আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
ভূমিকা – চকমকি পাথর কিংবা কাঠে কাঠে ঘর্ষণের দ্বারা মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখেছে সেদিনই সূচনা হয়েছে বিজ্ঞানের। এই বিজ্ঞানের কল্যাণেই আজ মানুষ চাঁদের মাটিতে, মঙ্গলগ্রহে পা রেখেছে, মহাকাশে স্টেশন স্থাপন করেছে। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষের প্রাত্যহিক জীবনকে সুখস্বাচ্ছন্দ্যে ভরিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানের দৌলতেই মানুষ বুঝেছে –
“কোথাও জীবন আছে-জীবনের স্বাদ রহিয়াছে
জীবনানন্দ দাশ
কোথাও নদীর জল রয়ে গেছে-সাগরের তিতা ফেনা নয়।”
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা – মানবসভ্যতা রথ, বিজ্ঞান তার সারথি। মানবসভ্যতার জন্মকাল থেকেই বিজ্ঞান মানুষের জীবন ও সামাজিক চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রিত করেছে। আমাদের পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিজীবনের সর্বত্রই বিজ্ঞানের ছোঁয়া। ঘরের আসবাবপত্র, নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী, রান্নাবান্না, আহার-বিহার, শিক্ষাদীক্ষা, রোগের চিকিৎসা, খেলাধুলা, বিশাল কর্মজগৎ এককথায় জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে বিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়া আমরা অচল।
রোগনিরাময়ে বিজ্ঞান – শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আমাদের প্রায় প্রতিদিনই বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতে হয়। বিশুদ্ধ পানীয় জল পেতে চাই বিজ্ঞানের সাহায্য। রোগের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে, রোগ নির্ণয় করতে, জীবনদায়ী ওষুধ তৈরি করতে, শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি নির্মাণে বিজ্ঞানের অনিবার্য উপস্থিতি।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান – শিক্ষা সভ্যতার বাহন, শিক্ষার দৌলতেই মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের অধিকারী। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলেই এসেছে মুদ্রণযন্ত্র, আমরা পেয়েছি রাশি রাশি জ্ঞানমূলক বই, খাতা, কাগজ, কলমসহ বিভিন্ন শিক্ষাসহায়ক উপকরণ। আজকাল শিক্ষাব্যবস্থায় স্থান করে নিয়েছে কম্পিউটার, ইনটারনেট, ওয়েবসাইট ও তথ্যপ্রযুক্তির নানা উপকরণ। বছরব্যাপী লকডাউনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গী হয়েছে অনলাইন ক্লাস।
ভ্রমণ ও যাতায়াতে বিজ্ঞান – ভ্রমণব্যবস্থায় বিজ্ঞান এনে দিয়েছে সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও দুরন্ত গতি। বিজ্ঞানের দৌলতে আবিষ্কৃত হয়েছে স্কুটার, রিকশা, মোটর সাইকেল, বাস, লরি, ট্রেন, এরোপ্লেন, জাহাজ-সহ প্রয়োজনীয় যানবাহন।
সংযোগের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান – বিজ্ঞান সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগ এনে দিয়েছে। বিজ্ঞানের অসামান্য অবদানের অন্যতম হল প্রত্যহ সংবাদপত্রের লক্ষ লক্ষ কপি মুদ্রণ ও সরবরাহ। টেলিপ্রিন্টার, অফসেট, টেলেক্স ইত্যাদি বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার মুদ্রণশিল্পে যুগান্তর এনেছে। টেলিফোন, ফ্যাক্স, ই-মেল, ওয়ারলেস ইত্যাদি কত আশ্চর্য রকমের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োগকৌশল দিয়ে বিজ্ঞান আমাদের সহায়তা করছে রাত্রিদিন। লকডাউনকালে ইনটারনেট ব্যবস্থাই কর্মসংস্থাগুলিকে বন্ধ হতে দেয়নি।
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান – আজ কৃষকরা লাঙল, বীজবপন, আগাছা বাছাই, ঝাড়াই মাড়াই, ধান ভানা সবক্ষেত্রেই কলের সাহায্য নিচ্ছেন। এইসব চাষবাসের যন্ত্রপাতি সবই বিজ্ঞানের দৌলতে প্রাপ্ত। তা ছাড়া উচ্চফলনশীল বীজ, কীটনাশক ঔষধ, রাসায়নিক সার কৃষিক্ষেত্রে নিত্য প্রয়োজনীয়-সবই বিজ্ঞানের সৃষ্টি।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের অকল্যাণকর দিক – বিজ্ঞানের একহাতে অমৃতভাণ্ড, অপরহাতে বিষপাত্র। বিজ্ঞানের যন্ত্র কমিয়েছে পরিশ্রম, বাঁচিয়েছে সময়। কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম কমার ফলে মানবদেহে নতুন নতুন রোগ বাসা বাঁধছে, মানুষ হয়ে উঠছে অলস ও পরিশ্রমবিমুখ। যন্ত্রবিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।
উপসংহার – অতিরিক্ত যন্ত্রনির্ভরতা মানুষের জীবনকে যান্ত্রিক করে তুলেছে। বিজ্ঞানকে মানুষ এখন শ্রদ্ধা করছে, সম্ভ্রম করছে এবং তার চেয়েও ভয় বেশি করছে। যে প্রদীপ স্নিগ্ধ আলো ছড়ায়, সেই প্রদীপ মানুষের অসাবধানে উলটে গেলে ঘরে আগুন লাগে। তাই বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও তার সুযোগসুবিধার ফলে আমরা অবশ্যই দৈনন্দিন জীবনে তার আরও বেশি প্রয়োগ ঘটাতে পারি। কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও দেখতে হবে যে অতিরিক্ত যন্ত্রনির্ভরতা যেন আমাদের জীবনকে গ্রাস না করে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন