এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “’ডান্ডি অভিযান’/’লবণ সত্যাগ্রহ’ বলতে কী বোঝো? গান্ধীজির নেতৃত্বে সংঘটিত ডান্ডি যাত্রা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “‘ডান্ডি অভিযান’/’লবণ সত্যাগ্রহ’ বলতে কী বোঝো? গান্ধীজির নেতৃত্বে সংঘটিত ডান্ডি যাত্রা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

‘ডান্ডি অভিযান’/’লবণ সত্যাগ্রহ’ বলতে কী বোঝো?
গান্ধিজি লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করার জন্য 1930 খ্রিস্টাব্দের 12 মার্চ 78 জন অনুগামী নিয়ে সবরমতী আশ্রম থেকে যাত্রা শুরু করে মাত্র 24 দিনে 241 মাইল পথ অতিক্রম করে 5 এপ্রিল গুজরাটেরই সমুদ্র উপকূলবর্তী ডান্ডি নামক স্থানে পৌঁছোন এবং পরদিন, অর্থাৎ 6 এপ্রিল সমুদ্রের জল থেকে স্বহস্তে লবণ তৈরি করে আইন অমান্যের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এই ঘটনা ইতিহাসে ‘ডান্ডি অভিযান’ বা ‘লবণ সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত।
গান্ধীজির নেতৃত্বে সংঘটিত ডান্ডি যাত্রা আলোচনা করো।
1930 খ্রিস্টাব্দের 12 মার্চ দিনটি ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। গান্ধিজি ওই দিন লবণ আইন ভঙ্গ করার জন্য ডান্ডি অভিযান করেন।
ডান্ডি যাত্রাডান্ডি যাত্রা পটভূমি –
1929 খ্রিস্টাব্দের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, সরকারি দমন নীতি, সাইমন কমিশনের প্রতিক্রিয়াশীল নীতির প্রেক্ষিতে মহাত্মা গান্ধী 1930 খ্রিস্টাব্দে ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকা মারফত সরকারের নিকট বন্দিমুক্তি, করের বোঝা রাস ও লবণকর বাতিলের দাবি- সহ 11 দফা প্রস্তাব উত্থাপন করলে বড়োলাট লর্ড আরউইন তা খারিজ করে দেন। তাই গান্ধীজির সামনে আন্দোলন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা ছিল না।
ডান্ডি অভিযান –
জাতীয় কংগ্রেসের আইন অমান্য আন্দোলনে লবণ আইন ভঙ্গ ছিল একটি অন্যতম কর্মসূচি। গান্ধীজি ডান্ডিতে লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলনের শুভ সূচনা করেন। 1930 খ্রিস্টাব্দের 12 মার্চ তিনি 78 জন অনুগামী নিয়ে গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে যাত্রা শুরু করে সুদীর্ঘ 240 মাইল পথ 24 দিনে অতিক্রম করে 5 এপ্রিল ডান্ডিতে পৌঁছোেন। সেখানে 6 এপ্রিল তিনি লবণ প্রস্তুত করে লবণ আইন অমান্য করেন।
লবণ সত্যাগ্রহ –
গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনায় লবণ সত্যাগ্রহকে বেছে নিয়েছিলেন, কারণ –
- তিনি চেয়েছিলেন এই আন্দোলনে দেশের নিম্নবিত্ত মানুষদের শামিল করাতে এবং
- এই আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে।
ডান্ডি অভিযানের গুরুত্ব –
গান্ধীজির ডান্ডি অভিযান সারা ভারতে এক অভূতপূর্ব উন্মাদনা সৃষ্টি করে। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মানুষ আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেয়। ফলে ভারতীয় রাজনীতিতে আইন অমান্য আন্দোলন (1930-1934 খ্রিষ্টাব্দ) এক আলাদা মাত্রা পায়। যেমন –
- এই অভিযানের মধ্য দিয়ে সারাদেশ জুড়ে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়।
- গান্ধীজির লবণ সত্যাগ্রহের সূত্র ধরে দেশের নানা প্রান্তে লবণ আইন ভঙ্গ করার সূচনা হয়।
- ডান্ডি অভিযানে গান্ধীজির উদ্দেশ্য সফল হয়। কারণ তিনি চেয়েছিলেন লবণ সত্যাগ্রহের মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তর সংখ্যক নিম্নবিত্ত মানুষকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে শামিল করতে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
ডান্ডি অভিযান বা লবণ সত্যাগ্রহ কী?
