আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
ভূমিকা – শিক্ষা সর্বব্যাপী, বহুদূর প্রসারী। শিক্ষা যেমন ব্যক্তিমানসকে সংস্কৃতি, প্রজ্ঞা, অনুশাসন-শৃঙ্খলাবোধ-শিষ্টাচারে সমৃদ্ধ করে তেমনি আবার সমাজ মানসকে ঋদ্ধ করে যার সুফল বর্তায় সমাজ-দেশ-জাতিতে। কিন্তু শিক্ষার উৎস কেবলমাত্র প্রতিষ্ঠানিক গ্রন্থনির্ভরতায় সীমাবদ্ধ নয়। পারিপার্শ্বিক বিবিধ ঘটনা-অভিজ্ঞতা থেকেও মানুষের শিক্ষাপ্রাপ্তি ঘটে। আর পাঠক্রম বহির্ভূত এই শিক্ষায় আধার হিসেবে গণশিক্ষার সূত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা সর্বজনস্বীকৃত। শিক্ষাকে যুগপৎ দৃশ্য ও শ্রাব্য করে তুলে শিক্ষণীয় বিষয়কে মনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রেরণায় ও কৌতূহলে আনন্দরসাশ্রিত করে উপস্থাপন করেছে গণমাধ্যম। দূরকে করেছে নিকট, সাড়া দিয়েছে অজানার হাতছানিতে। আবার গণমাধ্যমের নেতিবাচকতা বিপন্ন করেছে উজ্জ্বল সম্ভাবনাকে। তবুও পৃথিবীব্যাপী সর্বশিক্ষা অভিযানে গণমাধ্যমের ভূমিকা তৎপর্যপূর্ণ।
গণমাধ্যম কী? – সভ্যতার আদিলগ্নে, তপোবনের নিসর্গ-প্রকৃতির শান্ত-স্নিগ্ধ ছায়াতলে গুরুগৃহে শ্রুতিনির্ভর যে শিক্ষাব্যবস্থার প্রারম্ভকাল রচিত হয়েছিল, তা ছিল জীবনোপযোগী। পরবর্তীকালে গণশিক্ষা বা লোকশিক্ষার ভূমিকা নিয়েছিল ছড়া, ব্রতকথা, পাঁচালি, কথকতা, পুরাণগাথা ইত্যাদি। ক্রমে সভ্যতার অগ্রগতিতে উন্নত হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যাদের হাত ধীরে সংবাদপত্র, বেতার দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, ইনটারনেট লোকশিক্ষকের ভূমিকাতে অবতীর্ণ হল।
সংবাদপত্র – সংবাদপত্র বর্তমান পৃথিবীর এক অপরিহার্য বন্ধু। দেশবিদেশের নানাবিধ সংবাদে সজ্জিত হয়ে সে নিজেকে মেলে ধরে কৌতূহলী জনমানসের ক্ষুধানিবৃত্তির লক্ষ্যে। বিশ্ব রাজনীতি থেকে শুরু করে কৃষিশিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি, খেলাধূলা-সিনেমা থিয়েটার সংক্রান্ত নানা প্রতিবেদন, অর্থনীতি-ইতিহাস-ভূগোল-দর্শন-বিজ্ঞানের জ্ঞানগর্ভপ্রবন্ধাবলি সচিত্র বিজ্ঞাপন নানা আলোকে সাধারণ মানুষের চেতনার উন্মেষ ঘটায় সংবাদপত্র। এ ছাড়াও শিশু ও মহিলাদের মনোরঞ্জনকারী বিভাগ মুদ্রণে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস বার্তায়, কর্মসংস্থানের খুঁটিনাটি নির্দেশে, বাজারদরের গতিপ্রকৃতি বর্ণনায় বিশ্বমানবের বৃহত্তর জীবনচিত্র উপস্থাপনে কেবল শিক্ষাবিস্তারে নয়, আধুনিক জনজীবনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বেতার – শহর-গঞ্জের সীমানা ছড়িয়ে দূরতম পল্লির কুটির-আঙিনায় যার ধ্বনিমাধুর্য বৈচিত্র্যের নিত্য-নতুন আস্বাদনে ভরিয়েছে কোনো পল্লি কৃষকের মন-প্রাণ, সে বেতার মাধ্যম। চিত্ত বিনোদন থেকে শুরু করে জ্ঞানবিজ্ঞান, খেলাধুলা, নাট্যাভিনয়, পল্লিবাংলার স্বার্থে পল্লিমঙ্গল আসর, কৃষিকথাধর্মী বেতারানুষ্ঠান, কৃষিসমস্যা সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের আলোচনা-অভিমত এই মাধ্যমকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
