করোনা মহামারিকালে অনলাইন ক্লাস – ভালো ও মন্দ – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘করোনা মহামারিকালে অনলাইন ক্লাস – ভালো ও মন্দ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

করোনা মহামারিকালে অনলাইন ক্লাস - ভালো ও মন্দ - প্রবন্ধ রচনা

করোনা মহামারিকালে অনলাইন ক্লাস – ভালো ও মন্দ

ভূমিকা – বিশ্ব অর্থনীতি থেকে শুরু করে সমাজমানস কিংবা সভ্যতার অন্যান্য পটভূমিতে বিশ্বায়ন পূর্বেই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সূচিত করেছে। করোনা মহামারি সেই পরিবর্তিত বিশ্বকে আরও বেশি বদলে দিয়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা-স্বাস্থ্যের পাশাপাশি প্রভাবিত হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থাও। লকডাউন সতকর্তাবিধিতে তালা পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে। সতর্কতা জারি হয়েছে প্রাইভেট টিউশনেও। তাই শিক্ষণ প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতেই বিকল্প হিসেবে শুরু হয়েছে অনলাইন ক্লাস।

অনলাইন ক্লাস কী – ইনটারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে মোবাইল বা কম্পিউটারে ভিডিয়ো বা ভিডিয়ো লাইভের মাধ্যমে যে ক্লাস করা যায়, তাকে অনলাইন ক্লাস বলা হয়। শুধু স্কুলের ক্ষেত্রেই নয়, প্রাইভেট টিউশনের ক্ষেত্রেও এই বিকল্প পথ বেছে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা জাতির ভবিষ্যৎ, সভ্যতার মানদণ্ডস্বরূপ, তাকে অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থেই কার্যকরী হয়েছে অনলাইন ক্লাস। দেশবিদেশের স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞরাও দ্য বেঙ্গল চেম্বার আয়োজিত অনলাইন কনক্লেভে উপস্থিত হয়ে এই অনলাইন ক্লাসের সপক্ষে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

সুফল – বিশ্বব্যাপী কোভিড প্রভাব, বারংবার করোনা ঢেউ -এর হানায় গৃহবন্দী শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধিকে মান্যতা দিয়েই অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার দ্বারা উপকৃত হল। ভারতবর্ষের ডিজিটালাইজেশন যেখানে দুর্লভ পরিষেবাকেও সহজলভ্য করে তুলেছে, সেখানে গুগল মিট বা কনফারেন্স কল সহজেই শিক্ষক-শিক্ষিকার লেকচার, লাইভক্লাস, শিক্ষণ উপকরণকে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। প্রয়োজনে শিক্ষকের প্রদত্ত ক্লাসগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ নিজস্ব ওয়েবসাইটে সঞ্চয়ও করে রাখছে। ভার্চুয়াল ল্যাব ও শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা তাদের কোর্স, বিভাগ, বিষয়, সেমেস্টার সংখ্যা, কোড দ্বারা নিদিষ্ট পোর্টাল ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ লেকচার, মডিউল, অ্যাসাইনমেন্ট-সহ বিবিধ পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে।

প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সরাসরি সাক্ষাৎ ছাড়াও অনলাইন ক্লাসে ছাত্র-শিক্ষকের ভাববিনিময়, প্রশ্নোত্তর পর্বের সুযোগ থাকছে। ক্লাসে অনুপস্থিতি সত্ত্বেও পেজে সংরক্ষিত তথ্য দ্বারা পূর্ব ক্লাসসমূহ ছাত্রদের কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠছে। এমনকি প্রয়োজনীয় তথ্যের সন্ধানে ক্লাস চলাকালীন ছাত্ররা গুগল বা অন্যান্য মাধ্যম দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। বলাবাহুল্য, সরকারি নির্দেশনায় অনলাইনেই প্রায় সমস্ত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় মূল্যায়ন পদ্ধতি অব্যাহত রেখেছে। উত্তীর্ণের হারও আশাব্যঞ্জক।

কুফল – ভারতবর্ষ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে অবস্থান করে। ফলে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গেই সাক্ষরতার হার 80.5 শতাংশ। অথচ তার 9.4 শতাংশ শিক্ষার্থী কম্পিউটার ব্যবহারের এবং 16.5 শতাংশ ইনটারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ ঘাটতিও একটি অন্যতম অন্তরায়। এ ছাড়া, সরকারি বি এস এন এল পরিষেবা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারিভাবে ইনটারনেট পরিষেবাদানেও সরকার অক্ষম। ফলে অনলাইন ক্লাসের সুবিধাদান এ দেশে বৈষম্য গড়ে তুলেছে মাত্র।

শ্রমজীবী প্রান্তিক পরিবারগুলিতে ইনটারনেট পরিষেবা অপ্রতুল, খরচসাপেক্ষ। ফলে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা একটি নির্দিষ্ট নাগরিক শ্রেণির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে থাকছে। যদিও ওয়াইফাই সিস্টেমের সুবিধালাভের পরও কল ড্রপ, ধীরগতির পরিষেবা সমস্যা সৃষ্টি করছে।

স্কুল-কলেজের ক্লাসের পাশাপাশি প্রাইভেট টিউটরের আধিক্য অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার সময় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হয়ে উঠেছে। অপরদিকে প্রান্তবাসী শিক্ষার্থীরা সুযোগের অভাবে বিকল্প হিসেবে কর্ম সংস্থানের চেষ্টায় রত।

ইনটারনেটের অপ্রতুলতা, স্টোরেজের সীমাবদ্ধতা, সংরক্ষণের অভাব অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। ক্লাসের ধীরগতি, সরাসরি ভাববিনিময়ের অভাব বিশেষত নার্সারি বা প্রাইমারি শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আনছে। ক্লাসের সুযোগ নিয়ে ইনটারনেটের প্রতি অতিরিক্ত ঝোঁক শিক্ষার্থীদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যহানি ঘটাচ্ছে। মূল্যায়ন পদ্ধতির ক্ষেত্রে শৈথিল্য, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ব্যাহত করছে।

উপসংহার – তথাপি, কোভিড-19 বিশ্বব্যাপী সর্বক্ষেত্রেই যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, এই প্রতিকূলতার মধ্যেও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমকে সক্রিয় রাখতে অবিলম্বে আমাদের দেশে ইনটারনেট পরিষেবার উন্নতিবিধান আশু কর্তব্য। নচেৎ শিক্ষা ব্যাহত হলে সমগ্র দেশের পরিকাঠামোগত বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। তাই প্রান্তবাসী শিক্ষার্থীকে অনলাইন শিক্ষা পরিষেবার সুযোগ দেওয়া নৈতিক কর্তব্য। কারণ শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। তাই স্বাস্থ্যবিধিকে মান্যতা দিয়েই সার্বিকভাবে অনলাইন শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিই দেশের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘করোনা মহামারিকালে অনলাইন ক্লাস – ভালো ও মন্দ‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী - সত্যেন্দ্রনাথ বসু - প্রবন্ধ রচনা

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু – প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন - প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন – প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ - প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী – সত্যেন্দ্রনাথ বসু – প্রবন্ধ রচনা

ইনটারনেট ও আধুনিক জীবন – প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ও মানুষের ভবিষ্যৎ – প্রবন্ধ রচনা

করোনা মহামারিকালে অনলাইন ক্লাস – ভালো ও মন্দ – প্রবন্ধ রচনা

ছাত্রজীবনে প্রযুক্তির প্রভাব – প্রবন্ধ রচনা