আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি বনভোজনের অভিজ্ঞতা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

একটি বনভোজনের অভিজ্ঞতা
ভূমিকা – প্রথাবদ্ধতা ও দিনযাপনের গ্লানি থেকে মুক্তির আনন্দ পেতে কে না চায়? আর সেই আনন্দের উৎস যদি নদী বা সমুদ্রের ধারে বন্ধুদের নিয়ে বনভোজন হয় তবে তো কথাই নেই। এমনই এক অভিজ্ঞতা বর্ণনায় এই স্মৃতি রোমন্থন।
প্রস্তুতি – শীতের আমেজ, বড়োদিনের ছুটি, পরীক্ষাপর্ব শেষ। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি নৌকা করে চলেছি মন্দারমণি। লক্ষ্য বন্ধু শক্তিদের খামারবাড়ি – সেখানেই হবে আমাদের বনভোজন। ভোরবেলার হালকা কুয়াশার ওড়নায় ঢেকে আছে প্রকৃতি। এমন সময়ে মন চলে নব নিকেতনে।
প্রাথমিক পর্ব – স্রোতের উজান ঠেলে নৌকা করে সাত বন্ধু যখন গন্তব্যে পৌঁছোলাম তখন বেলা প্রায় এগারোটা। কথা হল দুপুরের মেনু হবে ভাত, ডাল, পটল ভাজা, মাংসের ঝোল ও চাটনি। রান্নার দায়িত্ব বন্ধুর খামারবাড়ির তত্ত্বাবধায়কের হাতে ছেড়ে দিয়ে আমরা চললাম তাদেরই ভেড়িতে মাছ ধরতে। শীতকালে জল কম থাকায় মাছ ধরা গেল অনেক – পারশে, চিংড়ি প্রভৃতি। তাই অতিরিক্ত পদ পারশে ভাজা ও চিংড়ির মালাইকারি।
রন্ধনপর্ব – আমি, বিক্রম ও শক্তি লেগে পড়লাম রান্নার কাজে। সবশেষে মালাইকারি রান্নায় ঘটল বিপত্তি নারকেল দুধ আগে করা ছিল – মাছ, মশলা ভেজে দিলাম ওই দুধ ঢেলে। অনেকটা ফোটানোর পরও দেখলাম ঝোল ঘন হচ্ছে না। আদা-কাঁচাকলা সম্বন্ধে যেমনটি ঘটে তেমনটি। যাই হোক বহু পরিশ্রমে প্রথম রান্নার মজাটাই আলাদা।
উপলব্ধি – বনভোজনের আনন্দ অকৃত্রিম। প্রথমত অনভিজ্ঞের রান্না – এই প্রথম বুঝলাম – ভোগে নয়, ভাগের মধ্যেই রয়েছে যথার্থ আনন্দ। মুক্ত প্রকৃতির সান্নিধ্যে ভাব-ভালোবাসার এই ক্ষেত্র আর কোথায় পাওয়া যাবে? ফিরলাম বিকেল গড়িয়ে। সূর্যাস্তের শেষ রাগিণীর বীণ হাতে প্রকৃতিদেবীও বাজিয়ে চলেছেন তাঁর অমর সংগীত।
“শীতের পরশ থেকে থেকে যায় বুঝি ওই ডেকে ডেকে,
সব খোওয়াবার সময় আমার হবে কখন কোন্ সকালে।”
প্রকৃতির সৌন্দর্যময় মণিপদ্মের পাপড়িগুলি সব খুলে দিয়ে ক্রমে বিদায় নেয় সূর্যদেব। মনটা কেন জানি না খারাপ খারাপ লাগছে। এক অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যথা যেন আমার অস্তিত্বকে ক্রমাগত জড়িয়ে ধরতে চাইছে। ঘাটে যখন নৌকা ভিড়ল, দেখলাম আমারই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আমাদের বাড়ীর সর্বক্ষণের কাজের লোক যতীনদা। তার মুখ থেকে যা শুনলুম তা আমার কল্পনাতেও ছিল না। শুনলাম আমার ঠাম্মা মারা গেছেন অথচ ভোরে বেরোনোর মুখে তেমন কোনো উপসর্গই ছিল না তাঁর। বুঝলাম ফেরার পথে আমার মন উচাটনের কারণ।
উপসংহার – এটাই বুঝি জাগতিক সত্য – “জন্মিলে মরিতে হবে/অমর কে কোথা কবে”। এরপর প্রতিমুহূর্ত আমার কাটছিল সেই নিরানন্দময় স্মৃতিতে। বনভোজনের স্বর্ণালী স্মৃতি মুহূর্তে বিস্বাদে ভরে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল বনভোজনে না গেলে বুঝি ঠাম্মার সঙ্গে শেষ কথাটা বলা যেত। সেদিনের সেই স্মৃতি আজও আমার মনের মণিকোঠায় অক্ষয় হয়ে আছে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি বনভোজনের অভিজ্ঞতা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন