দক্ষিণ হস্ত মুষ্টি সূত্রটি বিবৃত করো।

এটি একটি নিয়ম যা ব্যবহার করে একটি সোজা তড়িৎবাহী তারের চারপাশে উৎপন্ন চৌম্বক ক্ষেত্রের অভিমুখ নির্ণয় করা যায়। নিয়মটি হলো: তড়িৎবাহী তারটিকে ডান হাত দিয়ে এমনভাবে মুষ্টিবদ্ধ করতে হবে যাতে বুড়ো আঙুলটি তড়িৎপ্রবাহের প্রথাগত দিক (ধনাত্মক থেকে ঋণাত্মক টার্মিনালের দিকে) নির্দেশ করে। তখন মুষ্টিবদ্ধ অন্য আঙুলগুলোর দিকই চৌম্বক ক্ষেত্রের বলরেখার দিক বা অভিমুখ নির্দেশ করবে।

দক্ষিণ হস্ত মুষ্টি সূত্রটি “রাইট-হ্যান্ড গ্র্যাস্প রুল” (Right-Hand Grasp Rule) বা “রাইট-হ্যান্ড রুল ফর স্ট্রেইট কন্ডাক্টর” নামেও পরিচিত।

দক্ষিণ হস্ত মুষ্টি সূত্রটি তড়িৎ ও চৌম্বকত্বের মধ্যকার সম্পর্ক বোঝার একটি মৌলিক নিয়ম। এটি ব্যবহার করে সহজেই তড়িৎপ্রবাহের কারণে সৃষ্ট চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক কল্পনা ও নির্ণয় করা যায়, যা মোটর, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার ইত্যাদি যন্ত্রের কার্যপ্রণালী বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িৎপ্রবাহের দিক বিপরীত করলে চৌম্বক ক্ষেত্রের দিকও বিপরীত হয়ে যাবে। অর্থাৎ, ডান হাতের বুড়ো আঙুল যদি এবার বিপরীত দিকে (তড়িৎপ্রবাহের নতুন দিক) নির্দেশ করে, তবে অন্য আঙুলগুলোও বিপরীত দিকে বেঁকে যাবে, যা চৌম্বক ক্ষেত্রের উল্টো দিক নির্দেশ করবে।

দক্ষিণ হস্ত মুষ্টি সূত্রটি বিশেষভাবে ডান হাতের জন্য প্রযোজ্য। বাম হাত ব্যবহার করলে চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক ভুল হবে। এটি পদার্থবিজ্ঞানের একটি কনভেনশন যা সর্বজনগ্রাহ্য।

সোলেনয়েড বা তারের কুণ্ডলীর জন্য “দক্ষিণ হস্ত নিয়ম” (Right-Hand Thumb Rule) ব্যবহার করা হয়। এ নিয়মে, ডান হাত দিয়ে কুণ্ডলীটিকে এমনভাবে ধরা হয় যাতে আঙুলগুলো তড়িৎপ্রবাহের দিক নির্দেশ করে। তখন সোজা করা বুড়ো আঙুলটি কুণ্ডলীর ভিতরের চৌম্বক ক্ষেত্রের উত্তর মেরুর (N-pole) দিক নির্দেশ করে।

ফ্লেমিং -এর বাম হস্ত দুটি নিয়ম সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়।
1. দক্ষিণ হস্ত মুষ্টি সূত্র ব্যবহার হয় চৌম্বক ক্ষেত্রের দিক নির্ণয় করতে।
2. ফ্লেমিং -এর বাম হস্ত নিয়ম ব্যবহার হয় চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা একটি তড়িৎবাহী তারের উপর ক্রিয়াশীল বলের দিক নির্ণয় করতে (যেমন, মোটরের কার্যপ্রণালী)।

একটি সোজা তড়িৎবাহী তারের চারপাশে উৎপন্ন চৌম্বক ক্ষেত্রের বলরেখাগুলো কেন্দ্রীয় একক তারকে ঘিরে একের পর এক সমকেন্দ্রিক বৃত্তাকার (concentric circles) হয়ে থাকে।

দক্ষিণ হস্ত মুষ্টি নিয়মটি বিখ্যাত ড্যানিশ পদার্থবিদ হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান ওয়ারস্টেড -এর পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি 1820 সালে প্রথম দেখান যে একটি তড়িৎবাহী তারের কাছে একটি কম্পাস সূঁচ বিক্ষিপ্ত হয়, যা তড়িৎ ও চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে সম্পর্ক প্রমাণ করে।

দক্ষিণ হস্ত মুষ্টি নিয়মের প্রয়োগ রয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত অসংখ্য যন্ত্রে, যেমন –
1. বৈদ্যুতিক মোটর – মোটরের আর্মেচারে বলের দিক নির্ধারণে (ফ্লেমিং -এর বাম হস্ত নিয়মের সাথে একত্রে)।
2. জেনারেটর – তড়িৎ উৎপাদনের নীতি বুঝতে।
3. ট্রান্সফরমার – তড়িৎপ্রবাহের পরিবর্তনে চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন বোঝতে।
4. ইলেক্ট্রোম্যাগনেট – একটি কুণ্ডলীর চৌম্বক ক্ষেত্রের মেরু নির্ণয় করতে।