অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।
Contents Show

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।

ছাত্র সমাজের সার্বিক তথা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে বাংলায় পর্বে ছাত্র আন্দোলন –

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে বাংলার ছাত্র-সমাজ ছিল সর্বাগ্রগণ্য। স্বরাজের দাবি তুলে কলকাতার সমস্ত স্কুল কলেজে পূর্ণ ধর্মঘট পালিত হয় 1921 খ্রিস্টাব্দের 20 জানুয়ারি। বিভিন্ন দেশাত্মবোধক সঙ্গীত কণ্ঠে নিয়ে প্রায় তিন হাজার ছাত্র ওই দিন শ্রদ্ধানন্দ পার্কে জমায়েত করেন। তারা শপথ গ্রহণ করে যে, স্বরাজ অর্জন না করা পর্যন্ত তারা আর সরকারি শিক্ষাঙ্গনে ফিরবে না। বাংলার অবিসংবাদী নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ এই সভায় উপস্থিত হয়ে ছাত্রদের অভিবাদন জানিয়ে বলেন ‘বাংলার ছাত্রসমাজ, আমি তোমাদের নমস্কার করি।’ 14-18 জানুয়ারি, 1921 খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধু কলকাতার অন্তত পাঁচটি ছাত্রসভায় ভাষন দিয়ে ছাত্রদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ করেন।

গান্ধিজি National College উদ্বোধনের জন্য কলকাতায় এসে ছাত্রদের সক্রিয় ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে ঘোষণা করেন – ‘ছাত্রদের কাছে এর থেকে কিছু কম আশা করিনি … বাংলার ছাত্রসমাজই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে, এবিষয়ে আমার মনে সন্দেহ নেই।’

হাজার হাজার ছাত্র স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিদেশি বস্ত্র ও পানীরের দোকানের সামনে পিকেটিং শুরু করে। 1921 খ্রিস্টাব্দে প্রিন্স অব ওয়েলস্ ভারতে এলে সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে ছাত্ররা যুবরাজের যাত্রাপথের দুপাশে কালো পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখায়। ‘স্বাধীন ভারতের জয়’, ‘যুবরাজ ফিরে যাও’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। কলকাতা ছাড়িয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, মেদিনীপুরে ছাত্র-আন্দোলন সম্প্রসারিত হয়। মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমার মহিষাদলে গুণধর হাজরা, শ্রীপতিচরণ কয়াল, সতীশচন্দ্র সামন্ত প্রমুখের নেতৃত্বে এক জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। তরুণ ছাত্র ধীরেন দাশগুপ্তের উদ্যোগে গঠিত হয় ‘ক্যালকাটা স্টুডেন্টস্ অ্যাসোসিয়েশান’। এর সভাপতি হন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে পর্বে বাংলার বাইরে ছাত্র-আন্দোলন –

বাংলার বাইরে বোম্বে, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িষ্যা, বিহার, আসামেও ছাত্রসমাজ অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করে। বিদেশি শিক্ষালয়ের বিকল্প-রূপে এই পর্বে ‘জামিয়া-মিলিয়া-ইসলামিয়া’, ‘কাশী বিদ্যাপীঠ’, ‘বিহার বিদ্যাপীঠ’, ‘গুজরাট বিদ্যাপীঠ’ প্রমুখ স্বদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষকতার দায়িত্ব নেন আচার্য নরেন্দ্রদেব, জাকির হোসেন, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, লালা লাজপৎ রায়, সুভাষচন্দ্রের মতো মানুষেরা।

লালা লাজপত রায়ের নেতৃত্বে 1920 খ্রিস্টাব্দের 25 ডিসেম্বর নাগপুরে সর্বভারতীয় কলেজ-ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে লাজপৎ রায় একাধারে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করেন এবং ছাত্র, বিশেষত বিদ্যালয় স্তরের ছাত্রদের সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলনের মন্তব্য –

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, বিশ্বের যেকোনো দেশের মুক্তি সংগ্রামে ছাত্রসমাজ বিপ্লবের ধ্বজা বহন করেছে সম্মুখসারিতে। অহিংস অসহযোগ আন্দোলনেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে বাংলার ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী ছিল?

বাংলার ছাত্ররা আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। 20 জানুয়ারি 1921 তারিখে কলকাতার সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পূর্ণ ধর্মঘট ডাকা হয়, হাজারো ছাত্র স্বরাজের দাবিতে শ্রদ্ধানন্দ পার্কে সমবেত হয় এবং সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জনের শপথ নেয়। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও গান্ধিজি তাদের উদ্যোগকে সমর্থন করেন।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্ররা কী ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেয়?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্ররাদের কর্মসূচি –
1. বিদেশি বস্ত্র ও মদের দোকানের সামনে পিকেটিং
2. প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারত সফর (1921 খ্রিস্টাব্দ) বয়কট করে কালো পতাকা প্রদর্শন ও “স্বাধীন ভারতের জয়” স্লোগান দেওয়া।
3. সরকারি স্কুল-কলেজ ছেড়ে স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা (যেমন – কলকাতায় ন্যাশনাল কলেজ, মেদিনীপুরে জাতীয় বিদ্যালয়)।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে গান্ধিজি ও অন্যান্য নেতারা ছাত্রদের ভূমিকা কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

1. গান্ধিজি ছাত্রদের “আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী” বলে অভিহিত করেন এবং বাংলার ছাত্রসমাজের প্রতি তার আস্থা প্রকাশ করেন।
2. দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ছাত্রদের “দেশপ্রেমিক ত্যাগ” -এর জন্য নমস্কার জানান।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য কী?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য –
1. এটি ছিল ভারতের প্রথম জাতীয় স্তরের ছাত্র আন্দোলন যা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সরাসরি যুক্ত।
2. ছাত্ররা সামাজিক-শিক্ষাগত বিকল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে।
3. গান্ধিজির অহিংস নীতির প্রতি ছাত্রসমাজের গণসমর্থন জাতীয় আন্দোলনকে বেগবান করে।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য সংগঠন ও নেতারা কারা ছিলেন?

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য সংগঠন ও নেতারা ছিলেন –
1. কলকাতা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ধীরেন দাশগুপ্ত প্রতিষ্ঠিত, সভাপতি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়)।
2. মেদিনীপুরের নেতৃত্ব – গুণধর হাজরা, শ্রীপতিচরণ কয়াল, সতীশচন্দ্র সামন্ত।
3. শিক্ষক হিসেবে – রাজেন্দ্র প্রসাদ, জাকির হোসেন, নরেন্দ্র দেব, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ স্বদেশি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী সম্পর্কে একটি টীকা লেখো। অথবা, ঝাঁসির রানি ব্রিগেড  সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী বাহিনী সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ‘3R’ -এর ভূমিকা বর্ণনা করো।

বর্তমানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন পর্যালোচনা করো।

গ্যাসীয় বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা কীরূপে করবে? বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে স্ক্রাবার যন্ত্রের ভূমিকা কীরূপ?