এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়ার শিল্পোৎপাদনের শর্তাবলি ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়ার শিল্পোৎপাদনের শর্তাবলি ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।
অথবা, হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া উৎপাদনের নীতিটি লেখো।
অথবা, হেবার পদ্ধতিতে কোন্ গ্যাস প্রস্তুতি করা হয়। এক্ষেত্রে শর্ত ও বিক্রিয়া লেখো।
হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া প্রস্তুতি – উদ্দীপক হিসেবে অ্যালুমিনা ও K₂O মিশ্রিত আয়রন চূর্ণ অনুঘটকের উপস্থিতিতে 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে 450°C তাপমাত্রায় 1 : 3 আয়তন অনুপাতে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াটি উভমুখী ও তাপমোচী।
N₂ + 3H₂ ⇌ 2NH₃ + 22.4 kcal
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হেবার পদ্ধতি কী?
হেবার পদ্ধতি হল একটি শিল্পভিত্তিক রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত হাইড্রোজেন গ্যাস বিক্রিয়া করে সরাসরি অ্যামোনিয়া (NH₃) উৎপন্ন করা হয়।
হেবার পদ্ধতির রাসায়নিক সমীকরণটি লেখো।
বিক্রিয়াটির সমিত রাসায়নিক সমীকরণ হল –
N₂ (g) + 3H₂ (g) ⇌ 2NH₃ (g) + 22.4 kcal
হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি কী কী?
হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়া উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি-
1. উপাদান – নাইট্রোজেন (N₂) ও হাইড্রোজেন (H₂) গ্যাস 1 : 3 আয়তন অনুপাতে।
2. চাপ – উচ্চ চাপ, সাধারণত 200 atm (বা 200-300 atm পরিসরে)।
3. তাপমাত্রা – মধ্যম তাপমাত্রা, সাধারণত 450°C (বা 4°C-500°C পরিসরে)।
4. অনুঘটক – লোহা (Fe) চূর্ণ, যা সাধারণত অ্যালুমিনা (Al₂O₃) ও পটাসিয়াম অক্সাইড (K₂O) দিয়ে প্রোমোট করা হয়।
5. ধরন – এটি একটি উভমুখী (Reversible) ও তাপমোচী (Exothermic) বিক্রিয়া।
হেবার পদ্ধতিতে প্রক্রিয়ায় অনুঘটকের ভূমিকা কী?
লোহার তৈরি অনুঘটকটি বিক্রিয়ার সক্রিয়ন শক্তি (Activation Energy) কমিয়ে দেয়, যা বিক্রিয়ার গতি বৃদ্ধি করে। তবে, এটি সাম্যাবস্থার অবস্থান (Equilibrium Position) পরিবর্তন করে না।
হেবার পদ্ধতিতে উচ্চ চাপ প্রয়োগ করা হয় কেন?
বিক্রিয়াটির বাম পাশে (N₂ + 3H₂) মোট ৪ মোল গ্যাস এবং ডান পাশে (2NH₃) মোট 2 মোল গ্যাস রয়েছে। লা শাতেলিয়ারের নীতি অনুসারে, উচ্চ চাপ প্রয়োগ করলে সাম্যাবস্থা সেই দিকে সরে যায় যেখানে আয়তন বা মোল সংখ্যা কম। তাই উচ্চ চাপ প্রয়োগে সাম্যাবস্থা অ্যামোনিয়া উৎপাদনের দিকে (ডান দিকে) সরে যায়, ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
হেবার পদ্ধতির গুরুত্ব কী?
এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণে অ্যামোনিয়া উৎপাদন সম্ভব হয়, যা মূলত সারের (ইউরিয়া) উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এটি কৃষি উৎপাদন বিপ্লবের মূল ভিত্তি এবং বিশ্বের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
হেবার পদ্ধতিতে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া কীভাবে সংগ্রহ করা হয়?
বিক্রিয়া মিশ্রণ থেকে গ্যাসীয় অ্যামোনিয়াকে তরলীকরণ (ঠান্ডা করে) করার মাধ্যমে আলাদা করা হয়। অপ্রতিক্রিয়াশীল নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাস পুনরায় বিক্রিয়কের চেম্বারে ফেরত পাঠানো হয় (পুনঃসঞ্চালন)।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “হেবার পদ্ধতিতে অ্যামোনিয়ার শিল্পোৎপাদনের শর্তাবলি ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন