এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লাইকার অ্যামোনিয়া ও তরল অ্যামোনিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী? তরল অ্যামোনিয়াকে হিমায়করূপে ব্যবহারের কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

লাইকার অ্যামোনিয়া ও তরল অ্যামোনিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?
লাইকার অ্যামোনিয়া ও তরল অ্যামোনিয়ার মধ্যে পার্থক্য –
- অ্যামোনিয়ার গাঢ় জলীয় দ্রবণকে লাইকার অ্যামোনিয়া বলে কিন্তু অ্যামোনিয়াকে ঠান্ডা করে চাপ প্রয়োগ করলে বর্ণহীন তরল অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়।
- লাইকার অ্যামোনিয়া ক্ষারধর্মী কিন্তু তরল অ্যামোনিয়া ক্ষারধর্মী নয়।
তরল অ্যামোনিয়াকে হিমায়করূপে ব্যবহারের কারণ কী?
তরল অ্যামোনিয়ার বাষ্পীভবনের লীন তাপের মান খুব বেশি হওয়ায় এটি পরিবেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ গ্রহণ করে বাষ্পীভূত হয়। এই কারণে তরল অ্যামোনিয়াকে রেফ্রিজারেটরের কোল্ড স্টোরেজ বা বরফ কারখানায় হিমায়করূপে ব্যবহার করা হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
তরল অ্যামোনিয়াকে হিমায়ক (রেফ্রিজারেন্ট) হিসেবে ব্যবহারের কারণ কী?
তরল অ্যামোনিয়ার বাষ্পীভবনের অপ্রকট তাপ খুব বেশি। এর মানে হলো, এটি তরল অবস্থা থেকে বাষ্পে পরিণত হওয়ার সময় পরিবেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তাপ শোষণ করে নেয়। এই শীতলীকরণ প্রভাবের জন্য এটিকে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার এবং বরফ কারখানায় হিমায়ক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
কোনটি বেশি বিপজ্জনক, লাইকার অ্যামোনিয়া নাকি তরল অ্যামোনিয়া?
উভয়ই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হয়, তবে তরল অ্যামোনিয়া সাধারণত বেশি বিপজ্জনক কারণ –
1. এটি উচ্চ চাপে সংরক্ষণ করতে হয়।
2. এর স্ফুটনাঙ্ক খুব কম, তাই এটি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে প্রচুর অ্যামোনিয়া গ্যাস তৈরি করতে পারে, যা শ্বাসনালীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং চোখে জ্বালা সৃষ্টি করে।
3. লাইকার অ্যামোনিয়া তুলনামূলকভাবে কম চাপে রাখা যায়, তবে এটিও ক্ষয়কারক এবং এর বাষ্প ক্ষতিকর।
লাইকার অ্যামোনিয়া ক্ষারকীয় হলেও তরল অ্যামোনিয়া কেন ক্ষারকীয় নয়?
লাইকার অ্যামোনিয়া জলের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যামোনিয়াম আয়ন (NH₄⁺) ও হাইড্রোক্সাইড আয়ন (OH⁻) তৈরি করে, যা ক্ষারকীয়তার কারণ।NH₃ + H₂O ⇌ NH₄⁺ + OH⁻
তরল অ্যামোনিয়াতে পানি থাকে না, তাই এই বিক্রিয়াটি ঘটে না। ফলে এটি ক্ষারকীয় ধর্ম প্রদর্শন করে না।
তরল অ্যামোনিয়াকে হিমায়ক হিসেবে ব্যবহার করা নিরাপদ কি?
তরল অ্যামোনিয়া একটি দক্ষ হিমায়ক হলেও এটি বিষাক্ত এবং জ্বলনশীল। তাই এটির ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, বরফ কারখানা বা বাণিজ্যিক রেফ্রিজারেশন প্ল্যান্টে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এটি ব্যবহার করা হয়। আধুনিক গৃহস্থালি রেফ্রিজারেটরে সাধারণত কম বিপজ্জনক হিমায়ক (যেমন – CFC, HCFC, HFC) ব্যবহার করা হয়।
লাইকার অ্যামোনিয়ার প্রধান ব্যবহারগুলো কী কী?
লাইকার অ্যামোনিয়ার ব্যবহার প্রধানত তার ক্ষারকীয় ধর্মের জন্য।
1. পরীক্ষাগারে দুর্বল ক্ষারক হিসেবে।
2. গৃহস্থালি ক্লিনজার হিসেবে (যেমন – কাঁচ, মেঝে পরিষ্কারে)।
3. রঞ্জকদ্রব্য ও ওষুধ শিল্পে।
4. সার উৎপাদনের একটি কাঁচামাল হিসেবে।
তরল অ্যামোনিয়ার বাষ্পীভবনের গোপন তাপ (latent heat) বেশি বলতে কী বোঝায়?
এর মানে হলো, তরল অ্যামোনিয়া বাষ্পে পরিণত হওয়ার সময় প্রতি একক ভরের জন্য প্রচুর পরিমাণ তাপ শোষণ করে নেয়। যখন এটি রেফ্রিজারেটরের বাষ্পীভবন কুণ্ডলীর (evaporator coil) মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এটি পরিবেশ বা রেফ্রিজারেটরের অভ্যন্তরের বাতাস থেকে তাপ শোষণ করে। ফলে চারপাশের তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পায় এবং শীতলীকরণ ঘটে।
লাইকার অ্যামোনিয়া থেকে কীভাবে তরল অ্যামোনিয়া পাওয়া যায়?
লাইকার অ্যামোনিয়া থেকে সরাসরি তরল অ্যামোনিয়া পাওয়া যায় না। প্রথমে লাইকার অ্যামোনিয়াকে গরম করে বা কোনো ক্ষার যোগ করে অ্যামোনিয়া গ্যাস (NH₃) নির্গত করা হয়। এরপর সেই বিশুদ্ধ অ্যামোনিয়া গ্যাসকে সংকুচিত (compress) ও ঠান্ডা (cool) করে তরল অ্যামোনিয়ায় রূপান্তর করা হয়।
কোনটির বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা বেশি – লাইকার অ্যামোনিয়া নাকি তরল অ্যামোনিয়া?
লাইকার অ্যামোনিয়ার বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা বেশি। কারণ এটি জলে দ্রবীভূত হয়ে NH₄⁺ ও OH⁻ আয়ন উৎপন্ন করে, যা বিদ্যুৎ পরিবহন করতে সক্ষম। বিপরীতে, বিশুদ্ধ তরল অ্যামোনিয়া নিজে কোনো আয়নে বিভক্ত হয় না, তাই এটি বিদ্যুতের কুপরিবাহী।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “লাইকার অ্যামোনিয়া ও তরল অ্যামোনিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী? তরল অ্যামোনিয়াকে হিমায়করূপে ব্যবহারের কারণ কী?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন