আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জীবনচরিতপাঠের প্রয়োজনীয়তা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি — যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে!

জীবনচরিতপাঠের প্রয়োজনীয়তা
“যাঁহাদের নাম স্মরণ আমাদের সমস্ত দিনের বিচিত্র মঙ্গল চেষ্টার উপযুক্ত উপক্রমণিকা বলিয়া গণ্য হইতে পারে তাঁহারাই আমাদের প্রাতঃস্মরণীয়।”
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ভূমিকা – দেশে দেশে, কালে কালে কত-না মানুষের বিচিত্র ধারা; সংসারজীবনে প্রতিদিনের ক্ষুদ্রতা-তুচ্ছতার কত মালিন্য; ছলচাতুরী, নিষ্ঠুরতার কত নিদর্শন; ঈর্ষা, লোভ, প্রবৃত্তির কত-না চোরাস্রোত; দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার আর ক্ষণসুখের কত-না উল্লাস। এমনই একান্ত ব্যক্তিগত জীবনযাপনের গ্লানি নিয়ে উপেক্ষায় ও অনাদরে আমরা অলক্ষে ঝরে যাই। কেউ আমাদের কথা মনে রাখে না। অসাধারণত্বের মহিমা নেই আমাদের। আমরা তাই দুঃখে কখনো দিশাহারা, কখনো সুখে উদবেল, আবার কখনো-বা স্বার্থপরতায় অত্যুৎসাহী হয়ে উঠি। এরই মধ্যে কখনো-কখনো জন্ম নেন এক-একজন অসাধারণ, ক্ষণজন্মা মানুষ। তাঁরা অপরাজেয় পৌরুষের অধিকারী, মনুষ্যত্বের সাধক, হৃদয়-ঐশ্বর্যে মহীয়ান। তাঁরা আমাদের শুভ চেতনার প্রতীক, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নতুন দিশা। তাঁরা যুগে যুগে স্মরণীয় তথা বন্দিত মহাপুরুষ। তাঁদের উদ্দেশে আমরা নিবেদন করি ভক্তির অর্ঘ্য। তাঁদের মহৎ জীবনকথা স্মরণ করে আমরা সংগ্রহ করি চলার পাথেয়। হতাশার মধ্যে খুঁজে পাই আশার আলো, শোকের মধ্যে পাই সান্ত্বনা। তাই মহাপুরুষদের জীবনচরিতপাঠ আমাদের জীবনের সঠিক উদ্যাপনের জন্যই আবশ্যিক।
জীবনচরিতপাঠের প্রয়োজনীয়তা – মহাপুরুষদের জীবনচরিতপাঠ আমাদের জন্য এক হিতকর অভ্যাস। “মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়” – আমরা সেই পথটিকে অবলোকন করে আমাদের চিরাচরিত প্রাত্যহিকতার মধ্যেও উজ্জীবিত হই। একটা জাতিকে চিনতে বা জানতে হলে সেই জাতির শ্রেষ্ঠ মনীষীদের জীবনচরিত পাঠ করা উচিত। তাতে ইতিহাসের ধারা ও গতিপ্রকৃতি স্পষ্ট হয়। এ ছাড়া জীবনীগ্রন্থ পাঠ করলে মানুষের চারিত্রিক দৃঢ়তা বাড়ে, মানুষ সংকটে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়। আলোকস্তম্ভ যেমন নাবিককে পথ দেখায়, জীবনীগ্রন্থ তেমনি পথ হারানো পথিককে পথের সন্ধান দেয়। সমস্ত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীদের আদর্শ, চেতনা, জীবনবোধের পরিচয় বহন করে তাঁদের জীবনচরিত, যা পাঠ করে আমরা দীক্ষিত হই মানবিকতার মন্ত্রে।
জীবনচরিত নির্বাচন – “জীবনী যাহার যেমনই হোক, যে লোক কিছু একটা করিতে পারে তাহারই জীবনচরিত।” সুতরাং, জীবনচরিতের অভাব নেই। চলচ্চিত্রকারের জীবনচরিত, অভিনেতার জীবনচরিত, নৃত্যশিল্পীর জীবনচরিত, কণ্ঠশিল্পীর জীবনচরিত, আবার দেশপ্রেমিকের জীবনচরিত অথবা সাহিত্যশিল্পীর জীবনচরিত। এক্ষেত্রে তাই সেই জীবনচরিত নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শতসহস্র জীবনীগ্রন্থের মধ্য থেকে খুঁজে নিতে হবে সেই পরম বাঞ্ছিত জীবনকে। যে জীবনচরিত আমাদের কর্মপ্রেরণা জোগায়, যাঁদের জীবন স্মরণ করলে আমাদের জীবন মহত্ত্বের পথে আকৃষ্ট হয়, সেই জীবনচরিতই আমাদের অবশ্যপাঠ্য।
উপসংহার – বর্তমান কালের পৃথিবী ক্ষুদ্রতা, তুচ্ছতা, স্বার্থপরতার পাঁকে ডুবে গেছে। সেখানে জীবনীগ্রন্থের সৌরভে মনুষ্যত্ব চির স্থায়িত্ব লাভ করে ও এই মনুষ্যত্বই শেষ পর্যন্ত সমুদ্রযাত্রায় দিগ্দর্শন যন্ত্রের মতো – আমাদের পথ দেখায়। আমরা সংসার সমুদ্রের দিকনিরূপণ করতে সমর্থ হই। মহাপুরুষের প্রতিমূর্তি ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে তাতে ফুল, মালা দিয়ে সাজিয়ে কিংবা পুজো করে হয়তো অন্তরে শক্তি পাওয়া যায়, কিন্তু তার চেয়েও বেশি কাজের হয় সেই মহৎ জীবনের আদর্শ নিজের জীবনে সঞ্চারিত করা। এতেই হবে জীবনচরিতপাঠের সার্থকতা।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘জীবনচরিতপাঠের প্রয়োজনীয়তা‘ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি অচল পয়সার আত্মকথা‘ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।





মন্তব্য করুন