এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গোরা কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল? গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোন্ দ্বন্দ্বের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “গোরা কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল? গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোন্ দ্বন্দ্বের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

গোরা কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল?
1910 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’ উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হল উদার জাতীয়তাবাদের জাগরণ। সুবিশাল এই উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘গোরা’র পালিকা মা আনন্দময়ীর মতো ভারতমাতার কাছেও কোনো জাত-পাতের ভেদাভেদ নেই, জাত থাকলে ভারতবর্ষ যুগে যুগে ‘মহামানবের মিলনক্ষেত্র’ হয়ে উঠত না। উপন্যাসের শেষ অধ্যায়ে গোরার আত্মোপলব্ধির মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক সর্বভারতীয় রূপটি তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ।
গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোন্ দ্বন্দ্বের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়?
কবিগুরুর সুবিখ্যাত ‘গোরা’ উপন্যাসে আমরা সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ বনাম উদার জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি বনাম ধর্মীয় প্রগতিশীলতার অভ্যন্তরীণ ঘাত-প্রতিঘাত প্রত্যক্ষ করি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরা প্রথম জীবনে নিষ্ঠাবান হিন্দুরূপে অন্যান্য সকল ধর্মের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করলেও উপন্যাসের শেষ পর্বে সে উপলব্ধি করে যে, তার পালিকামাতা আনন্দময়ীর মতো ভারতমাতারও কোনো জাতিগত এবং ধর্মীয় সংকীর্ণতা নেই। গোরার এই আত্মোপলব্ধির মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবোধের অসাম্প্রদায়িক সর্বভারতীয় রূপটি তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গোরা উপন্যাসের শেষে গোরার আত্মোপলব্ধি কী ছিল?
উপন্যাসের শেষে গোরা জানতে পারে যে সে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নয়, একজন আইরিশ বাবা ও ভারতীয় মায়ের সন্তান। এই সত্য জানার পর সে উপলব্ধি করে যে জাতি-ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাই প্রকৃত ধর্ম। আনন্দময়ীর মতো ভারতমাতার কোনো সংকীর্ণ পরিচয় নেই – ভারতবর্ষ সকলের মিলনক্ষেত্র।
গোরা উপন্যাসে আনন্দময়ীর চরিত্রের তাৎপর্য কী?
আনন্দময়ী ভারতমাতার প্রতীক। তিনি ধর্ম-জাতি-বর্ণের ঊর্ধ্বে, সকলকে সমান ভালোবাসেন। তাঁর চরিত্রের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন যে সত্যিকারের দেশপ্রেম সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত।
গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী দর্শন কী?
রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদ “মানবধর্মী ও অসাম্প্রদায়িক”। তিনি “ভারতীয় ঐক্য”কে ধর্ম-বর্ণের বিভেদের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। ‘গোরা’ উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন যে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের সমন্বয়েই ভারতের প্রকৃত শক্তি।
গোরা উপন্যাসে নারী চরিত্রগুলির গুরুত্ব কী?
গোরা উপন্যাসে নারী চরিত্রগুলির গুরুত্ব –
1. সুচরিতা – ব্রাহ্মসমাজের মেয়ে, যুক্তিবাদী ও স্বাধীনচেতা। সে গোড়ামি প্রত্যাখ্যান করে।
2. ললিতা – বিদ্রোহী ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
3. আনন্দময়ী – সর্বজনীন মাতৃরূপ, যিনি জাত-পাতের ঊর্ধ্বে। তিনি ভারতমাতার প্রতীক।
4. পান্নাবালী – নিম্নবর্ণের নারী, যার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ বর্ণভেদের অসারতা দেখিয়েছেন।
গোরা উপন্যাসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কী?
গোরা উপন্যাসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট –
1. বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন (1905) – রবীন্দ্রনাথের জাতীয়তাবাদী ভাবনা এই আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত।
2. স্বদেশী আন্দোলন – গোরার চরিত্রে স্বদেশপ্রেম ও স্বাধিকার চেতনা ফুটে উঠেছে।
3. ব্রাহ্ম-হিন্দু সংঘাত – 19শ শতকের বাংলার সামাজিক দ্বন্দ্ব উপন্যাসে প্রতিফলিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “গোরা কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল? গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোন্ দ্বন্দ্বের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “গোরা কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভাবধারাকে উদ্দীপ্ত করেছিল? গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোন্ দ্বন্দ্বের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায় “সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।