দূরদর্শন – বেতার যদি মৌখিক শিক্ষণের শ্রাব্য-মাধ্যম হয় মাত্র, তবে জনসাধারণের অতৃপ্তি চরিতার্থতায় বিজ্ঞানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অবদান দূরদর্শন – যা যুগপৎ দৃশ্য-শ্রাব্য। আবালবৃদ্ধবণিতা, কৃষিজীবী থেকে বুদ্ধিজীবী, শহরবাসী থেকে পল্লিবাসী সকলের জীবনে দূরদর্শনের প্রভাব অতি প্রকট। দূরদর্শনে সম্প্রচারিত ক্যুইজ, জ্ঞান-বিজ্ঞানমূলক আলোচনা, তথ্যচিত্র, ঐতিহাসিক-ভৌগোলিক, ঘটনাসমূহ, বিশ্বসংবাদের খণ্ড চিত্র-চলচ্চিত্র ছাত্রসমাজকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। শ্রুতি ও দৃষ্টিনন্দন মাধ্যম হিসেবে দূরদর্শনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
চলচ্চিত্র – লোকশিক্ষা ও লোকমনোরঞ্জনের মাধ্যম স্বরূপ চলচ্চিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। কাহিনিচিত্র, নিউজরিল, তথ্যচিত্র, মানুষের জ্ঞানের প্রসার ঘটায়। অবসরযাপনে, সংস্কৃতিবোধের প্রসারে, মূল্যবোধের বিকাশে চলচ্চিত্র আধুনিক জীবনের অন্যতম গণমাধ্যম।
ইনটারনেট – পৃথিবী ও মানুষের মধ্যবর্তী দূরত্ব সংকোচনে বিজ্ঞানের নবতম পরিষেবা ইনটারনেট। অন্যসকল মাধ্যমকে আজ সে এক সূত্রে গ্রথিত করেছে। সময়ের অপচয়রোধে ই-বুক, ই-পেপার, ইউটিউবের পাশাপাশি ফেসবুক হোয়াটস অ্যাপ, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বদান্যতায় পৃথিবী পরিণত হয়েছে ভুবনগ্রামে। বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তের যে-কোনো বার্তা প্রকাশলগ্নেই ছড়িয়ে পড়ছে ইনটারনেট পরিষেবার সহায়তায় শিক্ষাক্ষেত্রে যার ইতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। করোনা পরিস্থিতিতে ইনটারনেটের অবদান অনস্বীকার্য।
উপসংহার – গণমাধ্যম যেমন শিক্ষাবিস্তারে, জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, তেমনি গণমাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে বিপথে চালিত করে। গণমাধ্যমে প্রদর্শিত বা সম্প্রচারিত কুরুচিকর বিজ্ঞাপন শিক্ষায় কুপ্রভাব বিস্তার করে। হিংসাত্মক দৃশ্য প্রভাবিত করে মানবাত্মাকে। তবে এই নেতিবাচক প্রভাব সরিয়ে গণমাধ্যমকে যুগোপযোগী হয়ে উঠতে হবে, সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছড়িয়ে দিতে হবে জনমানসকে। পাঠক্রমকেন্দ্রিক গ্রন্থগত শিক্ষার পরিপূরক রূপে উপস্থাপিত হবে গণমাধ্যমগুলি, তবেই গণমাধ্যমের গণঅভিমুখী মুখ্য উদ্দেশ্য সাধিত হবে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন