একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আর্টিকেলে, আমরা শিক্ষামূলক ভ্রমণ প্রবন্ধ রচনার বিষয়ে আলোচনা করবো। এই ধরণের প্রবন্ধ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুলের অন্যান্য পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। শিক্ষামূলক ভ্রমণ প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা কারণ এটি শিক্ষার্থীদের তাদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান অর্জন, এবং ব্যক্তিগত বিকাশ সম্পর্কে লিখতে সাহায্য করে।

এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করলে, ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় শিক্ষামূলক ভ্রমণ প্রবন্ধের প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন। রচনাটি লেখার সময়, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:

ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করুন। ভ্রমণের স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিন। ভ্রমণের সময় আপনার অভিজ্ঞতা, শেখা জিনিস, এবং দেখা আকর্ষণীয় স্থানগুলি সম্পর্কে লিখুন। ভ্রমণ থেকে আপনি কী শিখেছেন তা ব্যাখ্যা করুন। ভ্রমণের গুরুত্ব এবং আপনার উপর এর প্রভাব সম্পর্কে একটি সারসংক্ষেপ প্রদান করুন।

একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ – প্রবন্ধ রচনা

একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ - প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা –

ভ্রমণ মানে অচেনাকে চেনা, অজানাকে জানা। আর সেই ভ্রমণ যদি হয় বন্ধুদের সঙ্গে, পাশে থাকে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের নির্দেশনা ও সাহচর্য-তাহলে তো কথাই নেই। কিছুদিন আগে আমার এরকমই এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। স্কুলের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে দিন কয়েকের জন্য মুরশিদাবাদ ঘুরে এলাম।

যাত্রা শুরু –

২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি লালগোলা এক্সপ্রেস ধরব বলে আমরা সকলে শিয়ালদহ স্টেশনে জড়ো হলাম। আমরা মানে ক্লাস নাইনের তেতাল্লিশ জন ছাত্র, তিন জন স্যার আর ট্যুর অপারেটরের লোকজন। আমাদের আনন্দ তখন দেখে কে! পাখি যেন উড়তে শিখেছে। বাবা-মায়ের মুখগুলো দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল-যেন ছেলেরা অনেকদিনের জন্য অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। ঠিক ১০.৩০ মিনিটে আমাদের ট্রেন ছাড়ল।

অতঃপর মুরশিদাবাদ –

আমরা নির্ধারিত সময়ে মুরশিদাবাদ পৌঁছোলাম। হোটেলের ঘরে আমার তিন সঙ্গী হল আকাশ, সৌম্য আর সায়ন।ব্যাগপত্তর রেখে তিনজনে ঘরের মধ্যে খানিক হুটোপাটি করে নেমে এলাম হোটেলের লনে। বাবা-মার শাসনহীন এক মুক্ত জীবনের উল্লাস যেন আমাদের পেয়ে বসেছে। ২৮ জানুয়ারি সকালে আমরা গেলাম হাজারদুয়ারি, মিউজিয়াম প্যালেস। নবাবি আমলের অজস্র জিনিস মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। এরপর গেলাম ইমামবড়া আর ঘড়িঘর দেখতে- ঘড়িটা অবশ্য অচল হয়ে আছে। সিরাজ-উদদৌলার নিজের হাতে তৈরি মদিনা এবং কামানও দেখলাম। অদূরে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা, তার তীরে সিরাজের সমাধি। এই গঙ্গা যেন সেই ইতিহাসের একমাত্র সাক্ষী। পরদিন গেলাম কাটরা মসজিদ। এই মসজিদেই রয়েছে নবাব মুরশিদকুলি খাঁ-র সমাধি। সেখান থেকে গেলাম জাহানকোষার তোপখানা দেখতে। সুজিত স্যার আমাদের বললেন, ‘জাহানকোষা’ কথাটির অর্থ বিশ্ববিধ্বংসী। সেখান থেকে মতিঝিল। বিশাল অর্ধচন্দ্রাকৃতি ঝিলের পাশে এক অতি প্রাচীন মসজিদ যেন তার রহস্যময়তা নিয়ে আমাদের আহ্বান করছিল। শেষদিনে আমরা গিয়েছিলাম কাঠগোলা বাগান দেখতে। এটি একটি জৈন মন্দির। পুকুর-গাছপালা দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরে মাইকেল এঞ্জেলোর একটি মর্মর মূর্তি রয়েছে। এরপর নূরপুরে গেলাম রেশমচাষ দেখতে। মুরশিদাবাদের স্মারক হিসেবে দু-একটা রেশমগুটিও সংগ্রহ করে নিলাম।

অন্যকথা –

দেখলাম অনেক কিছু, জানলাম অনেক না-জানা বিষয়। আর তার সঙ্গেই অনুভব করলাম জীবনের এক অচেনা দিক। এতজন বন্ধু একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, থাকা, ঘুরতে যাওয়া, নতুন কিছু দেখার আনন্দ ভাগ করে নেওয়া-এসব সারা জীবনের সঞ্চয়। স্যারেদের সঙ্গে গুরুগম্ভীর সম্পর্কটা যেন অনেক সহজ মনে হতে লাগল। সুজিত স্যারের মজা করা, প্রদীপ স্যারের আবৃত্তি-স্যারেদের এভাবে ক্লাসরুমে তো পাই না। তাই ফেরার সময় স্বাভাবিকভাবেই মন খারাপ হয়ে গেল। ট্রেনে ওঠার পর থেকে অনেকদিন পর্যন্ত তা ছিল। হয়তো এই মন খারাপই আরও মধুর করে রেখেছে মুরশিদাবাদের স্মৃতি।

শিক্ষামূলক ভ্রমণ আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি, দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি অমূল্য মাধ্যম। কেবল বইয়ের জ্ঞানের চেয়ে বাস্তব জগতের সংস্পর্শে এসে আমরা অনেক বেশি দ্রুত ও সহজে শিখতে পারি। শিক্ষামূলক ভ্রমণ আমাদের মধ্যে দলবদ্ধতা, নেতৃত্ব এবং সহযোগিতার গুণাবলীও বিকাশ করে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষামূলক ভ্রমণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রবন্ধে আমরা শিক্ষামূলক ভ্রমণের গুরুত্ব, সুবিধা এবং কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি এই প্রবন্ধটি আপনাদের জন্য সহায়ক হয়েছে এবং আপনারা ভবিষ্যতে শিক্ষামূলক ভ্রমণের সুযোগ পেলে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবেন।

Share via:

মন্তব্য করুন