জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?

Gopi

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ট অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?
Contents Show

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?

1920 খ্রিস্টাব্দের পর থেকে জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক প্রবনতার প্রসার ঘটতে শুরু করে। ইতিহাসসূত্র পর্যালোচনায় এর পশ্চাতে নিম্নলিখিত কারণগুলিকে দায়ী করা যায়।

কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থার বিকাশের কারণ –

  • রুশ বিপ্লব – 1917 খ্রিস্টাব্দে বলশেভিক দলের প্রচেষ্টায় রুশ বিপ্লবের সাফল্য ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রসার ঘটায়। বিপিনচন্দ্র পাল লিখেছেন – “জারের স্বৈরতন্ত্র ধ্বংস হওয়ার পর সারা পৃথিবীতে এক নতুন শক্তির উদ্ভব হয়েছে, জনগণের শক্তি।”
  • কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেসের অনীহা – বুর্জোয়া নেতৃত্বে পরিচালিত জাতীয় কংগ্রেস কখনোই শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনের মূল ধারার সঙ্গে যুক্ত করতে চায়নি। শ্রমিক-কৃষক সমস্যা ও আন্দোলন নিয়ে গান্ধিজির নীতিও তেমন স্পষ্ট ছিল না। ফলত, শ্রমিক-কৃষকদের প্রতি সহানুভূতিশীল যুবনেতারা সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
  • অর্থনৈতিক মহামন্দার প্রভাব – 1929 খ্রিস্টাব্দের মহামন্দা পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কঙ্কালসার চেহারাটাকে উন্মুক্ত করে দেয়। মানুষের মনে এই বিশ্বাস দৃঢ় প্রথিত হয় যে, সমাজতন্ত্রই অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।
  • সমাজতান্ত্রিক পত্র-পত্রিকার প্রভাব – ইতিহাসের এই পর্বে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, যেমন – ‘সোশ্যালিস্ট’, ‘ইনকিলাব’, ‘গণবাণী’, ‘লাঙল’, ‘লেবার কিষান গেজেট’, ‘কীর্তি’ প্রভৃতি ভারতে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শকে জনপ্রিয় করে তোলে।

কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থার বিকাশের মন্তব্য –

উপরিউক্ত কারণগুলির সম্মিলিত ফলস্বরূপ 1920 -র দশক থেকে জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটতে থাকে। এদের প্রচেষ্টাতেই পরবর্তীকালে ভারতভূমিতে গড়ে ওঠে সক্রিয় বামপন্থী আন্দোলন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

বামপন্থী চিন্তাধারা কী?

বামপন্থী চিন্তাধারা হলো সমাজতান্ত্রিক ও সাম্যবাদী আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দর্শন, যা শ্রমিক-কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা, অর্থনৈতিক সমতা ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে।

জাতীয় কংগ্রেসে বামপন্থার বিকাশ কখন শুরু হয়?

1920 -এর দশক থেকে, বিশেষত রুশ বিপ্লব (1917 খ্রিস্টাব্দ) এবং বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রভাবে।

রুশ বিপ্লবের প্রভাব কী ছিল?

1917 সালের বলশেভিক বিপ্লব পুঁজিবাদবিরোধী চেতনা ও শ্রমিক শ্রেণীর ক্ষমতায়নকে অনুপ্রাণিত করে, যা ভারতীয় যুবনেতাদের মধ্যে সমাজতন্ত্রের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়।

কংগ্রেসের নেতৃত্ব কেন শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনে অনীহা দেখিয়েছিল?

কংগ্রেসের বুর্জোয়া নেতৃত্ব মূলত মধ্যবিত্ত ও শিল্পপতিদের স্বার্থে কাজ করতেন, তাই তারা গণআন্দোলনের চেয়ে সংসদীয় পথকে প্রাধান্য দিতেন।

অর্থনৈতিক মহামন্দা (1929 খ্রিস্টাব্দ) কীভাবে বামপন্থাকে প্রভাবিত করেছিল?

মহামন্দায় পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়, ফলে অনেকেই সমাজতান্ত্রিক বিকল্পের দিকে ঝুঁকে পড়েন।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী প্রচারে কোন পত্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল?

সোশ্যালিস্ট, ইনকিলাব, গণবাণী, লাঙল, কীর্তি ইত্যাদি পত্রিকা সমাজতন্ত্রের আদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছিল।

জাতীয় কংগ্রেসে বামপন্থার বিকাশে গান্ধিজির ভূমিকা কী ছিল?

গান্ধিজির নীতি শ্রমিক-কৃষক সমস্যাকে সরাসরি সমাধানের পরিবর্তে অহিংসা ও ঐক্যের উপর জোর দিত, যা বামপন্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থীদের উল্লেখযোগ্য নেতা কারা ছিলেন?

জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, এম.এন. রায়, এস.এ. ডাঙ্গে প্রমুখ নেতারা কংগ্রেসের ভিতরেই সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শ প্রচার করেছিলেন।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থার বিকাশের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল কী ছিল?

পরবর্তীতে কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি (1934 খ্রিস্টাব্দ) ও স্বাধীন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির মতো সংগঠনের জন্ম হয়, যা বাম আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থীদের মূল লক্ষ্য কী ছিল?

তারা ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদ, সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদের উচ্ছেদ চেয়েছিলেন, যাতে একটি শোষণমুক্ত সমাজ গঠন করা যায়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তেলেঙ্গানা আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে টীকা লেখো।

জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী চিন্তাধারা বিকশিত হয়েছিল কেন?

বামপন্থী আন্দোলনের বিকাশে মানবেন্দ্রনাথ রায় কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিলেন?

অধঃক্ষেপণ কাকে বলে? অধঃক্ষেপণের রূপভেদ গুলি আলোচনা করো।