আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি শীতের সকাল’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

একটি শীতের সকাল – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
বাংলার ঋতুরঙ্গশালায় শীত আসে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে। শীতের সকালেও থাকে সেই স্বাতন্ত্র্যের ছোঁয়া। মানুষের রোজকার জীবনকে আলস্য আর উপভোগের চাদরে মুড়ে রাখে শীতের সকাল। গরমের অস্বস্তি আর বর্ষার আশঙ্কার বাইরে শীতের সকাল মানে এক অন্যরকম জেগে ওঠা।
শীতের স্বাতন্ত্র্য –
শীত আমাদের বর্ষার মেঘমল্লার শোনায় না, কালবৈশাখীর প্রলয়তাণ্ডবে নিয়ে আসে না নটরাজের প্রলয়নৃত্যের মূর্ছনাও। শীত অনেক বেশি আত্মমগ্ন। শীত মানে বাজারে নতুন সবজি, আপেল আর কমলালেবুর সমারোহ। শীত মানে নলেন গুড়ের পিঠে, পায়েস, জয়নগরের মোয়া। শীত মানে ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার ফুটে ওঠা। শীত এলেই গলির ক্রিকেট, বড়োদিনের কেক আর দেশের সীমানা ভুলে নিউ ইয়ারের হুল্লোড়। শীত মানেই পিকনিকে যাওয়ার হুড়োহুড়ি, সারারাত ধরে গানের আসর আর বইমেলা, চলচ্চিত্র উৎসব। শীতকাল মানে দিনকে ছোটো করে দিয়ে সূর্যের হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, শীত মানেই বন্ধ ঘরে উষ্ণতার খোঁজ।
একটি শীতের সকাল –
শীতের সকাল মানেই কম্বলমুড়ি দিয়ে অলস শুয়ে থাকা, বিছানা ছাড়তে ঘোরতর অনিচ্ছা। মায়ের বারবার ডাকাডাকিতে উঠে পড়তে হয় বটে, কিন্তু মন হয়ে থাকে জবুথবু। সোয়েটার, মাফলারে নিজেকে মুড়ে শুরু হয় দিনের চলা। উষ্ণতার খোঁজে হরলিকসে গলা ভেজানো। জানলা দিয়ে বিছানায় এসে পড়া রোদ্দুরকে তখন বড়ো প্রিয় মনে হয়। কুয়াশার চাদর সরিয়ে তার আসাও সহজ নয়। জানালার সামনে বসে দেখি আশেপাশের কয়েকটি বাড়ির লোকজন একটা গাড়িতে উঠছে। তার মধ্যে নীল, সোনাই-রাও আছে। ওরা আমার বন্ধু। মনে পড়ল ওরা আজ পিকনিকে যাচ্ছে। সামনে পরীক্ষা না থাকলে আমরাও যেতাম। শীতের মজাই তো পিকনিক। যেতে না পারায় আবার মন খারাপ। মন খারাপ কাটল মা যখন কড়াইশুঁটির কচুরি আর জয়নগরের মোয়া নিয়ে এলেন। বাবা এলেন বাজার থেকে। ব্যাগে উঁকি দিচ্ছে ফুলকপি, পিঁয়াজকলি। আজ রবিবার। বাবা বাজার থেকে এনেছেন কমলালেবু, নলেনগুড়ের রসগোল্লা। শীতকে ধন্যবাদ। আমাদের জন্য এই বিপুল আয়োজন করে দিয়েছে সে।
ইতিমধ্যে চারপাশের কুয়াশা প্রায় সরে গেছে। ঝলমল করছে রোদ্দুর। রাস্তায় একজন হেঁকে যাচ্ছে চাই নলেন গুড়, পাটালি। কে জানে কোন্ সকালে কোথা থেকে কত শিশির গায়ে মেখে এই মানুষটা তাঁর যাত্রা শুরু করেছেন। চলার পথের ধারে পড়েছিল কত সোনালি ফুলের সরষের খেত, গোলাভরা ধানের কত জনপদ। আমার জানতে ইচ্ছা হল ওর বাড়িতেও আমার মতো কোনো ছেলে আছে কি না। মনে হল হয়তো তার কোনো সোয়েটার নেই। ঠান্ডাকে দূরে রাখতে সে তার মার সঙ্গে হয়তো আগুনে হাত সেঁকছে। আমার মনে পড়ল সুকান্তের সেই কবিতাটা – ”হে সূর্য। তুমি আমাদের স্যাঁতসেঁতে ভিজে ঘরে/উত্তাপ আর আলো দিও,/আর উত্তাপ দিও/রাস্তার ধারের ওই উলঙ্গ ছেলেটাকে।” এভাবেই শীতের সকাল আমার ভাবনাতরঙ্গে তৈরি করে দেয় অজস্র অভিঘাত। সেই উপলব্ধি যেমন আনন্দের, উপভোগের আবার তেমনই বিষণ্ণতারও।
উপসংহার –
শীতের সকাল এক অলস জাগরণ, সূর্যোদয়ের জন্য অপেক্ষা। শীতের সকাল মানেই বৈচিত্র্যের বিপুল সমারোহ। পড়াশোনা এবং প্রাত্যহিকতাকে একটুও দূরে না সরিয়ে তা নিয়ে আসে নতুন কিছুকে পাওয়ার শিহরণ। শীতের সকাল তাই আমার অভিজ্ঞতায়, বছরজুড়ে জেগে থাকা এক উন্মুখ প্রত্যাশা।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি শীতের সকাল’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি শীতের সকাল’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন