

মন্তব্য করুন