একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা

“ওগো আমার শ্রাবণ মেঘের খেয়াতরীর মাঝি,
চিতায় অশ্রুভরা পুরব হাওয়ায় পাল তুলে দাও আজি।”

ভূমিকা – ছোটোবেলা থেকে কবিগুরুর এই গানের সাথে পরিচয় ছিল আমার, কিন্তু খেয়াতরির মাঝি হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি কখনও। মনের সুপ্ত ইচ্ছা নিয়ে আজ এত বছর কাটিয়ে এই সেদিন এক সুযোগ পেলাম, মামার বাড়িতে।

যাত্রার প্রস্তুতি – দিনটা ছিল রবিবার। বর্ষার ছুটিতে আমরা সবাই মামার বাড়িতে। সুবর্ণরেখা নদীর একেবারে পাশেই আমার মামার বাড়ি। ঘন বর্ষায় চারিদিকে আনন্দের ঢেউ। আমার বারবার মনে পড়তে লাগল –

“গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।”

একা নই, সঙ্গে নবীনদাদাও ছিল। নবীনদাদা মাঝির ছেলে। সকালবেলায় বাড়ির নৌকা নিয়ে চুপি চুপি আমায় ডেকে নিয়ে গেল। দুজন নৌকায় উঠলাম। লক্ষ্য সুবর্ণরেখার একটি খাল বরাবর নিরুদ্দেশ যাত্রা।

যাত্রাপথের বর্ণনা – নবীনদাদা হাল ধরল। শুরু হল আমাদের পথচলা। আমরা যেন শরৎচন্দ্রের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের শ্রীকান্ত আর ইন্দ্রনাথ। নবীনদাদা সত্যিই ‘ইন্দ্রনাথ’, মাঝির দক্ষ ছেলে। হাওয়ার অনুকূলে নৌকা দ্রুতগতিতে এগোতে লাগল এক সরু খালের ভিতর দিয়ে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। দু-একটা কুঁড়েঘর কখনো চোখে পড়ে, কখনো পড়ে না। মনের অনাবিল আনন্দে আমি হাত তুলে চিৎকার করতে লাগলাম। দাঁড় টানার দায়িত্ব ছিল আমার। উঃ, কী মজা! দমকা বাতাসে জলের ওপর নৌকা দুলছে, আর তার তালে নেচে উঠছে আমার মনও।

স্থানটির বর্ণনা – এভাবে চলতে চলতে আমরা যে স্থানে পৌঁছোলাম, তারপর আর নৌকা যায় না। কাদাজলের নালা আর সারি সারি শোলা গাছের জঙ্গল। নৌকা থেকে নামলাম না। দেখলাম কিছু সাপ গাছে জড়িয়ে আছে, নদীর জলে দু-একটা মাছ এদিক-সেদিক ছুটছে। নবীনদাদা মাছ ধরতে চাইলেও আমি নামতে দিইনি। আর এগোনো যায় না, সন্ধ্যাও প্রায় আসন্ন। তাই নৌকা নিয়ে আমাদের ফিরে আসতে হল বিষণ্ণ মন নিয়ে।

নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা – নৌকাভ্রমণের এই অভিজ্ঞতা রোমাঞ্চকর। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মাঝেও যে আনন্দ লুকিয়ে আছে, তা হয়তো জানতে পারতাম না, যদি নবীনদাদা সাহায্য না করত। দাঁড় টানার অভিজ্ঞতাও দারুণ। ঝোপঝাড়যুক্ত কাদাজলের মাঝে নৌকা নিয়ে দুই নাবিকের মতো কিছু সময় কাটানো আমার কাছে পরম প্রাপ্তি।

উপসংহার – বাড়ি ফিরে বাবা-মা-মামার বকুনি শুনতে হল, নবীনদাদাও বাদ গেল না। সারাদিনের পরিশ্রমে আমি তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। বৃষ্টি তখনও থামেনি। বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম, শুধু মনের মধ্যে তখনও একটা কথাই শুনলাম –

“শ্রাবণ-গগন বারি ঝরা
কানন বীথি ছায়ায় ভরা,
শুনি জলের ঝরোঝরে
যূথীবনের ফুলঝরা ক্রন্দন।”


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের মাটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের মাটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি বনভোজনের অভিজ্ঞতা - প্রবন্ধ রচনা

একটি বনভোজনের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উদাহরণসহ উদ্ভিদের বিভিন্ন উদ্দীপনায় সাড়া-প্রদানের বিষয়টি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

সংবেদনশীলতা কাকে বলে? উদ্ভিদের সাড়া প্রদানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ভূমিকা

ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি নৌকাভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের মাটিতে কিছুক্ষণ কাটানোর অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা