আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
“কথা কও, কথা কও।
অনাদি অতীত, অনন্ত রাতে কেন বসে চেয়ে রও?
কথা কও, কথা কও।”
ভূমিকা – বাংলাদেশের অতীত কাহিনি জানতে আমার ভীষণ আগ্রহ। কোথায় ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী, কেমন ছিল সেইসব শহর গ্রাম, কেমন ছিল তাদের জীবনযাপন – সবই উঁকি মারে আমার মনের আকাশে। কবিগুরুর এই কবিতা আমার কৌতূহলকে আরও সজাগ সন্ধিৎসু করে, আমাকে বারবার ঘরছাড়া করে।
যাত্রার প্রস্তুতি – বাবা ইতিহাসের শিক্ষক। তাঁর বর্ণনায় বাংলার বহু বিলুপ্ত কাহিনি আমার মনকে নাড়া দেয়। এবছর পুজোর ছুটির সাত দিন আগে বাবা ঘোষণা করলেন – এবার আমাদের ভ্রমণস্থল রাজমহল, যেখানে ষোড়শ শতকের শেষপ্রান্তে রাজা মানসিংহ বাংলার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। কথা শুনে আমি তো মহাখুশি, সেইরাতে আমার আর ঘুম হয়নি।
যাত্রাপথের বর্ণনা – নির্দিষ্ট দিনে ট্রেনে করে মালদা পৌঁছোলাম, সেখান থেকে মানিকচক ঘাট, তারপর লঞ্চে চেপে সোজা রাজমহল ঘাট। লঞ্চে পরিচয় হল এক প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে, তিনি দেখাতে লাগলেন – ওখানেই ছিল পুরোনো রাজমহল। ওই হচ্ছে কালিন্দি নদী, আর ওখানে ছিল বল্লাল সেনের বাগানবাড়ি।
স্থানটির বর্ণনা – দুপুরের দিকে লঞ্চ এসে পৌঁছোলো রাজমহল ঘাটে। বাবার পরিচিত এক বন্ধুর বাড়িতে স্নানাহার সেরে বেরিয়ে পড়লাম। 1594 খ্রিস্টাব্দে আকবরের সেনাপতি মানসিংহ এখানে রাজধানী গড়ে তোলেন। আকবরের নামে এই শহরের নাম আকবরনগর, কিন্তু জনমানসে অপরিবর্তিত থাকল সেই পুরোনো নাম রাজমহল। দেখলাম সিংহীদালান, সুদৃশ্য উদ্যান, দুর্গ-সবই ভগ্ন, বিলুপ্তপ্রায়। দেখলাম শহরের একপ্রান্তে মিরনের কবর, ঘন আমবনের মধ্যে ধ্বংসপ্রায় টাঁকশাল, জুম্মা মসজিদ, মসজিদের ভেতর বাঁধানো জলাশয় আর সুড়ঙ্গপথ। আমার মনে পড়ে যায় –
“মানুষের কত কীর্তি, কত নদী, গিরি, সিন্ধু, মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে।”
অভিজ্ঞতা – রাজমহলের স্মৃতি বিস্ময়কর। কতযুগ আগে চিনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ এখানে এসেছিলেন, তখন তিনি যা দেখেছিলেন, সেই জনপদই এখন রাজমহল। শতাব্দীর পর শতাব্দী কত রক্তক্ষয়ী সংগ্রামই না হয়েছে এখানে। চোখ বুজলেই যেন সেসব ছবি আমার মানসপটে উদ্ভাসিত হয়। দূরে দেখলাম সাদা মেঘ নেমে এসেছে এই ধূলিময় পৃথিবীতে। ক্ষণে ক্ষণে মন পুলকিত হয়ে উঠেছিল বিস্ময়ে এবং গভীর বেদনায় –
“যত দূর চাই নাই নাই,
সে পথিক নাই।”
উপসংহার – এমনই কত রাজমহল গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশে। কিন্তু আজ তার কোনো চিহ্ন নাই। তিনদিন পর ফিরে আসতে হল রাজমহল থেকে। বিদায় রাজমহল। বিষাদে পরিপূর্ণ হৃদয় নিয়ে বাড়ি ফিরলাম, কিন্তু রাজমহলের স্মৃতি আজও আমার মনে উজ্জ্বল।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘ঐতিহাসিক স্থানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন