গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? গ্লোবাল ওয়ার্মিং -এর প্রভাব

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি – গ্রিনহাউসের প্রভাবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে বেড়ে চলেছে। যেমন – 1850 থেকে 1900 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0.5°C। আবার, 1900 থেকে 2000 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাপমাত্রা বেড়েছে 1°C। সুতরাং, প্রাকৃতিক পরিবেশ যে ক্রমশ গরম হয়ে উঠছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সারা পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান অবস্থাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব –

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর উল্লেখযোগ্য প্রভাবসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হল –

  • জলবায়ু পরিবর্তন – বিশ্ব উষ্ণায়নের মুখ্য প্রভাব হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। যেমন – অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি। এছাড়া অধিক গরম, খরা, এসিড বৃষ্টি প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে।
  • প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটনের হার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততার ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটনের হার সবচেয়ে বেশি।
  • মেরু অঞ্চলের বরফ গলন – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে 0.3 ডিগ্রি সেলসিয়াস। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে।
  • সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা পরিবর্তন – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিশন, ভিয়েতনাম, ফিজি, কিরিবাতি, টুভ্যালু প্রভৃতি দেশের উপকূলীয় অঞ্চল সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কৃষি জমি লবণাক্ত হয়ে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাবে।
  • জীববৈচিত্র্য ধ্বংস – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীতে বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণিকূল বিলুপ্ত হবে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর বসবাসের অনুকূল পরিবেশে সরাসরি আঘাত হানার মধ্য দিয়ে ধ্বংস সাধন করছে।
  • রোগব্যাধি – উষ্ণায়নের ফলে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, যেমন – ম্যালেরিয়া, এজমা, এলার্জি প্রভৃতি রোগের বিস্তার ঘটেছে।

এছাড়া পৃথিবীর ভূমিক্ষয়, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, মাটির উর্বরতা হ্রাস, প্রাকৃতিক জলাশয়ের উৎস বিনষ্ট হওয়া, খাদ্যে অনিরাপত্তা, বাস্তুসংস্থানের চক্র বিনষ্ট হওয়া, ওজোন স্তরের কার্যক্রম নষ্ট হওয়া, সমুদ্রে অক্সিজেন দ্রবীভূত হওয়ার পরিমাণ করে যাওয়া ইত্যাদি নানা ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে পৃথিবীবাসী।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

গ্লোবাল ওয়ার্মিং কী?

গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার প্রক্রিয়া। গ্রিনহাউস গ্যাস (যেমন – কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড) বৃদ্ধির কারণে সূর্যের তাপ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আটকা পড়ে, যার ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে এবং পৃথিবী উষ্ণ হয়।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রধান কারণ কী?

গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর প্রধান কারণগুলি হলো –
1. জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, তেল, গ্যাস) পোড়ানো,
2. বন উজাড় (ডিফরেস্টেশন),
3. শিল্পায়ন ও যানবাহনের ধোঁয়া,
4. কৃষিকাজে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার,
5. অত্যধিক প্লাস্টিক বর্জ্য ও মিথেন নিঃসরণ।

গ্রিনহাউস ইফেক্ট এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মধ্যে পার্থক্য কী?

1. গ্রিনহাউস ইফেক্ট একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পৃথিবী উত্তপ্ত হয় (সূর্যের তাপ আটকে রাখে)।
2. গ্লোবাল ওয়ার্মিং হলো গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলে এই প্রক্রিয়াটি অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়া, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর প্রভাব কী কী?

গ্লোবাল ওয়ার্মিং -এর প্রভাবগুলি হলো –
1. জলবায়ু পরিবর্তন – অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, খরা, অতিবৃষ্টি, তীব্র গরম,
2. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি – বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সুনামি, দাবানল,
3. মেরু অঞ্চলের বরফ গলন – সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি,
4. জীববৈচিত্র্য ধ্বংস – অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে,
5. স্বাস্থ্যগত সমস্যা – ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, শ্বাসকষ্টের মতো রোগ বৃদ্ধি,
6. কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি – ফসল উৎপাদন কমে যাওয়া, মাটির উর্বরতা হ্রাস।

ব্যক্তিগতভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে কী করা যায়?

ব্যক্তিগতভাবে গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে যা করা যায় তা হলো –
1. এনার্জি সেভ – অপ্রয়োজনে লাইট, ফ্যান বন্ধ রাখা।
2. পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহার।
3. গাছ লাগানো।
4. প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো।
5. সচেতনতা বাড়ানো।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “গ্লোবাল ওয়ার্মিং কাকে বলে? এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “পরিবেশের জন্য ভাবনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik English Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