1930 সালের 12 মার্চ মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ লবণ আইন ভঙ্গের জন্য গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে 78 জন অনুগামীসহ ডান্ডি গ্রামের উদ্দেশ্যে একটি শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা শুরু করেন। 24 দিনে 241 মাইল পথ অতিক্রম করে 6 এপ্রিল তিনি ডান্ডি সমুদ্রতটে পৌঁছে স্বহস্তে লবণ তৈরি করে আইন অমান্য করেন। এই ঘটনাই ডান্ডি অভিযান বা লবণ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।
ডান্ডি অভিযানের পটভূমি কী ছিল?
ডান্ডি অভিযানের পটভূমি ছিল –
1. 1929-1930 সালের অর্থনৈতিক মন্দা ও ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে গান্ধীজি 11 দফা দাবি পেশ করেন (যেমন – লবণ কর বাতিল, বন্দিমুক্তি, কর হ্রাস ইত্যাদি)।
2. লর্ড আরউইন এই দাবিগুলি প্রত্যাখ্যান করলে গান্ধীজি আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন।
3. লবণ কর ছিল ব্রিটিশ শাসনের প্রতীক, যা গরিব মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করত। তাই গান্ধীজি এটিকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু করেন।
ডান্ডি অভিযানের উদ্দেশ্য কী ছিল?
ডান্ডি অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল –
1. ব্রিটিশ আইনের অবৈধতা তুলে ধরা।
2. সর্বজনীন প্রতিবাদ তৈরি করা—লবণ কর গরিব-ধনী সবাইকে প্রভাবিত করত।
3. অহিংস পদ্ধতিতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি করা।
ডান্ডি অভিযানের গুরুত্ব কী?
ডান্ডি অভিযানের গুরুত্ব ছিল –
1. এটি আইন অমান্য আন্দোলনের (1930-1934 সালে) সূচনা করে।
2. সারা ভারতে লবণ আইন ভঙ্গের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে (যেমন – বাংলায় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, দক্ষিণে রাজাজির নেতৃত্বে লবণ সত্যাগ্রহ)।
3. গান্ধীজির নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য শক্তিশালী হয়।
4. আন্তর্জাতিক স্তরে ব্রিটিশ শাসনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
লবণ সত্যাগ্রহ কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
লবণ সত্যাগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ ছিল কারণ –
1. লবণ ছিল দিনআনা-দিনখরচের পণ্য, তাই এটিকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ সহজেই সংগ্রামে যুক্ত হতে পেরেছিল।
2. এটি ব্রিটিশ একচেটিয়া নীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ ছিল।
3. গান্ধীজি প্রমাণ করেন যে অহিংস আন্দোলন দ্বারাও বৃহৎ পরিবর্তন সম্ভব।
ডান্ডি অভিযানের পর কী ঘটেছিল?
1. গান্ধীজিকে 5 মে 1930-এ গ্রেপ্তার করা হয়।
2. দেশজুড়ে লবণ সত্যাগ্রহ ছড়িয়ে পড়ে (মুম্বইয়ের ধারাসন, মাদ্রাজের বেদারণ্যম ইত্যাদি)।
3. গান্ধী-আরউইন চুক্তি (1931 সাল) স্বাক্ষরিত হয়, কিন্তু আন্দোলন পরোক্ষভাবে চলতে থাকে।
ডান্ডি অভিযানকে কেন ইতিহাসে একটি মাইলফলক বলা হয়?
এটি ছিল প্রথম গণ-অসহযোগ আন্দোলন যেখানে লক্ষাধিক মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। এটি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অহিংস প্রতিরোধের মডেল তৈরি করে এবং গান্ধীজিকে বিশ্বব্যাপী শান্তি আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “’ডান্ডি অভিযান’/’লবণ সত্যাগ্রহ’ বলতে কী বোঝো? গান্ধীজির নেতৃত্বে সংঘটিত ডান্ডি যাত্রা আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “’ডান্ডি অভিযান’/’লবণ সত্যাগ্রহ’ বলতে কী বোঝো? গান্ধীজির নেতৃত্বে সংঘটিত ডান্ডি যাত্রা আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন