আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
ভ্রমণ মানে অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানা। আর সেই ভ্রমণ যদি হয় বন্ধুদের সঙ্গে, পাশে থাকে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের নির্দেশনা ও সাহচর্য-তাহলে তো কথাই নেই। কিছুদিন আগে আমার এরকমই এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে দিন কয়েকের জন্য মুরশিদাবাদ ঘুরে এলাম।
যাত্রা শুরু –
2017 খ্রিস্টাব্দের 27 জানুয়ারি লালগোলা এক্সপ্রেস ধরব বলে আমরা সকলে শিয়ালদহ স্টেশনে জড়ো হলাম। আমরা মানে ক্লাস নাইনের তেতাল্লিশ জন ছাত্র, তিন জন স্যার আর ট্যুর অপারেটরের লোকজন। আমাদের আনন্দ তখন দেখে কে! পাখি যেন উড়তে শিখেছে। বাবা-মায়ের মুখগুলো দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল-যেন ছেলেরা অনেকদিনের জন্য অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। ঠিক 10.30 মিনিটে আমাদের ট্রেন ছাড়ল।
অতঃপর মুরশিদাবাদ –
আমরা নির্ধারিত সময়ে মুরশিদাবাদ পৌঁছোলাম। হোটেলের ঘরে আমার তিন সঙ্গী হল আকাশ, সৌম্য আর সায়ন।ব্যাগপত্তর রেখে তিনজনে ঘরের মধ্যে খানিক হুটোপাটি করে নেমে এলাম হোটেলের লনে। বাবা-মার শাসনহীন এক মুক্ত জীবনের উল্লাস যেন আমাদের পেয়ে বসেছে। 28 জানুয়ারি সকালে আমরা গেলাম হাজারদুয়ারি, মিউজিয়াম প্যালেস। নবাবি আমলের অজস্র জিনিস মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। এরপর গেলাম ইমামবড়া আর ঘড়িঘর দেখতে- ঘড়িটা অবশ্য অচল হয়ে আছে। সিরাজ-উদদৌলার নিজের হাতে তৈরি মদিনা এবং কামানও দেখলাম। অদূরে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা, তার তীরে সিরাজের সমাধি। এই গঙ্গা যেন সেই ইতিহাসের একমাত্র সাক্ষী। পরদিন গেলাম কাটরা মসজিদ। এই মসজিদেই রয়েছে নবাব মুরশিদকুলি খাঁ-র সমাধি। সেখান থেকে গেলাম জাহানকোষার তোপখানা দেখতে। সুজিত স্যার আমাদের বললেন, ‘জাহানকোষা’ কথাটির অর্থ বিশ্ববিধ্বংসী। সেখান থেকে মতিঝিল। বিশাল অর্ধচন্দ্রাকৃতি ঝিলের পাশে এক অতি প্রাচীন মসজিদ যেন তার রহস্যময়তা নিয়ে আমাদের আহ্বান করছিল। শেষদিনে আমরা গিয়েছিলাম কাঠগোলা বাগান দেখতে। এটি একটি জৈন মন্দির। পুকুর-গাছপালা দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরে মাইকেল এঞ্জেলোর একটি মর্মর মূর্তি রয়েছে। এরপর নূরপুরে গেলাম রেশমচাষ দেখতে। মুরশিদাবাদের স্মারক হিসেবে দু-একটা রেশমগুটিও সংগ্রহ করে নিলাম।
অন্যকথা –
দেখলাম অনেক কিছু, জানলাম অনেক না-জানা বিষয়। আর তার সঙ্গেই অনুভব করলাম জীবনের এক অচেনা দিক। এতজন বন্ধু একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, থাকা, ঘুরতে যাওয়া, নতুন কিছু দেখার আনন্দ ভাগ করে নেওয়া-এসব সারা জীবনের সঞ্চয়। স্যারেদের সঙ্গে গুরুগম্ভীর সম্পর্কটা যেন অনেক সহজ মনে হতে লাগল। সুজিত স্যারের মজা করা, প্রদীপ স্যারের আবৃত্তি-স্যারেদের এভাবে ক্লাসরুমে তো পাই না। তাই ফেরার সময় স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ হয়ে গেল। ট্রেনে ওঠার পর থেকে অনেকদিন পর্যন্ত তা ছিল। হয়তো এই মন খারাপই আরও মধুর করে রেখেছে মুরশিদাবাদের স্মৃতি।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন