এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?
সশস্ত্র বিপ্লববাদের ইতিহাসে বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’ মাস্টারদা’র শিষ্যা বীরাঙ্গনা কল্পনা দত্ত এক স্মরণীয় নাম।
কল্পনা দত্তের বিপ্লবী দলে যোগদান –
কলকাতার বেথুন কলেজে তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সহপাঠী ছিলেন। প্রীতিলতার মতই তিনি ‘দীপালি ছাত্রী সংঘে’ যোগ দেন এবং গুপ্ত বিপ্লবী কার্য-কলাপে অংশ নেন।
কল্পনা দত্তের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মিতে যোগদান –
চট্টগ্রামে ফিরে তিনি মাস্টারদা’র ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’তে যোগদান করেন। মাস্টারদা’র সহকর্মীরূপে তিনি বেশ কিছু বিপ্লবী পরিকল্পনা রচনার সাক্ষী ছিলেন।
কল্পনা দত্তের চট্টগ্রাম ডিনামাইট ষড়যন্ত্র –
কল্পনার নেতৃত্বে ডিনামাইট দিয়ে চট্টগ্রামের আদালত উড়িয়ে দেওয়ার গোপন পরিকল্পনা রচিত হলেও শেষপর্যন্ত এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। প্রমাণাভাবে তিনি মুক্তি পান। পুলিশের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও তিনি দলের সঙ্গে গোপনে সংযোগ রক্ষা করে যান।
কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ পরিকল্পনা –
চট্টগ্রাম শহরের উত্তর দিকে পাহাড়তলি স্টেশনের কাছে অবস্থিত ইউরোপীয়ান ক্লাবটি ছিল ব্রিটিশের প্রমোদকেন্দ্র। এই ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের জন্য মাস্টারদা কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু নির্দিষ্ট দিনের এক সপ্তাহ আগে কল্পনা সেখানে পুরুষের ছদ্মবেশে রেইকি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। জেলে বসেই তিনি ক্লাব আক্রমণ ও প্রীতিলতার আত্মাহুতির কথা শোনেন।
কল্পনা দত্তের জামিনে মুক্তি ও পুনরায় গ্রেপ্তার –
জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি মাস্টারদা’র নির্দেশে আত্মগোপন করেন। 1933 খ্রিস্টাব্দের 17 ফেব্রুয়ারি মাস্টারদা’র গুপ্ত আবাসস্থলে পুলিশ হানা দিলে মাস্টারদা ধরা পড়েন, তবে কল্পনা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। যদিও অচিরেই তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
কল্পনা দত্তের পরবর্তী জীবন –
1939 খ্রিস্টাব্দে কারামুক্তির পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগদান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কমিউনিস্ট নেতা পি. সি. যোশী-কে বিবাহ করেন।
কল্পনা দত্তের মন্তব্য –
বীরাঙ্গনা কল্পনার সংগ্রাম মুখর জীবন, তাঁর ত্যাগ, তিতিক্ষা এবং মাতৃভূমির স্বাধীনতাযজ্ঞে সর্বস্ব সমর্পণের আদর্শ ভারত ইতিহাসে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
কল্পনা দত্ত কে ছিলেন?
কল্পনা দত্ত ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক বীর বিপ্লবী নারী, যিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন ও অন্যান্য সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কল্পনা দত্তের বিপ্লবী জীবনের সূচনা কীভাবে হয়?
কলকাতার বেথুন কলেজে পড়ার সময় তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের সহপাঠী ছিলেন এবং ‘দীপালি ছাত্রী সংঘে’ যোগ দিয়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
কল্পনা দত্ত কীভাবে ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মিতে যোগ দেন?
চট্টগ্রামে ফিরে তিনি মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’ (IRA)-তে যোগ দেন এবং বিভিন্ন বিপ্লবী পরিকল্পনায় অংশ নেন।
চট্টগ্রাম ডিনামাইট ষড়যন্ত্র কী ছিল?
কল্পনা দত্তের নেতৃত্বে ডিনামাইট দিয়ে চট্টগ্রামের আদালত ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু এটি ফাঁস হয়ে যায়। তবে প্রমাণের অভাবে তিনি মুক্তি পান।
পাহাড়তলি ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে কল্পনা দত্তের ভূমিকা কী ছিল?
মাস্টারদা সূর্য সেন কল্পনা দত্ত ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। কিন্তু কল্পনা পুরুষের ছদ্মবেশে রেকি করতে গিয়ে ধরা পড়েন এবং জেলে থাকা অবস্থায় প্রীতিলতার আত্মাহুতির খবর শোনেন।
কল্পনা দত্ত কীভাবে গ্রেপ্তার হন?
1933 সালের 17 ফেব্রুয়ারি মাস্টারদা সূর্য সেনের গোপন আস্তানায় পুলিশ হানা দিলে তিনি ধরা পড়েন, কিন্তু কল্পনা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
জেল থেকে মুক্তির পর কল্পনা দত্ত কী করেন?
1939 সালে কারামুক্তির পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন এবং ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। তিনি কমিউনিস্ট নেতা পি. সি. যোশীকে বিবাহ করেন।
কল্পনা দত্ত কেন স্মরণীয়?
তাঁর অসীম সাহস, দেশপ্রেম ও বিপ্লবী আদর্শ তাকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
কল্পনা দত্তের মৃত্যু কবে হয়?
কল্পনা দত্ত 1995 সালের 8 ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায় “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন