কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়? অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়? অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয় অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়

কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়?

অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তি করণের প্রশ্নে কাশ্মীর সমস্যা ছিল সর্বাধিক জটিল। ভারতের উত্তর সীমায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যের শাসক হিন্দু হলেও প্রজাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম ধর্মাবলম্বী।

মহারাজের অনড় মনোভাব –

ভারতের স্বাধীনতার প্রাক্কালে গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন কাশ্মীরের তৎকালীন মহারাজা হরি সিং-কে ভারত বা পাকিস্তান যেকোন একটি ডোমিনিয়ানে যোগদানের পরামর্শ দেন। কিন্তু মহারাজা স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কাশ্মীরের পক্ষে ছিলেন।

পাক্ আক্রমন –

1947 খ্রিস্টাব্দের 22 অক্টোবর পাক্ মদতপুষ্ট হানাদার বাহিনী কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে ব্যাপক হত্যা, লুণ্ঠন ও নারী নির্যাতন চালাতে থাকে এবং অচিরেই রাজধানী শ্রীনগরের উপকণ্ঠে এসে হাজির হয়। এমতাবস্থায় ভীত-সন্ত্রস্ত হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন।

কাশ্মীরের ভারতভুক্তি –

1947 খ্রিস্টাব্দের 26 অক্টোবর মহারাজা হরি সিং একপ্রকার বাধ্য হয়েই ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন। কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।

ভারতের প্রত্যাঘাত –

27 অক্টোবর (1947 খ্রিস্টাব্দ) প্রায় 100টি বিমানে ভারতীয় সেনাবাহিনী শ্রীনগরে অবতরন করে এবং অতি দ্রুততার সাথে পাক্ হানাদারদের বিতাড়িত করে কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে। দখলমুক্ত অঞ্চলে কাশ্মীরের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স -এর নেতা শেখ আবদুল্লার নেতৃত্বে একটি আপৎকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপ –

গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের পরামর্শে স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু 1948 খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর সমস্যাটি উত্থাপন করে প্রতিকার প্রার্থনা করেন। প্রত্যুত্তরে জাতিপুঞ্জ UNCIP (United Nations Commission on India and Pakistan) নামে একটি কমিশন নিয়োগ করে। এই কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘটে এবং যুদ্ধবিরতি সীমারেখাও নির্ধারিত হয়ে যায়। সীমারেখার অপর পারে ‘আজাদ কাশ্মীর’ নামে পাক্ মদতপুষ্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

মন্তব্য –

কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা আজও অত্যন্ত হতাশাজনক রূপেই থেকে গেছে। আজও ভারত-পাক্ বিবাদের মূল সূত্র কাশ্মীর।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

কাশ্মীর সমস্যার সূত্রপাত কীভাবে হয়?

ভারতের স্বাধীনতার সময় কাশ্মীর ছিল একটি স্বাধীন দেশীয় রাজ্য (Princely State), যার শাসক ছিলেন হিন্দু মহারাজা হরি সিং, কিন্তু অধিকাংশ জনগণ ছিলেন মুসলিম। মহারাজা প্রথমে স্বাধীন থাকতে চাইলেও পাকিস্তান-সমর্থিত উপজাতি হামলার মুখে তিনি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হন (1947 সালে), যা থেকে কাশ্মীর সমস্যার সূত্রপাত হয়।

কাশ্মীর কীভাবে ভারতভুক্ত হয়?

1947 সালের 22 অক্টোবর পাকিস্তান-সমর্থিত সেনারা কাশ্মীরে আক্রমণ করলে মহারাজা হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্য চান। 26 অক্টোবর তিনি “ইন্সট্রুমেন্ট অফ অ্যাকসেশন”-এ স্বাক্ষর করে কাশ্মীরকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর ভারতীয় সেনা কাশ্মীরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি আক্রমণকারীদের বিতাড়িত করে।

পাকিস্তান কেন কাশ্মীর দখল করতে চেয়েছিল?

কাশ্মীরের বেশিরভাগ জনগণ মুসলিম হওয়ায় পাকিস্তান দাবি করেছিল যে এটি তাদের অংশ হওয়া উচিত। তারা সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে কাশ্মীর দখলের চেষ্টা করে, যা আজও চলছে।

জাতিসংঘের ভূমিকা কী ছিল?

1948 সালে ভারত জাতিসংঘে কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করে। জাতিসংঘ UNCIP (United Nations Commission for India and Pakistan) গঠন করে এবং যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। কিন্তু কাশ্মীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।

আজাদ কাশ্মীর কী?

1947-1948 সালের যুদ্ধের পর কাশ্মীর দুই ভাগে বিভক্ত হয় –
1. ভারত – administered জম্মু ও কাশ্মীর (বর্তমানে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল),
2. পাকিস্তান – administered “আজাদ কাশ্মীর” ও গিলগিট-বাল্টিস্তান।

কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধ কখন হয়েছিল?

1. 1947-1948 সালে (প্রথম যুদ্ধ, যার ফলাফল আজকের বিভাজন),
2. 1965 সালে (দ্বিতীয় যুদ্ধ, UN-mediated যুদ্ধবিরতি),
3. 1971 সালে (বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘর্ষ),
4. 1999 সালে (কার্গিল যুদ্ধ)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়? অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “কীভাবে কাশ্মীর সমস্যার সৃষ্টি হয়? অথবা কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের অষ্টম অধ্যায় “উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (1947-1964)” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলপ্রসূ হয়েছিল?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় কীভাবে দেশভাগের স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় কীভাবে দেশভাগের স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে?

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির ব্যাপারে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো।

কাশ্মীর কিভাবে ভারতভুক্ত হয়?

নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তি (1950 খ্রিস্টাব্দ) উদ্‌বাস্তু সমস্যার সমাধানে কতদূর ফলদায়ক হয়েছিল?

আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথায় কীভাবে দেশভাগের স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে?

উদ্‌বাস্তু সমস্যার স্বরূপ নিয়ে ভারতের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।